কিমকে গালি দিয়ে দেয়াল লিখন, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি!

পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় পিছপা না হলেও উত্তর কোরিয়ার জনগণের ঘরে কোনোমতে একবেলা খাওয়ার মতো খাদ্য পৌঁছাতে পারছেন না কিম জং উন। দ্রব্যমূল্য সেখানে সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এর ফলে দারিদ্র্যপীড়িত উত্তর কোরিয়ার জনগণের চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে শুরু করেছে। নিউজি টুডে।

দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনকে নিয়ে সম্প্রতি একটি আপত্তিকর ‘দেয়াল লিখন’ ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে

দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনকে নিয়ে সম্প্রতি একটি আপত্তিকর ‘দেয়াল লিখন’ ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে লেখা ছিল কিম জং উন, বেজন্মা। লোকজন তোর জন্য না খেয়ে মারা যাচ্ছে।’ বলা হচ্ছে, কিম-এর ৩৮তম জন্মদিনের (৮ ডিসেম্বর) আগে এ দুঃসাহসী শব্দচয়নে এ দেয়াল লিখন দীর্ঘদিনের জমাট ক্ষোভের ফল। ক্ষুধাপীড়িত মানুষের ধৈর্যের বাঁধভাঙা প্রতিবাদ।

এ ঘটনায় দেশটির পিয়ংইয়ংয়ের হাজার হাজার বাসিন্দার হাতের লেখা পরীক্ষা করতে শুরু করেছে পুলিশ। রীতিমতো জরুরি বৈঠকে বসেছে উত্তর কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির কর্মকর্তারা।

গত ২২ ডিসেম্বর পিয়ংচন জেলার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের দেয়ালে কিম জং উনকে ওই সম্বোধন করে গ্রাফিতি আঁকা হয়। পরিণতি বুঝতে পেরেই হয়তো গ্রাফিতিটি আঁকার অল্প কিছুক্ষণ পরই তা মুছে ফেলা হয়। এটি কে এঁকেছে, তা জানার জন্য অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তারা ওই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের আশপাশের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের হাতের লেখার নমুনা চাইছেন। জানতে চাইছেন, গ্রাফিতি আঁকার দিন স্থানীয়রা কে কোথায় ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, শহরজুড়ে বসানো কয়েক হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে অপরাধের হোতাকে শনাক্ত করার চেষ্টা করবে পুলিশ।

কিম বা তার শাসনের সমালোচনা দেশটিতে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যারা তার বিরুদ্ধে ভিন্নমত পোষণ করে তাদের জোরপূর্বক শ্রমশিবিরে দীর্ঘ সাজার সম্মুখীন হতে হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে, বিদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হতে পারে। ২০১৮ সালের মার্চে পিয়ংইয়ংয়ের হাউজ অব কালচারে একটি স্লোগান লেখার অপরাধে একজন কর্নেলকে সে বছরের ২৪ এপ্রিল প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সেদিন ছিল কিমের দাদা কিম ইল সুংয়ের জন্মদিন।

টোকিওর ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কিম রাজবংশের ওপর বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখক তোশিমিতসু শিগেমুরা বলেন, পিয়ংইয়ংয়ের দেয়ালে এমন একটি বার্তা প্রকাশ কর্তৃপক্ষকে হতবাক করবেই। আমি মনে করি সাধারণ মানুষ যারা গ্রাফিতিটি দেখেছে তারা এটির সঙ্গে একমত হবে, কিন্তু কিছু বলতে পারবে না।

সাম্প্রতিক বন্যা এবং কোভিড মহামারিজনিত কারণে চীনের সঙ্গে উত্তর সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় একটি গুরুতর সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ছে দেশটি। উপরন্তু কিম-এর জন্মদিন উপলক্ষে উৎসবকে কেন্দ্র করে জনগণের কাছ থেকে চাঁদা আদায় চাপা ক্ষোভের আগুনে অক্সিজেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।