দুই ইস্যুতে রাশিয়াকে মারাত্মক পরিণতির হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

গণবিক্ষোভে অচল হয়ে পড়া কাজাখস্তানের প্রধান শহরগুলোতে টহল দিচ্ছে রাশিয়ার সেনারা, অভিযান চালাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রথম ধাপে আড়াই হাজার সেনা পাঠিয়েছে মস্কো। এমতাবস্থায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়া হয় গতকাল শুক্রবার।

কাজাখস্তানে রাশিয়ার সেনা ও অ্যান্টনি ব্লিনকেন, ফাইল ছবি

এ নিয়ে গতকাল মুখ খুলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। কাজাখ অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে রুশ সেনা মোতায়েন করা হলো কেন, তা পরিষ্কার নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে, কারো ঘরে রাশিয়া একবার ঢুকে পড়লে তাদের বের করে দেওয়া কঠিন।

আজ শনিবার বিবিসি জানায়, আন্দোলনকারীদের অধিকারের প্রতি সম্মান রেখেই আইনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারে কাজাখ কর্তৃপক্ষ। সেখানে বাইরের সহায়তা নেয়ার বিষয়টি পরিষ্কার হতে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন, বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

খবরে বলা হয়, এলপিজির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত রোববার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে কাজাখস্তানের বৃহত্তম শহর আলমাতির বহু স্থাপনা ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে। সহিংসতার জন্য ঘর থেকে বেরুতে পারছে না সাধারণ মানুষ। সেখানে বিক্ষোভ দমনে রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

শহরটিতে দেশি-বিদেশি প্রায় ২০ হাজার ‘দস্যু বা সন্ত্রাসী’ হামলা চালিয়েছে উল্লেখ করে তাদের যেকোনো মূল্যে দমনের ঘোষণা দিয়েছেন কাজাখ প্রেসিডেন্ট। গতকাল টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে তিনি আরো জানান, সন্ত্রাসীদের সতর্কবার্তা ছাড়াই নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতরা আত্মসমর্পণ না করলে নির্মূল করার হুমকিও দেয়া হয়।

সহিংস বিক্ষোভকারীদের ‘সন্ত্রাস’ আখ্যা দেয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির বিরোধী দলগুলো। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। কিন্তু সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে কাজাখ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, খুনি ও অপরাধীদের সঙ্গে আলোচনা নয়, দেশি-বিদেশি সশস্ত্র অপরাধীদের মোকাবেলা করা হচ্ছে। এরা সন্ত্রাসী, তাদের আমরা ধ্বংস করব। এটা খুব শিগগিরই হবে।

চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ২৬ বিক্ষোভকারী ও ১৮ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে, আটক হয়েছে ৩ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী। সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৩৫৩ পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আহত হয়েছেন। সহিংসতা বন্ধ করার জন্য কাজাখ সরকার বৃহস্পতিবার জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ওপর ১৮০ দিনের স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

এর আগে গত বুধবার যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি ‘কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন’র (সিএসটিও) সহযোগিতা চান রুশপন্থী কাজাখ প্রেসিডেন্ট। রাশিয়া, আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তান নিয়ে গঠিত সামরিক জোট তৎক্ষণাৎ সেনা পাঠানোর বিষয়টি অনুমোদন করে। বৃহস্পতিবারই রাজধানী আলমাতায় পৌঁছায় রাশিয়ার সেনারা।

অন্যদিকে, কাজাখস্তান সরকারকে জনগণের প্রতি সংযম রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে ইইউ। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানিয়েছে, একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রয়োজন। জবাবে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাকে বাইরে থেকে নিরাপত্তা ও অখণ্ডতাকে ক্ষুণ্ন করার একটি অপচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করি।

ইউক্রেন ও রাশিয়ার মানচিত্র

এদিকে, ইউক্রেনে কোনো ধরনের সামরিক আগ্রাসন চালালে রাশিয়াকে মারাত্মক পরিণতি বরণ করতে হবে বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মস্কো দেশটিতে সামরিক আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে যে খবর বেরিয়েছে, তা নাকচ করার পরেও এ হুমকি দেন তিনি।

এ নিয়ে আগামী সপ্তাহে ইউরোপে মার্কিন ও রুশ কূটনীতিকদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আগামী বুধবার ন্যাটো ও রুশ কাউন্সিলের বৈঠক হতে পারে বলে খবর বেরিয়েছে। তার আগে গতকাল ব্লিংকেন বলেন, মস্কো ইউক্রেনে ফের আগ্রাসন চালালে শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করবে ওয়াশিংটন।

ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলা অচলাবস্থায় ‘পিছু হটার সুযোগ নেই’ বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পশ্চিমারা ‘আক্রমণাত্মক অবস্থান’ থেকে সরে না এলে মস্কো কঠোর সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময়কালে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে পুতিন আরো বলেন, আমাদের আর পিছু হটতে হবে না, এটা তাদের বোঝা উচিত। মস্কো অলসভাবে দেখে যাবে, সেটা মনে করার কোনো কারণ নেই। পশ্চিমা সহকর্মীরা আক্রমণাত্মক অবস্থানে থাকলে পর্যাপ্ত সামরিক ও প্রযুক্তিগত প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। বন্ধুত্বহীন উদ্যোগে আরো কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে।

ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে আসছে, সীমান্তে হাজার হাজার রুশ সেনা ইউক্রেনে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা ত্রিমুখী হামলা চালাতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এ নিয়ে মস্কোকে কড়া ভাষায় সতর্কও করে আসছে ওয়াশিংটন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রাশিয়া বলছে, তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়িয়েছে।