প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, শিক্ষামন্ত্রীকেই সিলেটে ডাকলেন শিক্ষার্থীরা
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন উপাচার্য, ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাবির শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার বিকালে তাদের একটি প্রতিনিধিদলকে আলোচনার জন্য ঢাকায় ডেকেছিলেন মন্ত্রী, তা নাকচ করে তাকে সিলেটে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আমরণ অনশনে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা, ইনসেটে শিক্ষামন্ত্রীর ফাইল ছবি
এদিন রাতে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আমরণ অনশনে থাকায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এরইমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শারীরিক অবস্থার অবনতির দিকে কয়েকজনের, ৪ জনকে নেবুলাইজার দেওয়া হয়েছে। তাদের এভাবে রেখে প্রতিনিধিদল ঢাকা যেতে পারে না।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনার বিষয়টি দেখভাল করছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি আজ সন্ধ্যায় জানান, মন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় যেতে পারে, অনলাইনে এখান থেকেও যুক্ত হতে পারে অন্যরা।
বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী আলোচনা করেছেন জানিয়ে নাদেল আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী সমস্যাটি দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দিলেও পরিবারিক কারণে শিক্ষামন্ত্রীর আসতে হলে এক-দুই দিন সময় লেগে যাবে। এতে অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে পারে।
এর জবাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রী আসতে না পারলে ভার্চ্যুয়ালি আলোচনা করতে পারেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে শাহরিয়ার আবেদীন জানান, অনশনের ৫৫ ঘণ্টায় এখন পর্যন্ত একফোঁটা পানিও পান করেননি তারা। এখানকার শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই, কিন্তু এ অবস্থায় তারা ঢাকায় যেতে পারে না।
শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব শিক্ষার্থীদের
এর আগে আজ দুপুরে অনশনস্থলে গিয়ে নাদেলসহ আওয়ামী লীগের সিলেটের নেতারা শিক্ষার্থী ও ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার কথা এবং তাতে শিক্ষার্থীদের সম্মতির কথা জানান তিনি।
পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে তাদের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় যাবে। ভিসির পদত্যাগের দাবি নিয়ে কথা বলবেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে আন্দোলন অব্যাহত রাখার বিষয়টিও তুলে ধরবেন।
এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সফল না হলে অর্থাৎ দাবি পূরণ না হলে অনশন ও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে মন্ত্রী দাবি মেনে নিলে এ থেকে সরে আসার কথাও বলেন তারা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও প্রশাসনের সঙ্গে সংঘর্ষ, ফাইল ছবি
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ ৩ দফা দাবিতে গত ১৩ জানুয়ারি আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই ১৬ জানুয়ারি ভিসিকে অবরুদ্ধ করার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়, তাতে কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে এবং পরদিন দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়।
তবে এসবের প্রতিবাদে গত রোববার দিবাগত রাত থেকেই উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তারই ধারাবাহিকতায় হল ত্যাগ না করে ভিসির পদত্যাগ, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য ভিসির প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে আন্দোলন করতে থাকেন তারা।
গত ১৭ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভিসির কার্যালয় এবং প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা দেন। একই দিন দুপুরে ভিসিকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে এবং হল বা ক্যাম্পাস ছেড়ে কোনো শিক্ষার্থী যাবে না বলেও উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, অনশনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তত ১১ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে। অনশনে বসার ৫০ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও অনশন ভাঙেননি কোনো শিক্ষার্থী। ফলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অসুস্থ হয়ে পড়া ১১ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর