৪ ঘণ্টা পেছাল সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা

দেশের বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণার সময় ৪ ঘণ্টা পেছানো হয়েছে। দুপুর ২টায় এ রায় ঘোষণা করা হবে বলে আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগের ঘোষণা অনুযায়ী আজ সোমবার, ৩১ জানুয়ারি, সকাল সাড়ে ১০টায় রায় ঘোষণার কথা ছিল।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান

সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ফরিদুল আলম টিপু। আদালতের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দুপুর ২টায় রায় ঘোষণা করা হবে। এর আগে পিপি ফরিদুল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় রায় ঘোষণা করা হতে পারে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল রায় ঘোষণা করবেন। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি উভয়পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষে আদালত রায় ঘোষণার জন্য ৩১ জানুয়ারি, আজ, দিন নির্ধারণ করেন।

এদিকে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিষয়টি জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বহুল আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রায়কে কেন্দ্র করে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে না পারে সেজন্য আদালত প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষ প্রত্যাশা করছে, রায়ে টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ওসি, প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ফরিদুল আলম রোববার বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মামলায় আমরা ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। সোমবার, আজ, এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। আমাদের প্রত্যাশা, রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে।

অপরদিকে, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহার পরিবার এ হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামি প্রদীপ কুমার দাশ এবং লিয়াকত আলীর সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও সিনহার পরিবারের প্রত্যাশা, এ রায় দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। সিনহার পরিবারের পাশাপাশি গোটা জাতি বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলার রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে দিবাগত রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

ওই ঘটনার ৫ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। এতে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যা ব।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৪ মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্তের পর ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। সিনহা হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে।

গত বছরের ২৭ জুন ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর গত ২৩ আগস্ট সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা শুরু হয় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে। যা শেষ হয় গত বছরের ১ ডিসেম্বর। এ মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৬৫ জন সাক্ষী।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন— টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ও বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক, এসআই, নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক, এএসআই লিটন মিয়া ও বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব।

এ ছাড়াও রয়েছেন— বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক, এসআই, মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন এবং আয়াজ উদ্দিন।