পাপ ছাড়ে না বাপকেও!

এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ওসি, যিনি ইচ্ছে করলেই যে কাউকে ক্রসফায়ারে দিতেন, ইচ্ছে করলেই তরুণীদের উঠিয়ে এনে বিকৃত লালসা চরিতার্থ করতেন, যে কাউকে ইয়াবা কারবারী আখ্যা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে জীবন নষ্ট করে দিতেন- সেই ওসি প্রদীপ এখন কনডেম সেলে মৃত্যুর অপেক্ষা করছেন!

ওসি প্রদীপ

ভুক্তভোগীরা তার এই সাজার রায়ের পর বলছেন, পাপ ছাড়ে না বাপকেও। কম পাপ করেনি ওসি প্রদীপ। সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা এলাকার যতগুলো মানুষের জীবন-ক্যারিয়ার নষ্ট করে দিয়েছে, তার তুলনায় এই শাস্তি একেবারেই কম।

গতকাল সোমবার ওসি প্রদীপের ক্রসফায়ারে নিহতদের স্বজন ও নির্যাতিতরা অভিযোগ করেছেন, প্রদীপ টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকাকালে ১৪৫ জনকে ক্রসফায়ারে দিয়ে বিনাবিচারে হত্যা করা হয়। নিহতদের স্বজনেরা বলেন, ইচ্ছে হলেই ওসি প্রদীপ কাউকে তুলে নিয়ে ইয়াবা কারবারী আখ্যা দিয়ে চাঁদা চাইতেন। না দিতে পারলে তথাকথিত ক্রসফায়ারে তাকে হত্যা করা হতো। 

ওসি প্রদীপকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে র‌্যাব

অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালী থানা থেকে ২০ অক্টোবর ২০১৮ সালে ওসি হিসেবে টেকনাফ মডেল থানায় যোগ দেন প্রদীপ। এরপর থেকে তার নেতৃত্বে ও নির্দেশে শতাধিক বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ওসি প্রদীপ কুমার দাসের অপরাধ প্রক্রিয়া ছিল, কোনো ঘটনায় মাদক উদ্ধার হলে অথবা টার্গেট কোনো ব্যক্তিকে মাদক দিয়ে ফাঁসানো হলে (ফিটিং মামলা) প্রথমত আসামি বা ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর স্থানীয় কিছু লোক এবং তার নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের জন্য দেনদরবার করা হয়। 

প্রদীপের এ ধরনের অপরাধকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পেতেন না। যারা ন্যূনতম প্রতিবাদ করার সাহস দেখিয়েছেন, তারা এবং তাদের পরিবার ও নিকটাত্মীয়স্বজন শত অত্যাচার, নিপীড়নসহ মামলা-হামলার শিকার হতেন।

সিনহা হত্যা-পরবর্তীতে টেকনাফে প্রদীপ আমলের কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১৪৫ জনকে হত্যা ও ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তবে সেই সময়ও ভুক্তভোগীদের কেউ মামলা না করায় ধামাচাপা পড়ে প্রদীপের বিরুদ্ধে সিরিয়াল ধর্ষণের অভিযোগগুলো। এখন ধীরে ধীরে ঘটনাগুলো বের হয়ে আসছে।