মিয়ানমারের জঙ্গল মৃত গণতন্ত্রের আস্তানা!

যেদিন বন্দুকের নলের ইশারায় নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসেছে জান্তারা সেদিনই মরে গেছে মিয়ানমারের গণতন্ত্র। ‘মৃতরা’ ঠাঁই নিয়েছে দেশের জঙ্গলগুলোতে। এমনই অবস্থা এখন মিয়ানমারে। জান্তাবাহিনীর সাধারণ মানুষকে হত্যা, অত্যাচার আর নিপীড়ন সদ্য আশা জাগানিয়া গণতান্ত্রিক দেশটিকে বানিয়েছে গণতন্ত্রকামীদের গোরস্থান।

মিয়ানমারের জঙ্গল মৃত গণতন্ত্রের আস্তানা

হামলা-মামলা আর ধ্বংসলীলা থেকে বাঁচতে দেশটির জঙ্গলে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর রোগের সঙ্গে লড়াই করছে বাস্তুচ্যুত অসহায় নির্বাসিত মানুষগুলো। বৃহস্পতিবার গার্ডিয়ানের এক সরেজমিন প্রতিবেদনে গণতন্ত্রকামী নাগরিকদের প্রাত্যহিক জীবনের এ করুণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

মিয়ানমারের কারেনি রাজ্যের ডেমোসো শহরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন খু বুয়ে রেহ (ছদ্মনাম)। কায়াহ নামেও পরিচিত এ শহরটিতে গণতন্ত্রপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং জান্তাদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে গত মে মাস থেকে। আর ওই সময়েই স্ত্রী আর পাঁচ বছরের ছেলেটিকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন গভীর জঙ্গলে।

এ সময়ে তাদের একমাত্র আশ্রয় বলতে একটি ত্রিপল। সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া সামান্য খাবারের ওপর চলতে হয়েছে অনেক দিন। সেখানে যাবার মাস দুয়েকের মধ্যেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো নেমে এলো আরেক বিপর্যয়। যথাযথ পুষ্টির অভাবে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে ছেলেটি। আগে থেকেই খিঁচুনিতে ভোগা ছেলেটি কথা বলা এবং শক্ত খাবার খাওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

মিয়ানমারজুড়ে দ্রুত ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের ধাক্কা খাওয়া হাজার হাজার মানুষের মধ্যে খু বুয়ে রেহ’র পরিবার একটি মাত্র উদাহরণ। ক্রমবর্ধমান সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়ায় আরও মরিয়া হয়ে ওঠা জান্তাবাহিনী বিমান হামলা, আর্টিলারি শেলিং, অগ্নিসংযোগ এবং নির্বিচারে গোলাগুলির মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু করেছে বেসামরিক জনগোষ্ঠীকেই।

অভ্যুত্থানের পর থেকে সারা দেশে বাস্তুচ্যুত হয়েছে তিন লাখেরও বেশি মানুষ। সম্পদ ও বাড়িঘরের পাশাপাশি জীবিকাও হারিয়েছে এই অসহায় মানুষগুলো। কারেনি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের মতে, জান্তাদের মুহুর্মুহু আক্রমণ রাজ্যজুড়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে।

অধিকাংশ বাস্তুচ্যুত মানুষ পাহাড়ে কিংবা বনাঞ্চলে আশ্রয় নিচ্ছেন, যেখানে তাদের মৌলিক মানবিক প্রয়োজনীয় সুবিধাদি প্রবেশাধিকার অত্যন্ত সীমিত। বেসামরিক নাগরিকরা যারা তাদের গ্রামে খাবার এবং অন্যান্য জিনিসপত্র আনতে গিয়ে মারা পড়েছে জান্তাসেনাদের হাতে।

কারেনির মানবিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। বড়দিনের আগে আগে, সামরিক বাহিনী নারী শিশু এবং সাহায্যকর্মীসহ অন্তত ৩৫ জন বেসামরিক মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। তখন থেকেই জান্তা ও সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই তীব্রতর হয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা।

এদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার নতুন কূটনৈতিক ধাক্কা খেয়েছে বৃহস্পতিবার। কারণ আঞ্চলিক ব্লক আসিয়ান জান্তার শীর্ষ কূটনীতিককে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আসন্ন বেঠকে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাবে না বলে জানিয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চুম সানরি।