দুই ঘণ্টায় কিয়েভ পৌঁছবে রুশ সেনারা!

ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালালে তাদের সেনারা দুই ঘণ্টায় কিয়েভে পৌঁছে যেতে পারে বলে মনে করছে রাশিয়া। ইউক্রেন এখন খতিয়ে দেখছে হামলার সম্ভাব্য সব পথ। দেশটির আশঙ্কা, বেলারুশ সীমান্তবর্তী পরমাণু বিপর্যয় এলাকা চেরনোবিল দিয়ে সেনা পাঠাতে পারেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেক্ষেত্রে কিয়েভে রাশিয়ার বাহিনী প্রবেশ করতে মাত্র দুই ঘণ্টা লাগতে পারে। দ্য এক্সপ্রেস। 

ইউক্রেন সীমান্তে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে রাশিয়া

তবে আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে ইউক্রেনও। রুশ সেনাদের প্রবেশ ঠেকাতে প্রায় ৮ হাজার সীমান্তরক্ষী পাঠিয়েছে চেরনোবিল রুটে। গত কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে নিজেদের ৪ হাজার মাইলেরও বেশি সীমান্তজুড়ে লক্ষাধিক সেনা, ট্যাংক ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছে রাশিয়া।

প্রস্তুত রয়েছে রুশ মিত্র বেলারুশের সেনারাও। এই বেলারুশ সীমান্ত থেকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দূরত্ব খুব বেশি নয়, মাত্র ১৩৪ কিলোমিটার। তবে সীমান্ত পেরিয়েই ঐতিহাসিক পরমাণু বিপর্যয় এলাকা চেরনোবিলের অবস্থান।

ইউক্রেনের নিয়মিত সেনাদের পাশাপাশি সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন হাজার হাজার বেসামরিক যোদ্ধা

ইউক্রেন তখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে ইউক্রেনের চেরনোবিলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে একটি চুল্লি­তে বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শক্তিশালী তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ে। এতে তৎক্ষণাৎ ৩৫ জন নিহত হয়।

দুর্ঘটনার পর ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারদিকে ৩০ মাইলজুড়ে মানুষের বসবাস নিষিদ্ধ করা হয়, যা ৩৬ বছর পরও এখনো বলবৎ রয়েছে। বর্তমানে ‘চেরনোবিল এক্সক্লুশন জোন’ হিসেবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এলাকাটি।

চেরনোবিল রাজধানী কিয়েভ থেকে খুব বেশি দূরে নয়। তাই কৌশলগতভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর বেশিরভাগ এলাকায় আজও উচ্চহারে পরমাণু বিকিরণ রয়েছে। এ কারণে এই অঞ্চলে মানুষের চলাচল কম। কিন্তু বর্তমানে এই এলাকাকেই বড় বিপদ হিসেবে দেখছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা।

ইউক্রেন স্টেট বর্ডার গার্ড সার্ভিসের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইউরি শাকরাইচুক বলছেন, চেরনোবিলে বিপদ বাড়ছে। রুশ অভিযান ছাড়া এই বিপদ আর কিছুই নয়। আর সেজন্য আগেভাগেই প্রতিরক্ষা জোরদার করছে ইউক্রেন। ইউরি বলেন, এই অঞ্চলে আমরা নিরাপত্তা বাড়িয়েছি, সেনা সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে টহলও বাড়িয়েছি।

তবে দেশটির এই প্রতিরক্ষা শক্তি কতটুকু কাজে আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এই চেরনোবিলের মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই বেলারুশ সীমান্তে শত শত ট্যাংক, এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রসহ অত্যাধুনিক সব অস্ত্র নিয়ে পুতিনের আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে রুশ সেনারা। আরও সেনা পাঠানো হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার এক সতর্ক বার্তায় ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার সেনার পাশাপাশি পরমাণুচালিত ইসকান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমানও পাঠাচ্ছেন পুতিন। তার মতে, গত শতকের ঠান্ডা যুদ্ধের পর থেকে বেলারুশে এটাই রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সেনা সমাবেশ হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন ন্যাটো প্রধান।