খলনায়ক মেসি, সেই এমবাপ্পের হাতেই রিয়ালের সর্বনাশ

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট পর্বের প্রথম ম্যাচটা উত্তাপ ছড়াল বটে। কিন্তু কোনো থ্রিলার উপহার দিতে পারেনি। তাই বলে প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) ও রিয়াল মাদ্রিদ মহারণ যে নাটুকে ছিল না তা কিন্তু নয়। হাইভোল্টেজ ম্যাচটার নিষ্ফলা পরিণতি হতে যাচ্ছিল। সেটা হতে দেননি কিলিয়ান এমবাপ্পে। যাকে পাওয়ার জন্য কয়েক বছর ধরে মরিয়া হয়ে উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদ, সেই এমবাপ্পেই কিনা করলেন সর্বনাশটা!

সেই এমবাপ্পের হাতেই রিয়ালের সর্বনাশ

মঙ্গলবার রাতে শেষ ষোলোর প্রথম লেগের ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করে বসেন ফরাসি ফরওয়ার্ড। এই গোলের সুবাদে রিয়াল মাদ্রিদকে ন্যূনতম ব্যবধানে হারিয়েছে পিএসজি (১-০)। এমবাপ্পে তো বটেই, পিএসজির আর্জেন্টাইন কোচ মাওরিসিও পচেত্তিনো পিঠ চাপড়ে দেবেন নেইমার জুনিয়রেরও। তবে রিয়ালের আফসোস হতে পারে, এই জানুয়ারিতেই কেন এমবাপ্পেকে নিতে পারল না তারা এই ভেবে।

পার্ক ডু প্রিন্সেসে পিএসজি-রিয়াল ম্যাচটা দারুণ উপভোগ্য হয়ে উঠল শুরু থেকেই। মিলছিল না কেবল গোলের দেখা। সেটা এমন একটা সময় এলো যখন ড্রটা সময়ের ব্যপার বলে মনে হচ্ছিল। দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমের চতুর্থ মিনিটে স্বপ্নের গোলটা পেয়ে যায় পিএসজি। গোল করেন এমবাপ্পে। গোলের উৎস নেইমার। চোট কাটিয়ে আড়াই মাস পরে মাঠে ফিরেই দলের জয়ে রাখলেন অবদান। করলেন অ্যাসিস্ট।

মেসি

এমবাপ্পে যে গোলটা করেছেন সেটা এসেছে নেইমারের ব্যাকহিল থেকে। পিএসজি ফরওয়ার্ড অবশ্য গোলটা পেতে পারতেন আরো আগেই। কিন্তু ম্যাচের ১৮ মিনিটে রিয়াল গোলরক্ষক থিবাউট কোর্তোয়াকে একা পেয়েও কাঙ্খিত ঠিকানায় বল পাঠাতে পারেননি তিনি। বল ঠেকিয়ে দেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক। সেই হতাশা ছাপিয়ে গেছে ৬২ মিনিটে লিওনেল মেসির পেনাল্টি মিসে। স্পট কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন আর্জেন্টাইন সেনসেশন।

বর্তমান পেশাদার ফুটবলারদের মধ্যে মেসিই সর্বোচ্চ ৩০টি পেনাল্টি মিস করলেন। তারচেয়ে বেশি পেনাল্টি মিস করেননি আর কেউ। স্পট কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ মেসি হয়ে গেলেন খলনায়ক। আর শেষ মুহূর্তে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেওয়া এমবাপ্পে-নেইমার পেলেন নায়কের চরিত্র। তবে নেইমার চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরলেও বেনজেমার ফেরাটা সুখের হয়নি। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে থাকলেন মৌসুমজুড়ে রিয়ালের ঘানি টানা ফরাসি স্ট্রাইকার।

প্যারিসে ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল পিএসজিরই। পাসিং, প্লেসিং, আক্রমণ কিংবা বলের দখল- কোথায় দাপট ছিল না স্বাগতিকদের। বরং পিএসজি না জিতলে সেটাই হতো বিস্ময়কর! পুরো ম্যাচে গোলের উদ্দেশ্যে ২১টি শট নিয়েছেন পচেত্তিনোর শিষ্যরা। যার আটটি শটই ছিল গোলমুখে। বিপরীতে তিন শটের একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। দলটির কোচ কার্লো আনচেলত্তির হতাশ হতেই পারেন।

স্বস্তির এই জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের পথে একধাপ এগিয়ে গেল পিএসজি। তবে এই হারে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে না টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল রিয়ালের। কারণ ৯ মার্চ ফিরতি লেগটা তারা খেলবে ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। ওই ম্যাচে জিততেই হবে রিয়ালকে। গোল হজম করলেই বিপদ। সেক্ষেত্রে শেষ আটের টিকিটের জন্য অন্তত দুই গোলের ব্যবধানে জিততে হবে রিয়ালকে। তারকাঠাসা পিএসজির বিরুদ্ধে কাজটা একটু কঠিনই।

রিয়ালের পক্ষে শেষ ষোলোর পর্ব উতরানো কঠিনই বটে। কেননা এই বছরের শুরু থেকেই নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে দলটি। স্প্যানিশ লা লিগায় শীর্ষে থাকলেও শেষ তিন ম্যাচে তাদের জয় একটিতে। আর পিএসজির বিপক্ষে টানা তিনটি ম্যাচ খেলেও জয়ের মুখ দেখল না তারা। সবশেষ ২০১৯-২০ মৌসুমে ফরাসি ক্লাবটিকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল স্প্যানিশ ক্লাবটি।