যুদ্ধের চাপে ইউক্রেনিয়ান সেনাদের আত্মহত্যা!

পূর্ব-ইউক্রেনে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাজার হাজার সেনা হারিয়েছে ইউক্রেন। কিন্তু সেনাদের আত্মহননের ঘটনাও কম নয়। ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সহস্রাধিক সেনা আত্মহত্যা করেছে। ইউক্রেন সীমান্ত বরাবর একের পর এক সামরিক মহড়া চালাচ্ছে রাশিয়া। সাগরে জড়ো করেছে রণতরীর বিশাল বহর। পরিস্থিতি এমন যে, এই হামলা শুরু হলো বলে। এর ফলে চরম মানসিক চাপের মুখে পড়ে আত্মহত্যা করছে ইউক্রেনীয় সেনারা। বিবিসি।

পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে ইউক্রেনের দেড় হাজারের মতো সেনা নিহত হয়েছে

ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব নতুন নয়। এটা চলে আসছে সেই ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর থেকেই। এবার ক্রেমলিনের লক্ষ্য গোটা ইউক্রেনকে গিলে খাওয়া। এ পরিস্থিতি যদি সত্যি সত্যি যুদ্ধে রূপ নেয়, তাহলে ইউক্রেনের সেনাদের আত্মহনন আরও বাড়বে।

পরিসংখ্যান বলছে, রাশিয়ার যুদ্ধচাপ সইতে না পেরে যুদ্ধের মাঠ থেকে বহু সেনা পালিয়ে এসেছে। শুধু তাই নয়, আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে অনেকেই। বিষয়টি স্বীকার না করলেও সেনাদের উদ্বুদ্ধ করতে ৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে ইউক্রেন সরকার।

রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ নবম বছরে পদার্পণ করেছে। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসন। এ অবস্থায় দেশটি এখনো তার সেনা এবং প্রবীণদের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বের করতে পারেনি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ সংখ্যা প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আর এ কারণেই নিহতদের পরিবার যুদ্ধে মৃত্যুর সম্মান বা আর্থিক সহায়তা দাবি করতে পারে না।

ভেটেরান্স বিষয়ক উপমন্ত্রী ইননা দ্রাহানচুক বলেন, তাদের রেকর্ডে দেখা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে প্রায় ৭০০ প্রবীণ আত্মহত্যা করেছেন। তবে তারা সবাই সৈনিক ছিল কি না সেটা জানা নেই। দ্রাহানচুক জানান, একজন প্রবীণ সৈনিকের পরিবার শুধু তখনই আর্থিক এবং সামাজিক সহায়তাপ্রাপ্য হয়, যদি তারা প্রমাণ করতে পারে যে আত্মহত্যাটি যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।

কিয়েভের সামরিক মনোবিজ্ঞানী ভলোদিমির ভলোশিন বলেন, যত দিন যুদ্ধ চলবে, তারা কখনোই সেই সংখ্যাগুলো প্রকাশ করবে না। কারণ সরকার মনে করছে, রাশিয়ানরা আমাদের মনোবল নষ্ট করতে এদের ব্যবহার করতে পারে।

ফাদার সের্গি দিমিত্রিয়েভ মেরিঙ্কা শহরের কাছে লাইনের পেছনে দাঁড়িয়ে একটি কৌতুক বলছিলেন। এটা ২০১৮ সালের কথা। ততদিনে ইউক্রেনের যুদ্ধ গড়িয়েছে চার বছরে। ওইদিন ছিল ইস্টার সানডে। পুরোহিত সৈন্যদের জন্য সেবার নেতৃত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। এমন সময় পাশের ভবনের এক তরুণ প্রকৌশলী নিজের মাথায় গুলি করেছিলেন। যুদ্ধের গুলি মনে হলেও তা ছিল আত্মহত্যা।

২০১৮ সালে তৎকালীন চিফ মিলিটারি প্রসিকিউটর আনাতোলি মাতিওস বলেছিলেন যে, যুদ্ধের প্রথম চার বছরে ৫৫৪ সক্রিয় সেনাসদস্য আত্মহত্যা করেছিল। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ সংখ্যাকে সমর্থন দেয়নি। ২০১৮ সালের আরেকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধে নিহতের মোট সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৬১৯ জন। ওই প্রতিবেদনটি বলছে, এ যাবত আত্মহত্যা করেছে এক হাজারেরও বেশি।

সেনাদের আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার কারণ বিষয়ে দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে কাজ করা মনোবিজ্ঞানী আন্দ্রে কোজিনচুক বলেন, আমাদের সংস্কৃতিতে পুরুষরা সাহায্য চাওয়ার চেয়ে মরতে পছন্দ করে।

একজন সৈনিক যখন গান গায়, তখন তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। আমি ভালো আছি। আসলে কি ভাল আছি? কোজিনচুক আরও বলেন, ইউক্রেনে অভিজ্ঞদের সম্মান জানানো হয় না। এ বিষয়টিই তাদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়।