ইসরায়েল: পরমাণু চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যকে ‘আরো সহিংস’ বানাবে

ইরানের সাথে করা ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ভিয়েনায় যে আলোচনা চলছে তার তীব্র সমালোচনা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। বলেছেন, এটি পূর্ববর্তী চুক্তির চেয়ে দুর্বল হবে এবং আরো সহিংস ও অস্থির মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করবে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট

পরমাণু ইস্যুতে ২০১৫ সালে ইরান ও ছয় শক্তির মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, ইসরায়েলের প্ররোচনায় ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন তা থেকে সরে আসে। ওই চুক্তি ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার বিনিময়ে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি দিয়েছিল।

দীর্ঘ আলোচনার পর ওই চুক্তি আবারো পুরোপুরি কার্যকর করার চেষ্টা চালাচ্ছে উভয় পক্ষ। যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ায় তারা পরোক্ষভাবে এ আলোচনায় অংশ নিচ্ছে। তবে ইসরায়েল নতুন করে ইরানের সাথে কোনো ধরনের সমঝোতার তীব্র বিরোধিতা করেছে। একই সাথে আলোচনাকারীদের ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

ভিয়েনায় চলছে ম্যারাথন বৈঠক

গতকাল রোববার ইহুদি আমেরিকান নেতাদের কাছে এক বক্তৃতায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট সতর্ক করে বলেন, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সাথে অস্ত্রের গ্রেডের কাছাকাছি স্তরে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সময়কাল ব্যবহার করেছে। মূল চুক্তিতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সমৃদ্ধকরণের জন্য যে ১০ বছরের সীমা দেওয়া হয়েছিল, তার মেয়াদ রয়েছ আর মাত্র আড়াই বছর। ফলে এ চুক্তি ইরানকে তার পরমাণু কর্মসূচি থেকে খুব একটা দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না।

আমেরিকান ইহুদি সংস্থাগুলোর সভাপতিদের সম্মেলনে বেনেট আরো বলেন, ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলে তারা ইসরায়েলের সীমান্তে শত্রু প্রক্সি গ্রুপগুলোকে বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করবে। ফলে ইরানের সাথে যে কোনো ধরনের সমঝোতা আরো সহিংস ও অস্থির মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করার সম্ভাবনা বাড়াবে।

তেলআবিব দাবি করছে, তারা এমন একটি উন্নত চুক্তি চায়, যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার পাশাপাশি ইরানের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মতো ইসরায়েলের সীমান্তে শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ডে সমর্থন জোগানোকে বন্ধ করবে। একই সাথে ইরান যাতে এসব বিষয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিলম্ব না করে তা নিশ্চিত করার জন্য আলোচনার সাথে অবশ্যই একটি কার্যকরী ও বিশ্বাসযোগ্য সামরিক হুমকিও থাকতে হবে বলে দাবি করে ইসরায়েল।

আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে মূল চুক্তি থেকে সরে আসায় ইরান তার পারমাণবিক কর্মকাণ্ড জোরদার করার সুযোগ পেয়েছে। তাই অনেকেই ট্রাম্পের ওই পদক্ষেপকে বড় ধরনের ভুল বলে আখ্যায়িত করেন। এখন ওই চুক্তি আবারো কার্যকর করতে উভয় পক্ষ ভিয়েনায় দীর্ঘ বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে। মূল চুক্তি থেকে সরে আসায় যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষভাবে বর্তমান আলোচনায় অংশ নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি চুক্তিতে আবার যোগ দিতে চান।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বার্ষিক মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের বলেছেন, আলোচনা গত ১০ মাসে দীর্ঘ পথ এসেছে এবং আলোচনার উপসংহারের সমস্ত উপাদান টেবিলে রয়েছে। এদিকে তেহরান আগেই জানিয়ে রেখেছে, ভিয়েনায় প্রস্তাবিত চুক্তি অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা ইরানের পার্লামেন্টের রয়েছে।

ইরান সব সময়েই দাবি জানিয়ে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো কখনোই তেহরানের এ কথা মেনে নেয়নি। তাদের দাবি ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে।