এবার ফাঁস হল ১০ হাজার কোটি ডলারের ‘সুইস সিক্রেট’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্পদশালীরা তাদের অর্থ গোপনে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমিয়ে থাকেন, যাতে তা কখনো প্রকাশ না পায়। গ্রাহকদের নাম-পরিচয় লুকিয়ে রাখা এসব ব্যাংকে নিজের আখের গুছানোদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। মাঝেমধ্যে ফাঁস হওয়া বিভিন্ন নথিতে সুইস ব্যাংকের কোটিপতি গ্রাহকদের তথ্য এসেছে।

১০ হাজার কোটি ডলার, ফাইল ছবি

এবার নতুন করে ফাঁস হয়েছে ১০ হাজার কোটি ডলারের ‘সুইস সিক্রেট’। এই তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, মিশরের সাবেক স্বৈরাচার হোসনি মুবারকের ছেলেরাও রয়েছেন। এমন তথ্য জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের পাকিস্তানি সংস্করণ এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

খবরে বলা হয়, বিশ্বের আইকনিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা ক্রেডিট সুইসের বিপুল পরিমাণ ব্যতিক্রমী ডাটা ফাঁস হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকটিতে শত শত কোটি ডলার কীভাবে জমানো হয়েছে, সেই তথ্য প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এই তালিকায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারি কর্মকর্তা, নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ব্যবসায়ী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীসহ অনেকের নাম রয়েছে।

সুইস সিক্রেট, ফাইল ছবি

স্বঘোষিত এক হুইসেলব্লোয়ার ব্যাংকটির ১৮ হাজারের মতো একাউন্টের তথ্য ফাঁস করেছে, যাতে জমা আছে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। বিপুল পরিমাণ অর্থের এসব একাউন্ট ১৯৪০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত খোলা হয়েছে। গোপনীয় ওই তথ্য অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট এবং বিশ্বের ৪৬টি সংবাদমাধ্যমের কাছে শেয়ার করেছে জার্মান পত্রিকা সুডয়েচে জিতাং। এর মধ্যে একটি নিউ ইয়র্ক টাইমস।

ক্রেডিট সুইসে শত শত কোটি ডলার জমানো হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের মধ্যে জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, মিশনের হোসনি মুবারকের দুই ছেলে ও ভেনিজুয়েলার সাবেক জ্বালানি উপমন্ত্রী নারভিস ভিলালোবোস রয়েছেন। এই তালিকায় অতি ধনীদের পাশাপাশি সঙ্কটে থাকা ব্যক্তিদের নামও আছে।

ব্যাংকটিতে থাকা ১৮ হাজার একাউন্টের মধ্যে শতাধিক মার্কিন নাগরিকরদের, তারা কেউ সরকারি কর্মকর্তা নন। জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তার নামও রয়েছে একাউন্টহোল্ডারের তালিকায়। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের আত্মীয়দের নাম এসেছে নতুন ফাঁস হওয়া নথিতে।

এ বিষয়ে সুইস অর্থপাচারবিরোধী এজেন্সির সাবেক প্রধান দানিয়েল থেলেস্করাফ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের অর্থ ফেরত দেওয়া নিয়ে আইনি বিধিনিষেধ রয়েছে। সেটি মোকাবেলা করতে হচ্ছে সুইস ব্যাংকগুলোকে, যদিও সাধারণত আইনটি প্রয়োগ করা হয় না।

তবে এসব অভিযোগ জোরালোভাবে নাকচ করে ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের মুখপাত্র ক্যান্ডিস সান বলেছেন, ব্যাংকের অনুমেয় ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার ধারণা সঠিক নয়। এসব একাউন্ট কয়েক দশক আগের, সে সময় এখনকার আইন-কানুনের চেয়ে বাস্তবতা অনেক বেশি ভিন্ন ছিল।

এর আগে ২০১৬ সালে পানামা পেপারস, ২০১৭ সালে প্যারাডাইস পেপারস এবং সবশেষ গেলো বছর প্যান্ডোরা পেপারস ফাঁসের ঘটনা ঘটে। যা অনেক দেশের শাসক, কর্তা ও ব্যবসায়ীদের বিপাকে ফলেছে।