তাঁদের একসঙ্গে খেলানোই বিপদ!

‘যত গর্জে তত বর্ষে না’। বাংলা সাহিত্যের পুরনো প্রবাদ এটা। প্যারিস সেন্ট জার্মেইর (পিএসজি) আক্রমণ বিভাগকে মনে করিয়ে দিচ্ছে কথাটা। বর্তমান সময়ের কঠিন বাস্তবতা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে তারা। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন লিওনেল মেসি, নেইমার জুনিয়র ও কিলিয়ান এমবাপ্পে জুটি সব প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেবে। গোলের বান ছোটাবে। কিন্তু যতটা সহজ ভাবা হয়েছিল ব্যাপারটা ঠিক ততটাই কঠিন।

মেসি, নেইমার এবং এমবাপ্পে

কারণ মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে ত্রয়ী একসঙ্গে মাঠে নামলেই যে পিএসজি জিতবে বিষয়টি তা নয়। এই ত্রয়ী শুরুর একাদশে ছিলেন আর পিএসজি জিতেছে এমন ঘটনাও নিয়মিত নয়। কেবল ৪৪ শতাংশ ম্যাচেই আছে এই ত্রিফলার সাফল্য। বাকি ৫৬ শতাংশ ম্যাচে জিততে পারেনি পিএসজি। মেসি, নেইমার এবং এমবাপ্পের উপস্থিতি যে মাঠে বড় কোনো প্রভাব ফেলছে না এটা বোঝাতে এই তথ্যটাই যথেষ্ঠ।

এই মৌসুমে তারকার হাট বসেছে প্যারিসে। আক্রমণভাগের তিন তারকা ছাড়াও দলটিতে আছেন সার্জিও রামোস, জিয়ানলুইজি ডোন্নারুম্মা, আশরাফ হাকিমির মতো ফুটবলাররা। কাগজে-কলমে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্লাব তারাই। তবে মাঠে এর প্রভাবটা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে পিএসজির আক্রমণভাগ এখনো ডানা মেলে উড়তে পারেনি। তাদের যৌথ পারফরম্যান্সে তৃপ্ত নন ভক্তরা।

মেসি, নেইমার এবং এমবাপ্পে

এই তিনজনকে আবার এক সঙ্গে পাওয়াও সহজ নয়। গত নভেম্বরে ইনজুরিতে পড়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় নেইমারকে। চোটের কারণে কয়েকটা ম্যাচ মিস করেছেন মেসিও। আর্জেন্টাইন সুপারস্টার আবার এর মাঝে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সবমিলিয়ে এই মৌসুমে পিএসজি আক্রমণের সেরা তিন অস্ত্রকে পেয়েছে মাত্র নয়টি ম্যাচে। তাই বেশি বেশি ম্যাচ খেলার আর্জি ছিল তাদের।

কিন্তু একত্রে তিনজনের মাঠে নামানো মানেই ঝুঁকি নেওয়া। পরিসংখ্যান বলছে, এই তিনজন এক সঙ্গে শুরুর একাদশে না থাকলে পিএসজির জয়ের হার ৭৪ শতাংশ। তিনজন একসঙ্গে শুরুর একাদশে খেলেছেন এমন ম্যাচ পিএসজি হেরেছে চারবার। সবশেষ গেল রোববার নঁতের মাঠে হেরেছে তারা। প্রথমার্ধে তিন গোল হজম করা পিএসজি হেরেছে ৩-১ ব্যবধানে। হারের পর অনুশীলনে বাড়তি মনোযোগ দেওয়ার নির্দেশনা এসেছে দলের কোচ মাওরিসিও পচেত্তিনোর পক্ষ থেকে।

প্রশ্ন উঠছে পিএসজির আর্জেন্টাইন কোচ পচেত্তিনোর সক্ষমতা নিয়েও। বড় মাপের তারকাদের সামলাতে পারেননি তিনি এমন অভিযোগও আছে। পিএসজি কোচ অবশ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পরিশ্রম করছেন, ছক বদলাচ্ছেন, আলাদাভাবে শিষ্যদের নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তবে এর মধ্যে আশার কথা হচ্ছে মেসি-নেইমাররা বেশি হতাশ করলেও তুলনামূলক এমবাপ্পের পারফরম্যান্স তৃপ্ত করার মতো।

মূলত বড় ম্যাচের চেয়ে ছোট ম্যাচেই হতাশ করছেন তারকা এই ত্রয়ী। যার প্রমাণ হিসেবে একটা তথ্য যথেষ্ঠ। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের এই মৌসুমে শুরুর একাদশে তিনজন খেলে ম্যানচেস্টার সিটিকে ২-০ গোলে হারিয়েছে পিএসজি। অথচ ফ্রেঞ্চ লিগে কিনা একই দলটা হেরে গেল রেঁনের মাঠে! অলিম্পিক মার্শেইর সঙ্গে আবার গোলশূন্য ড্র করেছে পিএসজি। এসব পরিসংখ্যান দেখলে কোন কোচ তিনজনকে এক সঙ্গে মাঠে নামাবেন!