টার্গেট ইরান, মধ্যপ্রাচ্যে ড্রোন বাহিনী গড়বে যুক্তরাষ্ট্র

চলমান আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে বর্ধিষ্ণু উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে ড্রোন বাহিনী গড়ার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ পরিকল্পনা করছে দেশটির নৌবাহিনী। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই অঞ্চলের মিত্র দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে নতুন এই বাহিনী গড়ে তোলা হবে। যা দিয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জলসীমায় নজরদারি করা যাবে। ২০২৩ সালের গ্রীষ্মের মধ্যে এ বাহিনী চালু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আল জাজিরা।

মধ্যপ্রাচ্যে ড্রোন বাহিনী গড়বে যুক্তরাষ্ট্র, ছবি- আল জাজিরা

প্রতিবেদন মতে, মার্কিন পঞ্চম নৌবহরের নেতৃত্ব দেওয়া ভাইস অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার জানিয়েছেন, যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজের সঙ্গে ১০০টি মনুষ্যবিহীন ড্রোন মোতায়েন করা হবে, যা নাটকীয়ভাবে মার্কিন নৌবাহিনীর নজরদারির ক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।

বিশ্বব্যাপী তেল পরিবহনের ক্ষেত্রে জলপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই নজরদারি ব্যবস্থা। বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি ভেঙে যাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামুদ্রিক বাণিজ্যকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। কুপার বলেন, এসব বিষয় নজরদারির ক্ষেত্রে আমাদের ফাঁকা জায়গাগুলো পূরণ হয়ে যাবে।

বাহরাইন-ভিত্তিক পঞ্চম নৌবহরের ক্ষেত্রে হরমুজ প্রণালী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপসাগরের এই সরু মুখ দিয়ে বিশ্বের ২০ শতাংশ তেল সরবরাহ হয়। এটি সুয়েজ খালের কাছে লোহিত সাগর, মধ্যপ্রাচ্যকে ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করে মিশরের জলপথ এবং ইয়েমেনের বাব আল-মান্দেব প্রণালী পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে।

ইরানের সঙ্গে বিশ্বশক্তির করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে সমুদ্রপথে উত্তেজনা চলছে। ইরানের তেলের ট্যাংকার জব্দ এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর একাধিক জাহাজে সন্দেহজনক বিস্ফোরণের ফলে এই উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। যা কার্যত সমুদ্রে ছায়াযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। যদিও পশ্চিমাদের দাবি প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে ইরান।

অভিযোগ রয়েছে, ইয়েমেনে বিগত সাত বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যেই ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা সৌদি জলসীমার দিকে বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোন বোট পাঠিয়েছে। এ কারণে সমুদ্রে জাহাজ চলাচল এবং তেল সরবরাহ প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুপার বলেন, হুথিরা যা করছে, এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অপারেশন এবং আক্রমণাত্মক। আর আমরা যা করছি তা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিরক্ষামূলক।

তিনি আরও জানান, সম্ভবত ইসরায়েলও এই অঞ্চলে মনুষ্যবিহীন নৌ ড্রোন টাস্কফোর্সে যোগ দেবে। ভবিষ্যতে আমরা পাশাপাশি কাজ করার আশা করছি। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের জলসীমায় ইরান ও মার্কিন নৌবাহিনীর নৌযানের মধ্যে বেশ কিছু উত্তেজনাকর সংঘর্ষ হয়েছে।

এসব ঘটনা দেশগুলোর মধ্যে একটি সশস্ত্র সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি করেছে। ইরাক, সিরিয়া, লেবানন এবং ইয়েমেন প্রক্সি যুদ্ধের অংশ হিসেবে মিলিশিয়াদের ইরান পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তেহরান এ ধরনের অভিযোগ সরাসরি যেমন প্রত্যাখ্যান করেনি, তেমনি স্বীকারও করেনি।