স্বাধীনতার স্বীকৃতির পরও পুতিনবিরোধী বিক্ষোভ!

ডোনেস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ও পূর্ব ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপল। রুশ জনবহুল এলাকা হলেও পুতিনের বিরুদ্ধে একাট্টা তারা। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি পেয়েও খুশি নয় তারা। বরং প্রতিবাদের আগুন জ্বালাতে দলে দলে নেমে আসছেন রাজপথে। বুধবার নীল-হলুদ ইউক্রেনীয় পতাকা দোলানো জনতার রুশবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ছিল মারিওপল। সেন্ট্রাল থিয়েটার স্কয়ারে দাঁড়িয়ে তারা মেলে ধরেছে একটি বার্তা ‘রাশিয়াকে কোনোভাবেই এখানে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’

মারিওপলে রুশ বিরোধী বিক্ষোভ

প্রায় ৫ লাখ অধিবাসীর শহর মারিওপল। ২০১৪ সালে আংশিকভাবে শহরটি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এরপর থেকেই সেখানে দানা বাঁধতে থাকে সহিংসতা। সেই থেকে আন্তঃশত্রুদের আগ্রাসন রুখতে প্রস্তুত হতে থাকে শহরবাসী। মঙ্গলবার মস্কোর আগ্রাসন হুমকি তাদের কাছে তিতকুটে ট্যাবলেটের মতোই। এটা গেলা যাবে না। তারই ফল সমন্বিত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ।

ডোনেস্ক-লুহানস্ক নিয়ে সোমবারের রুশ স্বীকৃতি তাদের পছন্দ হয়নি। ‘আমি ইউক্রেনকে ভালোবাসি। আমরা এখানে রাশিয়ান শান্তি চাই না’ যেন গলা ফাটিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক চিত্রশিল্পী। তিনি বলেন, পুতিন যা করছেন, তা কাণ্ডজ্ঞানহীন। এ শহর আমরা কিছুতেই তার হাতে ছেড়ে দেবো না।

ফ্রন্টলাইন থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার (১২.৪ মাইল) দূরে এবং আজভ সাগর থেকে হামলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বন্দরনগরী মারিওপল। সে কারণে আগ্রাসনের ক্ষেত্রে রুশ হুঙ্কার এলাকার জনগণের মনের ভেতর গেঁথে গেছে আতঙ্কের তীর। এ কারণে তারা যুদ্ধ চান না। তবু সম্ভাব্য হামলার ক্ষেত্রে প্রস্তুতি কী হতে পারে, বোমা হামলা হলে কীভাবে তা থেকে বাঁচতে হবে তা নিয়েও জনগণকে সতর্ক করেছেন এসব মানুষ।

পুতিনের প্রজাতন্ত্রের ঘোষণাকে দূরভিসন্ধিমূলক বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই ঘোষণাকে ইউক্রেন আক্রমণের সূচনা বলে উলে­খ করেন তিনি। রাশিয়া থেকে এসে মারিওপল শহরের বাসিন্দা হওয়া সস্ত্রীক ভিক্টোরি ভয়েটেকভস্কিও নেমেছেন প্রতিবাদে। তিনি বলেন, আমি ইউক্রেনের পক্ষে। আমি দুঃখিত যে, আমার দেশ (রাশিয়া) এত খারাপ! আমি লজ্জিত।

পূর্ব ইউক্রেনের অধিকাংশ মানুষই রুশভাষী। এ কারণে ইউক্রেনের নাগরিক হলেও রাশিয়ার প্রতি তাদের সামান্য অনুরাগ ছিল। কিন্তু তাদের সেই অনুভূতি কিছুটা উদাসীনতা এমনকি শত্রুতায় পরিণত হয়েছে। মস্কো এখন তাদের চরম শত্রু। একজন বিক্ষোভকারী বললেন, যারা ভাবছেন কিংবা অপেক্ষা করছেন, পুতিন এখানে এলে আরও ভালো হতে পারে। তাদের এ ধারণা পুরোপুরি ভুল।

সাম্প্রতিক সময়ে শেল হামলায় পূর্ব ইউক্রেনে একটি পানির পাম্প এবং একটি কিন্ডার গার্টেনের অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাইটস গ্রুপগুলো সতর্ক করেছে, ইউক্রেনের আরও সশস্ত্র সংঘর্ষের ফলে লাখ লাখ মানুষের পরিণতি হবে বিধ্বংসী।