বিক্ষোভে উত্তাল রাশিয়া, গ্রেপ্তার ১৪০০!

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চালানোর বিষয়টি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। খোদ রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুলিশ এ সময় প্রায় চৌদ্দশত বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে।

এক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ

রাশিয়ার স্বাধীন পর্যবেক্ষক সংস্থা ওভিডি-ইনফো গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট  ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর সারাদেশে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে রাশিয়ার পুলিশ এক হাজার ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৫১টি শহরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল থেকে তাদের আটক করা হয়। এরমধ্যে রাজধানী মস্কো থেকে ৭০০ জনের বেশি এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে প্রায় ৩৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রাশিয়া এমনিতেই বিরোধী মত দমনে খুবই তৎপর। বিরোধী দল-মত পোষণকারীকে নানা রকম নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়। এরমধ্যেই বৃহস্পতিবার ভোরে পুতিন ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর বেশ কয়েকজন রুশ কর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণকে রাস্তায় নামতে আহ্বান জানান।

মস্কোয় যুদ্ধবিরোধী র‌্যালি

অন্যদিকে দেশটির বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী লেভ পোনোমাভিভ একটি পিটিশন দায়েরের ঘোষণা দেন এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এটি দেড় লাখের বেশি স্বাক্ষর এবং দিনে শেষে দুই লাখ ৮৯ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়।

এদিকে আড়াইশোর বেশি সাংবাদিক আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে একটি খোলা চিঠিতে সই করেছেন। একই রকম উদ্যোগে প্রায় আড়াইশ বিজ্ঞানী স্বাক্ষর করেন। আরেকটি খোলা চিঠিতে সই করেছেন মস্কোসহ অন্যান্য শহরের ১৯৪ জন পৌরসভার সদস্য।

মস্কোয় বিক্ষোভকারীদের পুশকিন স্কোয়ারের চারপাশে "যুদ্ধ নয়!" স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ২৩ বছর বয়সী আনাস্তাসিয়া নেস্টুল্যা বলেন, আমি হতবাক। আমার আত্মীয়স্বজন ও প্রিয়জনরা ইউক্রেনে থাকেন। আমি তাদেরকে ফোনে কী বলব? ২৭ বছর বয়সী সভেৎলানা ভলকোভা বলেন, আমার মনে হয় কর্তৃপক্ষ পাগল হয়ে গেছে। উল্টোপাল্টা প্রচার করে মানুষকে বোকা বানানো হয়েছে। তিনজন পুলিশ অফিসার যখন তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন একজন যুবক চিৎকার করে পুলিশকে বলে, তুমি কার সাথে যুদ্ধ করছ? তার চেয়ে বরং পুতিনকে গ্রেপ্তার কর।

রাশিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা নাভালনি টেলিভিশনে প্রচারিত একটি ভিডিওতে বলেন, রাশিয়ান নাগরিকদের কাছ থেকে চুরি ধামাচাপা দিতে এবং দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো থেকে তাদের মনোযোগ সরাতে ইউক্রেনের ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় টিভিতে কাজ করা সহ বেশ কয়েকজন রাশিয়ান সেলিব্রিটি এবং ব্যক্তিত্ব এই হামলার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত মস্কো থিয়েটারের পরিচালক ইয়েলেনা কোভালস্কায়া ফেসবুকে ঘোষণা করেছেন, তিনি তার চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। কারণ একজন হত্যাকারীর জন্য কাজ করা এবং তার দ্বারা বেতন নেওয়া তার পক্ষে অসম্ভব।

মানবাধিকার কর্মী মেরিনা লিটভিনোভিচ ফেসবুকে একটি ভিডিও বিবৃতিতে ব্যাপক বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা পুতিন যে যুদ্ধ শুরু করেছেন তার বিরুদ্ধে। আমরা এই যুদ্ধকে সমর্থন করি না, এটি আমাদের পক্ষে নয়।