ইউক্রেনিয়ানদের ‘বরণ’ করতে সীমান্তে সীমান্তে তাঁবু-হাসপাতাল

ইউক্রেনে চলমান রুশ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপজুড়ে মহা শরণার্থী সংকট শুরু হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত মাত্র দুদিনেই দেশ ছেড়েছেন লক্ষাধিক ইউক্রেনীয় নাগরিক। এসব উদ্বাস্তুর বেশিরভাগই মধ্য-ইউরোপের দেশগুলো বিশেষ করে মলদোভা ও রোমানিয়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন।

ইউক্রেনের রেল স্টেশনে লাখ লাখ মানুষের ভিড়, যারা দেশটি ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন

শরণার্থীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছে চেক রিপাবলিক, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া। এমনকি এ দেশগুলো তাদের সীমান্তে অস্থায়ী তাঁবু ও হাসপাতাল তৈরি করছে। শরণার্থীদের সহায়তার জন্য সেনাও মোতায়েন করছে তারা। এদিকে জাতিসংঘ বলেছে, রুশ আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে ইউক্রেনের অন্তত ৫০ লক্ষাধিক নাগরিক দেশ ছাড়তে পারেন।

রাশিয়ার বহু বছরের নীতিতে পরিবর্তন এনে সোমবার পূর্ব-ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলের দুটি স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র দোনেস্ক ও লুহানস্ককে ‘স্বাধীন’ হিসেবে স্বীকৃতি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। এখানেই থেমে থাকেননি, তিন দিন পরই ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন। তার এ নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় আগ্রাসন, যার মধ্যদিয়ে ৪ কোটির বেশি মানুষের দেশটিতে সূচনা হয় মহা শরণার্থী সংকটের।

বৃহস্পতিবার হামলা শুরু হওয়ার পরই মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে থাকেন। বিবিসির প্রতিবেদন মতে, এদিন হামলার মুখে রাজধানী কিয়েভে জরুরি সাইরেন বাজায় কর্তৃপক্ষ। আতঙ্কে শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেন বহু মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে কিয়েভের রাস্তায় পলায়নরত মানুষের গাড়ির স্রোত ও যানজট দেখা যায়।

মধ্য ইউরোপে ইতোমধ্যে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় বাস করছেন। ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের পাশাপাশি সাম্প্রতিক বছরগুলো শ্রমবাজারের অস্থিরতার কারণে এ অঞ্চলে পাড়ি জমিয়েছেন তারা। রুশ অভিযানের প্রেক্ষিতে নতুন করে শরণার্থীর ঢেউ তৈরি হয়েছে। তবে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিকদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেও দেশগুলোর সরকার ও প্রশাসন ইউক্রেনীয়দেরকে সাদরেই গ্রহণে করছে।

পোল্যান্ড বলেছে, তারা অন্তত দশ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। স্লোভাকিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জারো নাদ বলেছেন, ‘ইউক্রেন থেকে একটা বড় সংখ্যক শরণার্থী আমাদের ভূ-খণ্ডে আসবে বলে মনে হচ্ছে। আমরা সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

তবে পুতিন ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হাঙ্গেরির ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান শরণার্থীদের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন। এরপরও বেশ কিছু শরণার্থী ইতোমধ্যে সীমান্ত পার হয়ে তার দেশে ঢুকে গেছে। এদের কেউ গাড়ি করে, কেউ ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে হেঁটেই সীমান্ত পার হচ্ছেন।

ডেইলি মেইল জানিয়েছে, রাশিয়ার চতুর্মুখী হামলার মাত্রা যতই বাড়ছে ততই দেশ ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠছেন ইউক্রেনের নাগরিকরা। অনেকেই প্রাণভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের পেছনে ছুটছেন। কিয়েভ থেকে বের হয়ে মধ্য-ইউরোপে যাওয়ার মহাসড়কটিতে পাঁচটি লেন রয়েছে। এই পাঁচটি লেনই এখন প্রাইভেট গাড়িতে ঠাসা। প্রচণ্ড জ্যাম লেগে যাওয়ায় গাড়িগুলো ধীরগতিতে এগোচ্ছে। হেঁটে সীমান্তের দিকে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সীমান্তের ট্রেন স্টেশনে রাত্রিযাপন করছে পরিবারগুলো।