যেভাবে কিয়েভবাসীর রাত ও ভোর হয়

রুশ আক্রমণ এতটাই ভয়ংকর যে, প্রাণে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে চলেছেন কিয়েভের শিশু-বৃদ্ধরা। শহরবাসীর মাথার ওপর দিয়ে শাঁই শাঁই করে উড়ে যায় যুদ্ধবিমান। তখনই শুরু হয় এদিক-ওদিক ছোটাছুটি। এ যেন এক মৃত্যুপুরীর গল্প। কিয়েভের বাসিন্দা আনাতলি লাগারভ। তিনি জীবনের ৬৫ বছর পার করেছেন এরই মধ্যে। কিন্তু এমন দুঃসময় তার জীবনে কখনো আসেনি। এমনকি সোভিয়েত যুদ্ধের সময়ও নয়। এদিকে, পোল্যান্ড সীমান্তে হাজার হাজার গাড়ির জট লেগে গেছে। এপি।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি বোম্ব শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছেন মানুষ

লাগারভ বলেন, আমাদের এখন রাত শেষ হয় গুলির শব্দ ও বোমা বিস্ফোরণে, আর ঘুম ভাঙে ক্ষেপণাস্ত্রে। এখানে এখন ভোর হয় ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্নে, আমার প্রিয় কিয়েভ এখন রক্তের নদী। জীবন বাঁচাতে রোমানিয়া সীমান্তে শত শত শিশু-বৃদ্ধের সঙ্গে তিনিও আছেন। প্রাণ-ভয়ে প্রতিদিনই দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। সীমান্তে তৈরি হয়েছে দীর্ঘ যানজট।

কিয়েভের আরেক বাসিন্দা ওলগা। তার ছেলে ভাদিমকে নিয়ে আজকাল থাকতে হচ্ছে বাথরুমে। তার দাবি, বাড়িতে এখন এটিই সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। ওলগা বলেন, আমরা কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছি না। সেখানে শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। বেছে বেছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে টার্গেট করতে পারে রুশ সেনার। এমনকি আশ্রয়কেন্দ্রের পরিবেশ শিশুর মানসিক বিকাশের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

ভাদিল বাড়িতেই ভালো আছে, সে ঘুমাচ্ছে, খাচ্ছে এবং ভাবছে সবকিছু মজার ছলেই হচ্ছে। প্রথম রাতটি ভয়ংকর কাটিয়েছে কিয়েভবাসী। দ্বিতীয় রাতটি তাদের জন্য ছিল তুলনামূলক কম আতঙ্কের। অনেকেই তাই রাত কাটিয়েছেন পাতাল রেল স্টেশনে কিংবা সুউচ্চ ভবনের ভূগর্ভস্থ গ্যারেজে। দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার নাগরিক। উদ্দেশ্য, পাশের প্রতিবেশী দেশ রোমানিয়া ও পোল্যান্ড।

গত দুদিন ধরে এই স্রোতের কারণেই পোল্যান্ডের সিরেত সীমান্ত এলাকায় তৈরি হয়েছে সাড়ে ছয় কিলোমিটারের দীর্ঘ যানজট। ম্যাক্সার টেকনোলজির উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে সেই দৃশ্য। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে পরাশক্তি রাশিয়া। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া হামলা গড়িয়েছে তৃতীয় দিনে।

আক্রমণের দিক থেকে একচ্ছত্র আধিপত্যে রাশিয়ার এই যুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় এবং রক্তক্ষয়ী সংঘাত হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জীঘাংসার বলি হয়েছেন শত শত মানুষ। শনিবার দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া শহরের উপকণ্ঠ থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন আল জাজিরার চার্লস স্ট্র্যাটফোর্ড।

স্থানীয় সময় দুপুর ১টার দিকে তিনি বললেন, ১০ মিনিট আগে এখানকার পরিস্থিতি ছিল চরম আতঙ্কের। একটি ফাইটার জেট মাথার ওপর দিয়েই উড়ে গেল শাঁই শাঁই করে। এ যে কী আতঙ্কের, বলে বোঝানো যাবে না। পরিস্থিতি সত্যিই খুব উত্তেজনাপূর্ণ। এই চেক পয়েন্টে যাওয়ার পথে পরিখা খনন করা দেখেছেন চার্লস।