সুইফট থেকে নিষিদ্ধ রাশিয়া, আতঙ্কে পশ্চিমারাই!

অনেক মতবিরোধের পর আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফট পেমেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমা দেশ ও সংস্থাগুলো। এর মাধ্যমে রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যাবে বলে আশা করছে তারা। তবে সুইফট থেকে রাশিয়াকে সরিয়ে দিয়ে আতঙ্কে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অনেক দেশই। খবর বিবিসি।

সুইফট ব্যাংকিং সিস্টেম

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে আজ রোববার দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র সুইফট থেকে মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার তথ্যটি জানায়। যৌথ ওই বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং দেশটির অন্যান্য শহরগুলোতে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।

এ পদক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পঙ্গু করে দেওয়া যাবে দাবি করে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, সুইফট থেকে নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার ব্যাংকগুলো বিশ্বব্যাপী তাদের বেশিরভাগ আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করতে পারবে না। রাশিয়ার রপ্তানি-আমদানি কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে। পুতিন তার যুদ্ধের তহবিল ব্যবহার করতে পারবেন না। দেশটির পুরো ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে সামগ্রিকভাবে বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে পুতিনের রাশিয়া ্।

জার্মানির ৪০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করা হয় রাশিয়া থেকে

এ ব্যাপারে এক টুইট বার্তায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, আমরা রাশিয়াকে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে সুইফট থেকে রাশিয়ান ব্যাংকগুলোকে বের করে দেওয়া। খুব শিগগির এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হবে।

পশ্চিমা দেশগুলো আশা করছে, সুইফট থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে দেশটির ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং এর ফলে বিশ্বব্যাপী তাদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা কমে যাবে।

বেলজিয়ামভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফট দ্রুত ও নিরাপদে আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রধান ব্যবস্থা। বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশে ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এটি যুক্ত।

এর আগেও সুইফট থেকে রাশিয়াকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু তখন তারা এ বিষয়ে একমত হতে পারেননি। কারণ রাশিয়াকে এ ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলে কেবল রাশিয়াই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, রাশিয়ার সাথে যারা ব্যবসা বাণিজ্যে যুক্ত তারাও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। বিশেষ করে রাশিয়া যেখানে ইউরোপের প্রায় অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ করে, সেখানে সুইফট বন্ধ হয়ে গেলে রাশিয়ার পাশাপাশি এসব দেশও বিপদে পড়বে।

এ নিষেধাজ্ঞার সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রেও ‘কিন্তু’ রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান তেল ও জ্বালানি সরবরাহকারী রাশিয়া। রাশিয়াকে বাদ দিয়ে এ দুটি পণ্যে ইইউর জন্য বিকল্প খুঁজে বের করা সহজ নয়। স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ক্ষেত্রেই বিষয়টি বেশ কঠিন। এসব কারণে প্রথমে ইউরোপীয় দেশগুলো সুইফটের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছিল না।

অন্যদিকে রাশিয়ার অর্থনীতির যে ধস নেমে আসবে বলে পশ্চিমা নেতৃবৃন্দ আশা করছেন, তা সফল না-ও হতে পারে। কারণ পশ্চিমাদের মনোভাব আঁচ করে সুইফটের সমান্তরালে রাশিয়া ইতিমধ্যেই নিজস্ব ব্যাংকিং মেসেজ সিস্টেম তৈরি করে ফেলেছে। ফিনান্সিয়াল ব্যাঙ্কিং মেসেজিং সিস্টেম অফ রাশিয়ার (এফবিএমএস) মাধ্যমে মস্কো নিজের দেশের ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে বার্তা পাঠিয়ে থাকে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, সুইফটে নিষেধাজ্ঞা অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পারবে রাশিয়া। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়নি, এমন দেশগুলোর মাধ্যমেও রাশিয়ার ব্যাংকগুলো অর্থ পরিশোধ করতে পারে।

উল্লেখ্য, এর আগেও ২০১৪ সালে যখন পুতিনের দেশ ক্রিমিয়ার দিকে পা বাড়িয়েছিল তখনও একই দাবিতে সরব হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।