ইউক্রেন সীমান্তে মার খাচ্ছে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা!

রুশ অভিযানের মুখে নিজ দেশেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ইউক্রেনের লাখ লাখ নাগরিক। পাশাপাশি সেখানে চাকরি ও পড়াশুনার সুবাদে যাওয়া অনেক বিদেশি নাগরিক ফিরে যাচ্ছেন নিজ দেশে। অন্য দেশের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করা হলেও অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় নাগরিকদের ওপর সেখানে অত্যাচার চালানো হচ্ছে। ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষীদের হাতেই তারা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, চলমান সংঘাতে ভারতের অতি কৌশলী অবস্থানের কারণেই তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মারধরের শিকার হয় ভারতীয় শিক্ষার্থীরা

ভারতীয় অনেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তাদের সীমান্ত পার হতে দেওয়া হয়নি। ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা বেশ কিছু ভারতীয় ছাত্র অভিযোগ করেছেন, পোল্যান্ড সীমান্তে ইউক্রেনিয়ান রক্ষীরা তাদের হয়রানি করেছে। মেয়েদের পর্যন্ত চুলের মুঠি ধরে টানা হচ্ছে, রড দিয়ে পেটানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

উল্লেখ্য, ইউক্রেনের আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেদেশে বসবাসরত ভারতীয়দের সীমান্ত পার করে পার্শ্ববর্তী দেশে যেতে বলা হয়েছে। হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, পোল্যান্ড থেকে ভারতীয়দের উদ্ধার অপারেশন গঙ্গা নামক একটি কর্মসূচির অধীনে তাদের উদ্ধার করে দেশে পাঠানো হচ্ছে।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক ভিডিও রি-পোস্ট করেন ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। ভিডিওটি ইউক্রেন সীমান্তে তোলা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, সামরিক পোশাক পরিহিত রক্ষীরা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারছে। রাহুল গান্ধি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, সরকারের উচিত অবিলম্বে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারের যথাযথ ব্যবস্থা করা।

ইউক্রেনের একটি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী কেরালার অধিবাসী অ্যাঞ্জেল গত রোববার ভোররাতে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে জানান, পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে শেহায়নিতে শত শত ভারতীয় ছাত্রকে সীমান্ত পেরোতে বাধা দিচ্ছে ইউক্রেনের পুলিশ ও সেনারা। তাদের বেধড়ক পেটানো হচ্ছে, রাস্তায় ফেলে পর্যন্ত মারা হচ্ছে, তাদের লক্ষ্য করে গাড়ি চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং ভয় দেখাতে শূন্যে গুলি ছোঁড়া হয়েছে। তার এ ভিডিও পুরো ভারতে হুলুস্থুল ফেলে দেয়।

পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে বাধ্য হয়ে কিয়েভে ফিরে যাওয়ার পথে মানসী চৌধুরী নামে একজন ছাত্রী ভারতের একটি নিউজ চ্যানেলকে জানান, তাদের ওপর প্রচন্ড অত্যাচার চালানো হয়েছে। ইউক্রেন সীমান্তে ব্যারিকেড দিয়ে ভারতীয়দের আটকে দেওয়া হচ্ছে। মেয়েদের চুলের মুঠি ধরে টানা হচ্ছে, রড দিয়ে মেরে হাত-পা পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

এসব ছাত্রছাত্রী কিয়েভ বা দূর-দূরান্ত থেকে অনেক কষ্ট করে বাসে বা গাড়িতে চেপে সীমান্তে এসেছিলেন। অনেককে সীমান্ত অবধি পৌঁছতে বিশ-তিরিশ মাইল হাঁটতেও হয়েছে। তাদের মধ্যে খুব কমজনই সীমান্ত পেরিয়ে পোল্যান্ড, রোমানিয়া বা হাঙ্গেরিতে ঢুকতে পেরেছেন। বেশিরভাগকেই প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে আধপেটা খেয়ে খোলা আকাশের নিচে কাটাতে হচ্ছে।

কমল ভোরা নামে আরেকজন ছাত্রী ফেসবুকে জানিয়েছেন, রোমানিয়া সীমান্তেও সে দেশের সেনা তার বন্ধুদের মারধর করছে, তাদের সঙ্গে অসভ্যতা করা হয়েছে, এমন ভিডিও তিনি হাতে পেয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারকে বিমান কিংবা সেনা পাঠিয়ে যে কোনোভাবে তাদের উদ্ধারের আবেদন জানান।

পাঞ্জাবের একজন ছাত্র গুরদীপ সিং জানান, নাইজেরিয়া বা আফ্রিকার অন্যান্য দেশের ছাত্রদের সীমান্ত পেরোতে দেওয়া হলেও শুধু ভারতীয়দেরই আটকানো হচ্ছে। কিয়েভে এখনও বেশ কয়েক হাজার ভারতীয় আটকা রয়েছেন, তাদের অসহায় অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে।

এদিকে পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তে ভারতীয়দের যে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, তা স্বীকার করেছেন পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। গত রোববার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে ইউক্রেন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবে ভারত বেশ কৌশলী অবস্থান নেয়। কোনো পক্ষে ভোট না দিয়ে মোদি সরকার জানায় ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে তারা অত্যন্ত ‘উদ্বিগ্ন’। এ বৈরিতা নিরসনে সংলাপই হচ্ছে একমাত্র সমাধান।

যদিও এ প্রস্তাব রাশিয়ার ভেটোতেই পাস হতে পারেনি। তারপরও কে কোন পক্ষে দাঁড়াচ্ছে তা দেখার জন্য এ ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেখানে ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া কাউকেই অখুশি করতে চায়নি। বরং রাশিয়ার বিপক্ষে না দাঁড়ানোর কারণে পুতিনের পক্ষ থেকে অভিনন্দিত হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফলে স্বভাবতই ক্ষিপ্ত হয়েছে ইউক্রেন। আর এর জেরেই ভারতীয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হেনস্তা হতে হয়েছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।