আফগানিস্তানে কিডনি গ্রাম!

অনাহারে, অর্ধাহারে আর কতদিন থাকা যায়? তালেবান আফগানিস্তান দখল করার পর থেকেই অর্থনৈতিক দুর্দশায় ভুগছে দেশটি। বহু আফগান এখন বেকার। ঋণে জর্জরিত হয়ে সন্তানদের ভরণ-পোষণে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এ কারণেই কিডনি বিক্রি শুরু করেছেন অনেকেই। কিডনি বেচাকেনায় প্রসিদ্ধি পাওয়ায় একটি গ্রামের নাম হয়েছে ‘কিডনি গ্রাম’। এএফপি, আল জাজিরা। 

আফগানিস্তানের ‘এক কিডনি গ্রাম’, ছবি- আল জাজিরা

অভাবের তাড়নায় আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতে কিডনি বিক্রির প্রবণতা বেশি। প্রতিটি কিডনি বিক্রি হচ্ছে গড়ে সর্বোচ্চ দেড় হাজার মার্কিন ডলারে (১ লাখ ৩০ হাজার টাকা)।

দরকষাকষিতে ২৫ হাজার টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় প্রতিটি কিডনি। ট্রান্সপ্লান্টের খরচ বহন করেন ক্রেতা। মাজার-ই-শরীফ এবং হেরাত হাসপাতালের সার্জনরা বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

মাজার-ই-শরীফ শহরের একটি হাসপাতালের সাবেক শীর্ষ সার্জন মোহাম্মদ ওয়াকিল মতিন বলেন, কোনো আইন না থাকায় কিডনিদানের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অন্য একজন সার্জন মোহাম্মদ বাসির ওসমানী নিশ্চিত করেছেন, কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য দাতার লিখিত সম্মতিপত্র নেওয়া এবং তাদের কথোপকথনের ভিডিও রেকর্ড করা হয়।

‘কিডনি গ্রাম’ নামে খ্যাত হয়ে উঠা সায়শানবা গ্রামের যুবক নুরুদ্দিন বললেন, আমি আমার সন্তানদের বাঁচাতে একটি অঙ্গ উৎসর্গ করব সমস্যা কী? আমার কাছে অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। তিনি চাকরি করতেন একটি কারখানায়।

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তার বেতন তিন হাজার আফগানি কমিয়ে দেওয়ায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন, ভেবেছিলেন অন্য কোথাও আরো ভালো বেতনে চাকরি পাবেন। এখন বেকারত্বে ধুঁকছেন। কিডনি বিক্রির পর অর্থনৈতিক সমস্যার সাময়িক সমাধান হলেও শারীরিকভাবে প্রায় অক্ষম হয়ে পড়েছেন নুরুদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘আমি আর কাজ করতে পারি না। আমি ব্যথায় অস্থির হয়ে যাই, ভারী কিছু তুলতে পারি না। তার ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে বাধ্য হয়ে রাস্তার মোড়ে জুতা পালিশ করে যা পায়, বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয়। কিডনি গ্রামে এক পরিবারের পাঁচ ভাই গত চার বছরে প্রত্যেকে একটি করে কিডনি বিক্রি করেছেন। তাদের একজন গোলাম নবি বলেন, ‘আমরা এখনো ঋণগ্রস্ত, আগের মতোই দরিদ্র।’

কিডনি বিক্রি করতে হাসপাতালের এক কর্মচারীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তিন সন্তানের একজন মা আজিজা। তিনি চোখের পানি সংবরণ করতে না পেরে বলেন, যদি আমার কিডনি বিক্রি না করতে পারি, তবে আমার এক বছর বয়সী মেয়েটিকে বিক্রি করতে বাধ্য হব। আমার বাচ্চারা রাস্তায় ভিক্ষা করে ঘুরে বেড়ায়।