ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ: যেসব জায়গায় এগিয়ে রুশ বাহিনী

এক সপ্তাহ হচ্ছে ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। চলমান সামরিক অভিযানে রুশ সেনারা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে ঠিকই, কিন্তু এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং অন্যান্য বড় শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সংক্ষেপে সাত দিনের আক্রমণের সবশেষ চিত্র নিম্নরূপ:

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, যেসব জায়গায় এগিয়ে রুশ বাহিনী, ছবি-বিবিসি

রাশিয়ার প্যারাট্রুপাররা ইউক্রেনের অবরুদ্ধ দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে অবতরণ করেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন বন্দর দখল করার দাবি করেছে। কিয়েভ শহরে পরিকল্পিত বিমান হামলার আগে রাশিয়ার পক্ষ থেকে জনগণকে শহর ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিয়েভের ঠিক উত্তরে রাশিয়ার সাঁজোয়া যানের একটি ৪০ মাইল দীর্ঘ কনভয় রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে তিনটি প্রধান দিক তথা উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব থেকে প্রতিবেশী দেশটিতে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। তারপর থেকে রুশ সৈন্যরা ইউক্রেনে হামলা বৃদ্ধি করেছে। দেশটি জুড়ে থাকা বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা এবং আর্টিলারি হামলা করছে পুতিন বাহিনী।

গোলাপি চিহ্নিত এলাকাগুলো রাশিয়ার দখলে

কিয়েভের জন্য লড়াই 

রাশিয়ান সৈন্যরা উত্তর দিক থেকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের অগ্রগতি মন্থর হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, স্যাটেলাইট ইমেজে চিত্রিত হওয়া ৪০ মাইল দীর্ঘ সমরবহর নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে কিয়েভে আকাশ থেকে অনেক হামলা চালানো হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়ান সৈন্যরা সতর্কতা জারির কিছু সময়ের মধ্যেই কিয়েভের টিভি টাওয়ারে হামলা চালায়। এতে পাঁচ বেসামরিক লোক নিহত হয় এবং কিছু সময়ের জন্য সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।

ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার বা আইএসডব্লিউ এর তথ্য অনুসারে, হোস্টোমেল বিমানবন্দরটি ভয়ঙ্কর লড়াইয়ের দৃশ্য এবং গত কয়েক দিনে সেখানে বেশ কয়েকবার হামলার ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

রাশিয়ান বাহিনী শুক্রবার কিয়েভের উপকণ্ঠে ওবোলোনের কাছে পৌঁছে এবং সপ্তাহান্তে উত্তর-পশ্চিম কিয়েভে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান রাজধানীতে দেখা যায়নি।

উত্তর দিক থেকে হামলা

রাশিয়ান সৈন্যরা কিয়েভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তারা সেনকিভকাতে ইউক্রেন, রাশিয়া এবং বেলারুশের মধ্যে ত্রিমুখী সংযোগস্থলে সীমান্ত অতিক্রম করে ইউক্রেনে প্রবেশ করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার বলেছে যে, রাশিয়ার স্থল বাহিনী এখনও কিয়েভ থেকে ৩০ কিলোমিটারের বেশি দূরে রয়েছে।

ট্যাংক এবং একাধিক রকেট লঞ্চার সিস্টেমসহ সাঁজোয়া যানগুলো চেরনিহিভের দিকে চলে গেছে, যেখানে তারা ইউক্রেনের শক্তিশালী বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছে। শহরটিতে রাশিয়ান সৈন্যরা ভারী গোলা ছুড়েছে, তবে ইউক্রেনের হাতেই রয়ে গেছে শহরটির নিয়ন্ত্রণ। অপরদিকে, আক্রমণ আরও জোরালো হয়েছে চেরনোবিল হয়ে ডিনিপার নদীর পশ্চিম দিকে এবং কিয়েভের উত্তর এবং পশ্চিমে একটি বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রুশ বাহিনী।

পূর্ব দিক থেকে আক্রমণ

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে যে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শহরটিতে ভারী বিমান ও বোমা হামলার পর রাশিয়ার প্যারাট্রুপাররা এখন খারকিভে অবতরণ করেছে। বুধবার শহরটির মেয়র বলেছেন যে, ভারী গোলাগুলিতে কমপক্ষে ২১ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

রোববার রুশ বাহিনী প্রথমে খারকিভ আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়, তবে ইউক্রেনের সেনাদের পক্ষ থেকে আক্রমণ প্রতিহত করা হয়। ইউক্রেনীয় সৈন্যরা রাস্তার কোণে রকেট-চালিত গ্রেনেড নিক্ষেপ করছে এবং রাশিয়ান সৈন্যরা পায়ে হেঁটে, সাঁজোয়া যানের পেছনে যাচ্ছেন— এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে।

বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনের পূর্বঞ্চলীয় দোনেস্কের চারপাশে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে, যেখানে পশ্চিম রাশিয়ার বেলগোরোড থেকে সৈন্যদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে।

দোনেটস্ক এবং লুহানস্কে প্রায় ১৫ হাজার রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী রয়েছে বলে মনে করা হয়, যারা রাশিয়ার অগ্রযাত্রায় সাহায্য করছে। যদিও ইউক্রেন মনে করে, রুশপন্থী এই বিদ্রোহীর সংখ্যা প্রকৃত অর্থে আরো বেশি হবে। এ ছাড়া সুমির চারপাশ ঘিরেও চলছে লড়াই।

দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ

রাশিয়ান বাহিনী ক্রিমিয়া থেকে দ্রুত অগ্রসর হয়েছে এবং পশ্চিমে খেরসন এবং পূর্বদিকে মারিওপলের দিকে তাদের সেনাদের পাঠিয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রুশ সৈন্যরা খেরসনে প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে, তারা বুধবার সকালে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরটি দখল করেছে।

ইউক্রেনের প্রধান বাণিজ্য বন্দর মারিওপলের মেয়র বলেছিলেন যে, রাশিয়ান সৈন্যরা শহরটি ঘেরাও করার চেষ্টা করার কারণে সেখানে ভারী গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। শহরটির পূর্ব দিকে অগ্রসর হলে ক্রিমিয়া এবং দোনেটস্ক এবং লুহানস্কে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে থাকা অঞ্চলের মধ্যে একটি স্থল সংযোগ তৈরি হবে।

আক্রমণের আগে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাশিয়া ইউক্রেনের উপকূলে কৃষ্ণ সাগর এবং আজভ সাগরে যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান এবং কর্মী মোতায়েন করতে সক্ষম অবতরণকারী জাহাজের একটি বড় সমাবেশ করেছে।

সীমান্ত পেরিয়ে পালাচ্ছে লাখ লাখ ইউক্রেনিয়ান

জাতিসংঘের মতে, রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি বেসামরিক মানুষ পালিয়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ অনুমান করছে, রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে ৪ মিলিয়ন বা ৪০ লাখ পর্যন্ত মানুষ দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

শরণার্থীরা সীমান্ত অতিক্রম করে পশ্চিমে প্রতিবেশী দেশ— পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি এবং মলদোভায় যাচ্ছেন।