ভিনদেশে ‘রাজার হালে’ ইউক্রেনের শরণার্থীরা!

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিসা ছাড়াই তিন মাস থাকতে পারবেন ইউক্রেনের শরণার্থীরা। আশ্রয় প্রার্থনা ছাড়াই সংশ্লিষ্ট দেশে শরণার্থীরা থাকতে পারবেন ২ বছর পর্যন্ত।

ইউক্রেনের শরণার্থী

দেশছাড়া এ শরণার্থীরা ইউরোপের দেশগুলোতে থাকবেন অনেকটা ‘রাজার হালে’। শরণার্থীদের উষ্ণ অভ্যর্থনায় বুকে টেনে নিচ্ছে হাঙ্গেরিসহ অনেক দেশ। প্রবেশের পরই চাকরি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পর্তুগাল। রুশ আক্রমণে বুধবারই দেশ থেকে পালিয়েছেন প্রায় ২ লাখ ইউক্রেনীয়। এএফপি।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য মতে, বুধবার পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন ৮ লাখ ৩৬ হাজার শরণার্থী। মঙ্গলবার এ সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৭৭ হাজার। শরণার্থীদের দেশত্যাগ অনেকটাই নির্ভয় করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বুধবার ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লিয়েন এক বিবৃতিতে বলেন, নিরীহ মানুষগুলোর সুরক্ষার প্রয়োজনে পাশে আছে ইইউ। পুতিনের বোমা থেকে বাঁচতে যারা পালাচ্ছেন আমরা তাদের সবাইকে ইউরোপে স্বাগত জানাই। এ অঞ্চল তাদের জন্য নিরাপদ বাড়ি।

ইইউর পরিকল্পনা অনুযায়ী শরণার্থীদের পরিবারের সদস্যদের দুই বছরের জন্য আবাসিক অনুমতি দেওয়া হবে, সেই সঙ্গে তাদের থাকবে শিক্ষা ও কাজের অধিকার। পরিকল্পনাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীদের বৈঠকে পেশ করা হবে। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে অন্তত ১৫ সদস্যের সম্মতি থাকতে হবে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের ফলে ধারণা করা হচ্ছে ৫০ লাখ ইউক্রেনীয় বাস্তুচ্যুত হবে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অনেক দেশ ইউক্রেনের শরণার্থীর জন্য সীমানা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ব্যাপকহারে শরণার্থী গ্রহণ করছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী যুদ্ধ আতঙ্কে পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয় নাগরিকদের ইউরোপীয় দেশগুলোতে প্রবেশ ও ভিসার প্রয়োজনীয়তা শিথিল করা হয়েছে।

ইউক্রেনে হামলার শুরু থেকেই পোলান্ড সবচেয়ে বেশি শরণার্থী গ্রহণ করেছে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, ইউক্রেন থেকে পোলান্ডে যে কেউ প্রবেশ করতে পারবে। কোনো পাসপোর্ট-ভিসা লাগবে না। ইউক্রেনের নাগরিকদের জন্য মানবিক কারণে রোমানিয়াও তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে।

কেবল বায়োমেট্রিক পদ্ধতি অথবা সাধারণ পাসপোর্টে ইউক্রনীয়রা রোমানিয়ায় ঢুকতে পারবেন। আয়ারল্যান্ড ইউক্রেনীয়দের জন্য তাদের ভিসা তুলে নিয়েছে। মলদোভা সরকারও ইউক্রেনের নাগরিকদের বিনা পাসপোর্টে গ্রহণ করছে। কেবল জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে পারলেই  প্রবেশে সুযোগ দিচ্ছে। এছাড়া অস্থায়ীভাবে শরণার্থী গ্রহণ করছে স্লোভাকিয়াও।

দেশটি বিনা বিবেচনায় ইউক্রেনের নাগরিকদের ৯০ দিনের জন্য আশ্রয়ের সুযোগ দিয়েছে। ইউক্রেনীয়দের জন্য যুক্তরাজ্যও কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। ইউক্রেনের নাগরিকদের স্থান দেওয়ার পাশাপাশি চাকরি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পর্তুগাল।

শরণার্থীবিমুখ বলে খ্যাত হাঙ্গেরি। সেই দেশটিই যুদ্ধপীড়িত ইউক্রেনের শরণার্থীদের স্থান দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ইউক্রেনের শরণার্থী স্থান দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড। হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করেছে ১ লাখের বেশি শরণার্থী। শুধু তাই নয়, শরণার্থীদের বরণ করতে হাঙ্গেরিয়ানদের প্রস্তুতি তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো।

বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শ্রেণিকক্ষ, বিভিন্ন স্পোর্টস হলগুলো বরাদ্দ রাখা হয়েছে ‘অতিথিদের’ জন্য। এ জন্য এসব স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে এগুলোর প্রবেশমুখেই। শরণার্থীদের বহন করে আনার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাস, মিনিবাস এবং প্রাইভেট কার। তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা দিতে প্রবেশদ্বারগুলোতে অপেক্ষামান থাকে অনুবাদকসহ স্বেচ্ছাসেবকদের দল।

শরণার্থীদের আগমনকে সমর্থন দিতে ইউক্রেনের পাঁচটি সীমান্ত ক্রসিং বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আলাদা আলাদা দাতব্য সংস্থাকে। সংস্থাগুলো ব্যাপটিস্ট চার্চের মাধ্যমে ও অর্থায়নে পরিচালিত হয়। তারাই উষ্ণ এবং সুসংগঠিতভাবে শরণার্থীদের স্থানান্তরের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

সেখানকার সাধারণ মানুষ এই ব্যাপটিস্ট চার্চগুলোকে অনুদান দিয়ে থাকে। এখনো প্রতিদিন ৩ হাজারের বেশি মহিলা ও শিশু সীমান্ত ক্রসিং পেরিয়ে হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করছে।