পুতিনের সম্পদ খুঁজেই পাচ্ছে না পশ্চিমারা!

পুতিনের সম্পদ কত এখনও স্পষ্ট করে জানে না আমেরিকা। বিশ্লেষকদের মত, রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযান ঠেকাতে হলে পুতিনকে ধরতে হবে। আর পুতিনকে ধরতে হলে তার সম্পদ জব্দ করতে হবে। পশ্চিমা নেতারাও সেটাই চাইছেন। কিন্তু একটাই সমস্যা, পুতিনের সম্পদের কোনো হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না। সিএনএন।

ভ্লাদিমির পুতিন

কয়েক মাসের হুমকি-ধমকি ও সংকট সমাধানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে গত সপ্তাহে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। মিত্র দেশের ওপর পুতিনের এই আক্রমণের পর পশ্চিমা জবাবও ছিল ত্বরিত। গত এক সপ্তাহ ধরেই রাশিয়ার ওপর একের পর এক ‘কঠোর নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, এসব নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার তেমন কিছুই হবে না। পুতিনকেও ঠেকানো যাবে না।

ইউক্রেনে অভিযান শুরুর একদিন পরই রাশিয়ার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপরও নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিদেশি কোনো নেতার ব্যক্তিগত সম্পদের ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমাদের জন্য বিরল এক ঘটনা। কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞায় কী প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ পুতিনকে কোটি কোটি ডলারের মালিক বলে মনে করা হলেও সেসব সম্পদের পরিমাণ কত কিংবা সেগুলো কোথায় রয়েছে তেমন কোনো তথ্যই নেই পশ্চিমাদের কাছে।

ভ্লাদিমির পুতিন

প্রতিবেদন মতে, ২০১৬ সালে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ কর্তৃক প্রকাশিত দুর্নীতিবিষয়ক নথি পানামা পেপারসে প্রথমবারের মতো পুতিনের নাম উঠে আসে। এতে বলা হয়, দেশে-বিদেশে পুতিনের বহু সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদের বেশিরভাগই ভূসম্পত্তি যা তার কাছের আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা চালিত জটিল সব আর্থিক প্রকল্পে বিনিয়োগ আকারে রয়েছে।

নিজের এসব সম্পদের কোনো কাগজপত্রও রাখেননি পুতিন। তবে সে সময় পানামা পেপারসে নিজের বিরুদ্ধে আসা দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে দেন পুতিন। তার বক্তব্য ছিল, ‘রাশিয়াকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বিরোধীরা’।

রাশিয়ার সরকারি হিসাব-নিকাশের খাতা দেখলে পুতিনকে নিতান্তই একজন অনুগত আমলার মতোই মনে হয়। প্রতি বছর নিয়ম করেই সরকারের করবিভাগের কাছে সম্পদের আয়-বিবরণী দাখিল করে ক্রেমলিন। ২০১৮ সালে দাখিলকৃত আয়-বিবরণী অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয় ছিল এক লাখ ৪০ হাজার ডলার।

সম্পদের মধ্যে ছিল সেইন্ট পিটারসবার্গ শহরে ৮০০ স্কয়ার ফুটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট, ২০০ স্কয়ার ফুটের গ্যারেজ, সোভিয়েত আমলের তিনটি গাড়ি ও ১৬০০ স্কয়ার ফুটের আরেকটি অ্যাপার্টমেন্ট। পরবর্তী বছরগুলোতেও পুতিনের সম্পদের হিসাবে প্রায় একই বিবরণী উঠে এসেছে। কিন্তু পুতিনের এই আয় বিবরণীর তথ্যকে অনেকেই ‘মিথ্যা’ মনে করেন।

বিশেষ করে পশ্চিমে গণমাধ্যমে প্রায়ই শোনা যায়, পুতিন কোটি কোটি ডলার সম্পদের মালিক। এমনকি এমনও দাবি করা হয় যে ‘পুতিনই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।’ ২০১৭ সালে ফরচুর ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিনের কাছে অন্তত দুই হাজার কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে। কিন্তু এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেওয়া হয়নি।

পুতিনের সম্পদ নিয়ে এমন আরও অনেক গল্প সম্প্রতি শোনা গেছে। গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা আলেক্সাই নাভালনির শেয়ার করা একটি ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওজুড়ে দেখানো হয় বিশাল একটি প্রাসাদ। ওই ভিডিওতে নাভালনি দাবি করেন, প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার স্কয়ার ফুটের প্রাসাদটির মালিক পুতিন। যার মূল্য ১৩৭ কোটি ডলার।

‘হেলথ’ নামে রাশিয়ার একটি রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের টাকা সরিয়ে কৃষ্ণসাগরের তীরে বিলাসবহুল প্রাসাদটি তৈরি করা হয়েছে এবং পুতিনকে ‘ঘুষ’ হিসাবে দেওয়া হয়েছে। তবে ক্রেমলিন এসব অস্বীকার করেছে।

আরও প্রচলিত আছে, পুতিনের মালিকানায় আছে আরও অন্তত ১৯টি বাড়ি, ৭০০ গাড়ি এবং ৪৮টি উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার। এর মধ্যে একটি উড়োজাহাজের দাম ৭১ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যাকে বলা হয়, ‘উড়ন্ত ক্রেমলিন’। এটির বাথরুম সোনা দিয়ে তৈরি। আর আছে ১০ কোটি ডলার মূল্যের একটি সুপার ইয়ট।