৫ বন্ধুর নির্মম মৃত্যু, পঙ্গু ড্রাইভার চালাচ্ছিল ট্রাক

ঘটনা গত ২১ মার্চের। পাঁচ বন্ধু মিলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিল একটি প্রাইভেটকারে। আনুমানিক ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের আধুনগর নামক স্থানে পৌঁছালে রাস্তার বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি ডাম্পার ট্রাকের সাথে প্রাইভেটকারটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। প্রাইভেটকারে থাকা পাঁচজনের মধ্যে চারজনই ঘটনাস্থলেই নির্মমভাবে মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় আরেকজন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে।

দুর্ঘটনায় নিহত ৫ বন্ধু

এ ঘটনায় ঘাতক সেই ট্রাকের চালককে ১৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। তার নাম মো. রিপন (৩১)। শারীরিকভাবে সে অযোগ্য ও পঙ্গু। তার ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই।

ঘটনা সংগঠিত হওয়ার পর চালক মো. রিপন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব জানতে পারে, রিপন চট্টগ্রাম মহানগরীর ডবলমুড়িং থানাধীন রশিদ বিল্ডিং এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। আজ ২২ মার্চ বিকেলে ওই এলাকা থেকে রিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর সহকারী পরিচালক এএসপি ইমরান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গ্রেপ্তার ট্রাক ড্রাইভার রিপন মিয়া

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, রিপন ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম আসে এবং নিমতলা বিশ্বরোডে বসবাস শুরু করে। প্রথমে সে গাড়ির হেলপার হিসেবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। ২০০৪ সাল হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সে গাড়ির হেলপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ২০০৬ সালে হেলপার থাকা অবস্থায় সে মারাত্মক দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এতে তার ডান পা পঙ্গু হয়ে যায় এবং উক্ত পায়ের শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলে।

২০১৫ সালে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিআরটিএ তাকে হালকা যানবাহনের লাইসেন্স দেয়। পরবর্তীতে ভারী যানবাহনের আবেদন করলে তার শারীরিক অযোগ্যতার কারণে তাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। তবুও সে নিয়মিত ভারী যানবাহন চালিয়ে যাচ্ছিল।

গ্রেপ্তার ট্রাক ড্রাইভার রিপন মিয়ার পায়ের অবস্থা

র‍্যাব আরও জানায়, ঘটনার দিন ওই ডাম্পার ট্রাকের মূল চালক ছিল মো. নূরনবী। গাড়িটি নিয়ে তার কক্সবাজার জেলার পেকুয়া মেরিন ড্রাইভ ও ফোরলেনের চলমান সড়ক নির্মাণের কাজে পাথর বোঝাই করে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নূরনবী টানা ১০ দিন নির্ঘুমের দরুন ক্লান্ত থাকায়, গাড়িটি চালানোর দায়িত্ব মালিকের অনুমতি সাপেক্ষে মো. রিপনকে দেওয়া হয়। রিপন কোম্পানির ভারী ডাম্পার ট্রাক চালানোর স্থায়ী কোনো ড্রাইভার নয় বা এই ধরনের গাড়ি চালানোর জন্য ভারী লাইসেন্স অথবা পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তাকে গাড়ি চালাতে দেওয়া হয়।

অতঃপর সে গাড়িটি নিয়ে পেকুয়ায় পাথর আনলোড করে আসার সময় লোহাগাড়া থানার আধুনগর বাজারে বেপরোয়া ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পৌঁছালে অপরপ্রান্ত হতে নিয়মিত গতিতে আসা প্রাইভেটকারকে সজোরে ধাক্কা দেয়।

প্রথম ধাক্কায় প্রাইভেটকারটি থেমে গেলেও রিপনের ডান পায়ে শক্তি কম থাকায় সে ঠিকমতো ব্রেক ধরতে পারেনি। এতে প্রাইভেটকারের উপর ট্রাকটি সম্পূর্ণ উঠে যায়। গাড়িতে সেদিন কোনো হেলপারও ছিল না।