মিত্ররাই ইমরানের ‘ট্রাম্প কার্ড’, নেপথ্যে ৫ কারণ

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন তেহরিক-ই-ইনসাফ, পিটিআইয়ে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে। দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা যোগ দিয়েছেন বিরোধী দলে। আগামীকাল শুক্রবার, ২৫ মার্চ পাক সংসদের নিম্নকক্ষে অধিবেশন ডেকেছন স্পিকার আসাদ কায়সার। সক্রিয় হয়েছে সর্বোচ্চ আদালত, মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ভিন্নমতাবলম্বীরাও। সরকারি দলের নেতারা পক্ষপাতদুষ্ট বক্তব্য দিচ্ছেন, অসংযত মন্তব্য আছে মুখপাত্রদের কাছ থেকেও। সব মিলিয়ে দেশটির রাজনীতি এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।

ইমরান খান, ফাইল ছবি

ডন জানায়, পিটিআই সরকারের ভবিষ্যৎ এখন ‘ট্রাপিজের তারের ওপর দাঁড়িয়ে’ আছে, যার পেছনে সত্যিকারের ‘ট্রাম্প কার্ড’ হয়ে উঠেছে মিত্ররা। তথাকথিত এসব মিত্রদের ভেতরে যে খেলা চলছে, তা কেউ জানে না। সব পক্ষই ট্রাম্প কার্ড ধরে রাখার দাবি করলেও মিত্রদের ওপরই নির্ভর করছে সরকারের টিকে থাকা বা পতন ঘটা।

পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কিউ), মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) এবং বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) জোটের মিত্ররা এখন কীভাবে খেলবে, সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। তারা বর্তমানে অনিশ্চিত রাজনৈতিক ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে, আর ক্ষমতাসীন দল ও তার সমর্থকেরা কাটাচ্ছেন নির্ঘুম রাত।

শেহবাজ শরিফ, ফাইল ছবি

একটু এদিক-ওদিক হলেই তা সম্ভবত শেষ পরিণতি বয়ে আনবে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার সরকারের জন্য। দুশ্চিন্তায় থাকা মিত্ররা নিজেদের সুবিধা নিশ্চিত করতে কোন পথে হাঁটবে, তা বোঝাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন একভাবে চলার কারণে তারা সহজেই বিরোধীদের প্ররোচনায় পড়তে পারে।

শেষ পর্যন্ত ইমরান সরকারের মিত্ররা কোন পক্ষকে সমর্থন করবে, সেটি দেখতে হলে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। আগামী ৭ দিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান থাকছেন, নাকি পিএমএল-এন প্রধান শেহবাজ শরীফের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি হবে। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি কারণ বিবেচনা করা যেতে পারে।

১. স্পিকার আসাদ কায়সারের আহ্বান করা ২৫ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে অনাস্থা ভোট প্রস্তাব তুলবে বিরোধীরা। স্পিকার এর অনুমতি না দিলে এবং পরের সপ্তাহের জন্য অধিবেশন স্থগিত করলে ভোট পিছিয়ে যাবে। বিরোধীরা তাদের অবস্থানে অনড় থাকায় এ নিয়ে আইনি লড়াই শুরু হবে।

২. পিটিআই সরকারের ভোটে জেতার সম্ভাবনা ক্ষীণ, এই সত্য মেনে নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীনরা। সে জন্য জনসমর্থন আদায়ে ২৭ মার্চ রাজধানীতে বিশাল সবাবেশ ডেকেছে তারা, সেখান থেকে সবাইকে বার্তা দেওয়ার কথা বলেছেন ইমরান খান। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স কিছুটা আশার আলো দেখাতে পারে সরকারকে।

৩. রেড জোনের সূত্রমতে, মিত্রদের সমর্থন পেলে পিটিআইয়ের ক্ষুব্ধ সদস্যদের কৌশলে ভোটদান থেকে বিরত রাখতে পারে বিরোধীরা। এতে সহজেই দেশটির ৩৪২ সদস্যের জাতীয় পরিষদ, এমএনএ-এর ১৭২ জনের সমর্থন পেতে পারে তারা। অনাস্থা প্রস্তাব সফল করতে হলে বিরোধী দলগুলোকে ন্যুনতম ১৭২ জন এমএনএ’র সমর্থন পেতে হবে।

৪. এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পিটিআইয়ের কাছে ভোট পরবর্তী কয়েক দিনের জন্য কিছু বিকল্প আছে। তা হলো- ব্যাপক বিতর্কের ঝুঁকি থাকলেও একজন শক্তিশালী অফিস হোল্ডারকে ডি-নোটিফাই করা, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে উসমান বুজদারকে অপসারণ করা এবং তার স্থানে তারিনদের কাছে গ্রহণযোগ্য কাউকে ক্ষমতায় বসানো, দেরি হয়ে গেলেও একটি আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব দেওয়া, ২৭ মার্চের সমাবেশে নতুন আখ্যান সামনে আনা এবং বিরোধীদের লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক প্রচারণা বাড়ানো।

৫. আগামী ২৭ মার্চ পিটিআইয়ের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের সঙ্গে অশান্তির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না, সেটি হলেও অনাস্থা ভোট হবে। তবে সাংবিধানিক পদ্ধতি মেনে এগিয়ে যেতে হবে সবাইকে।