আপনি পড়ছেন

পাকিস্তানের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার হাতে ট্রাম্প কার্ড রয়েছে বলে বিরোধীদের পাল্টা হুমকি দিচ্ছেন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে বহুল আলোচিত এই ট্রাম্প কার্ড। ইমরান খানের ট্রাম্প কার্ড আসলে কি তা নিয়ে গুঞ্জন চলছে নানা মহলে। কি আছে ইমরানের ট্রাম্প কার্ডে?

imran khan pakistan trump cardপাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, ফাইল ছবি

ট্রাম্প কার্ড বলতে ইমরান খান সেনাবাহিনীতে রদবদল বুঝিয়েছেন বলে অনেকের ধারণা। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর অপরিসীম প্রভাবের কথা সুবিদিত। তবে এই মূহূর্তে সেনাবাহিনীতে রদবদলের কোনো ঝুঁকি ইমরান খান নিবেন বলে মনে হয় না। সেনাবাহিনী প্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে তার বোঝাপড়া যথেষ্ট ভালো। চীনের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর যে ইন্টার-অপারেবিলিটি সহযোগিতা ও চর্চা চলমান রয়েছে, তার অন্যতম স্থপতি এই জেনারেল। এ হিসাব থেকেও তাকে হঠাৎ সরানোর সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তাছাড়া ইমরান খানের প্রতি বাজওয়ার দৃশ্যমান আনুগত্যও রয়েছে। গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জেনারেল বাজওয়া বলেছেন, আপনারা যদি মনে করেন, এই দেশে আমার কথায় সবকিছু হয়, তাহলে আপনাদের ইমরান খান সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।

ইমরান খানের ট্রাম্প কার্ডে সেনাবাহিনী অথবা অন্য কোথাও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের কিছু নেই বলে পাকিস্তানের পরিকল্পনা মন্ত্রী আসাদ উমর ও তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন। দুই মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের এ বক্তব্য সত্য ধরলে সেনাবাহিনীতে কোনো রদবদলের সম্ভাবনা ও সংশ্লিষ্টতা নাকচ করতেই হয়। একইভাবে নাকচ করতে হয় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদারকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি।

দলের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচিত পিটিআই নেতা উসমান বুজদারকে অনেকটা ইমরান খান একাই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসান ২০১৮ সালে। মঙ্গলবার হঠাৎ করেই ইমরান খান তাকে পদত্যাগ করতে বলেন। ইমরান খানের সমর্থকদের অনেকে বুজদারকে সরিয়ে দেওয়ার খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। উসমান বুজদার ‘ঘরের শত্রু বিভীষণের’ ভূমিকায় ছিলেন বলেও অনেকের অভিমত। বুজদারকে সরিয়ে দেওয়ার একই দিনে পাকিস্তান সরকার পাঞ্জাব প্রদেশকে ভেঙে সাউথ পাঞ্জাব নামে নতুন একটি প্রদেশ গঠনের প্রস্তাব পার্লামেন্টে উপস্থাপন করে। পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রদেশের প্রভাবশালী মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া এবং ওই প্রদেশ ভেঙে নতুন প্রদেশ গড়ার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতাসীন পিটিআই দলের ভেতরে-বাইরে নানা ক্ষমতা-বলয়ে তারতম্য ঘটাবে। একইদিনে এ দুটি সিদ্ধান্ত যদি ট্রাম্প কার্ড হয়ে থাকে, তবে ইমরান খান সেটা এরইমধ্যে দেখিয়ে ফেলেছেন। সেক্ষেত্রে দেখানোর মতো বাকি থাকলো কি?

ইমরান খান ট্রাম্প কার্ড বলতে কি বুঝিয়েছেন- সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনাস্থা প্রস্তাবের ইতিবৃত্ত জানা যাক। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। ঘটনাক্রমে সেদিন পূর্বনির্ধারিত সফরে মস্কো যান ইমরান খান। রাশিয়ার অভিযানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো পাকিস্তানও ভোটদানে বিরত থাকে। যদিও ওই প্রস্তাবের পক্ষে পাকিস্তানকে ভোটদানের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেন ইসলামাবাদে নিযুক্ত কয়েকজন ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূত। ইমরান খান এজন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি এক জনসভায় ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের কঠোর সমালোচনা করেন। এর ঠিক একদিনের মাথায় আরেক জনসভায় পাকিস্তানের অন্যতম বিরোধী দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম-এর নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান ইমরান খানের বক্তব্যের সমালোচনা করে তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ মার্চ বিরোধী দলগুলো পার্লামেন্ট স্পিকার আসাদ কায়সারের কার্যালয়ে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিতে যান। তাকে সেখানে না পেয়ে পার্লামেন্ট সচিবালয়ে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়।

বিরোধী দলগুলো অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয়ার পর ইমরান খান তার সমর্থকদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য ইসলামাবাদে সমাবেশ আহ্বান করেন। ২৭ মার্চ ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তৃতাকালে ইমরান খান তার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ রয়েছে জানিয়ে একটি চিঠি প্রদর্শন করেন। এর আগে বেলুচিস্তানে এক সমাবেশে ইমরান খান বিরোধীদের কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের জনগণ কখনো চোরদের পক্ষ নিবে না। তার সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও ইমরান অভিযোগ করেন।

এই ‘দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্র’ বিষয়টিকে ইমরান খানের ট্রাম্প কার্ড ধরলে ইসলামাবাদের জনসভায় দেখানো চিঠির বিষয়টি এসেই যায়। জনসভায় দেখানো চিঠিটি ‘খুবই স্পর্শকাতর’ অভিহিত করে পাকিস্তানের দুই সিনিয়র মন্ত্রী আসাদ উমর ও ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কেবল প্রধান বিচারপতিকেই ওই চিঠি দেখাতে পারেন। যদিও ইমরান খান নিজে বুধবার ইসলামাবাদে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বলেছেন, তিনি বুধবার সন্ধ্যায় অথবা রাতে চিঠিটি সিনিয়র সাংবাদিকদের কাছে প্রদর্শন করবেন। ইমরান খানের এ ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মাথায় পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় জানায়, প্রধানমন্ত্রী আজ, বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই ভাষণেই ইমরান খান তার দাবিকৃত ষড়যন্ত্রের প্রমাণ চিঠিটি প্রদর্শন করবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে ইমরান খান কোন চিঠির কথা বলছেন?

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিষয়ক একাধিক ব্লগার সপ্তাহখানেক ধরে ওয়াশিংটনে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতকে দেওয়া মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক একটি চিঠির কথা লিখছেন। কথিত ওই চিঠিতে পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অনেক অবনতি হয়েছে জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইসলামাবাদে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায়’ যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কোন্নয়ন সম্ভব নয়। পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত কিছুদিন আগে ওই চিঠি ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠালে ইমরান খান সরকার ওই রাষ্ট্রদূতকে দেশে তলব করেন এবং তার পরিবর্তে আজাদ কাশ্মিরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাসুদ খানকে নিয়োগ দিয়ে ওয়াশিংটনে পাঠান। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে থেকে ‘অত্যন্ত গোপনীয়’ ওই চিঠি নিয়ে ইমরান খান সেটি পাকিস্তানের শীর্ষ জেনারেলদের দেখিয়েছেন বলে জানা যায়।

এর আগে একাধিকবার এসব ইস্যুতে পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষের কথা মৌখিকভাবে জানানো হলেও লিখিত আকারে এবারই প্রথম বার্তা দেওয়া হয়। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ, আসিফ আলী জারদারি ও নওয়াজ শরীফ যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তানে ড্রোন হামলার সুযোগ দিলেও ইমরান খানের আমলে একটিও হামলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সবশেষ আফগানিস্তানে কাইনেটিক (সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যনিবিষ্ট) অভিযানের জন্য পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রকে ঘাঁটি করতে না দেওয়া থেকে ওয়াশিংটন প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ফেব্রুয়ারির শেষ অথবা মার্চের শুরুতে পাঠানো ওই চিঠিতে রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস কেনা থেকে শুরু করে আফগানিস্তান, ইরান, ইসরায়েলসহ নানা ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষের কথা রয়েছে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে।

মাসুদ খানকে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের আগে পাঠানো কথিত চিঠিটির কথা ব্লগাররা বললেও আসাদ উমর ও ফাওয়াদ চৌধুরী আরেকটি চিঠির উপস্থিতি দাবি করেছেন। মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে দুই মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা একটি বিদেশি সরকারের কাছ থেকে লিখিত হুমকি পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ না হলে এবং তাকে সরানো না হলে পাকিস্তানকে ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে বলে জানানো হয়েছে।’

পাকিস্তানি ব্লগার ও দেশটির মন্ত্রীদের দাবিকৃত দুটি চিঠির কথাই সত্যি হলে বিষয়টি অত্যন্ত বিস্ফোরক, এ মর্মে সন্দেহ নেই। এমন চিঠি পাকিস্তানকে সত্যিই দেয়া হয়ে থাকলে সেটা ইমরান খানের পক্ষে এ মুহূর্তে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে কাজ করবে। এখন দেখার বিষয় চিঠির বিষয়টি কতটুকু সত্যি এবং ইমরান খান কোন চিঠি বা ট্রাম্প কার্ড দেখাবেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.