‘রুটির ঝুড়ি’ থেকে রুটিহীন ইউক্রেন!

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪৫ শতাংশই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন। রুশ আগ্রাসনের ফলে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে উলে­খযোগ্য অবদান রাখা দেশ ইউক্রেন রুটির ঝুড়ি থেকে পরিণত হয়েছে রুটিহীন দেশে। সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেও দেশটিতে দেখা গেছে রুটির জন্য নাগরিকদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে। গার্ডিয়ান, রয়টার্স, এনবিসি। 

ইউক্রেনের খেমেলনিস্কি অঞ্চলের একটি গম ক্ষেত, ছবি- এএফপি

স্টেফানস্কি ৩৫ বছর বয়স্ক একজন মা। দুই সন্তানের খাবার নিয়ে শঙ্কিত তিনি। বাচ্চাদের বাবা ভলদারেমি (৪২) একজন শস্য রপ্তানিকারক। পারিবারিক আয় এখন শূন্যের কোটায়। জমানো টাকা থাকলেও খাদ্যশস্য কিনতে পারছেন না অপ্রতুলতার দরুন। তাই বাবা-মা দুজনেই ঠিক করেছেন নিজেরা এক বেলা করে খাবেন- বাচ্চাদের পরের বেলার খাবারের জন্য যেন চিন্তিত হতে না হয়।

এই অবস্থা এখন শুধু কিয়েভেই নয়, পুরো ইউক্রেনেরই। জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএপপি) নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে মঙ্গলবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন বন্ধ না হলে শিগগিরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভয়াবহতম খাদ্য সংকটে ভুগবে পুরো বিশ্ব।

ইউক্রেনের যুদ্ধ স্থানীয় কৃষি এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও শস্য সরবরাহকে প্রভাবিত করায় সমূহ বিপর্যয় ঘনিয়ে আসছে বিশ্বে। নিরাপত্তা পরিষদ ইউক্রেনের অবনতিশীল মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে সাপ্তাহিক জরুরি বৈঠক করেছে। মঙ্গলবারের আলোচনায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং কৃষি সংকটের বৃহত্তর প্রতিফলনের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে।

ইউক্রেন এবং রাশিয়া বিশ্বের সরবরাহের ৩০ শতাংশ গম, ২০ শতাংশ ভুট্টা এবং ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ সূর্যমুখী বীজতেল উৎপাদন করে। ডব্লিউএফপি বিশ্বের ১২৫ মিলিয়ন মানুষকে খাওয়াতে প্রয়োজনীয় শস্যের ৫০ শতাংশ কিনে নেয় ইউক্রেন থেকে। বিসলির মতে, খাদ্য, শিপিং এবং জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতি মাসে ডব্লিউএফপির অপারেশনাল খরচ বেড়েছে ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ভুট্টা রোপণের মৌসুমে তাদের ফসলের প্রতি যত্নবান না হয়ে ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধে নেমেছেন কৃষকরা। এর অর্থ রাশিয়া এবং ইউক্রেনের ৫০ শতাংশ পণ্যের অভাবে ভুগতে হবে। মিশর এবং লেবাননের মতো দেশগুলো ইউক্রেনীয় শস্যের ওপর ৮০ শতাংশেরও বেশি নির্ভরশীল। বিসলে বলেন, যদি সংঘাতের অবসান না হয়, তাহলে বিশ্ব দুর্ভিক্ষ-কবলিত দেশগুলোর অস্থিতিশীলতা এবং ব্যাপক অভিবাসনের ঝুঁকিতে পড়বে।

তিনি বলেন, ‘যতদিন পুতিন তার যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন, যতদিন রুশ বাহিনী ইউক্রেনের শহরগুলোতে বোমাবর্ষণ করতে থাকবে এবং সাহায্যের গাড়ি বহরকে আটকাতে থাকবে, যতদিন অবরুদ্ধ বেসামরিক নাগরিকরা নিরাপদে থাকতে অক্ষম হবে এই মানবিক সংকট আরও ঘণীভূত হবে।

জাতিসংঘে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়্যাস কাউন্সিলকে বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের কৃষি সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে সারা দেশে মানবিক সংকট সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছে।

জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, খাদ্য ও কৃষি সংকটের জন্য তার দেশ দায়ী নয়। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের দ্বারা রাশিয়ার ওপর আরোপিত ‘ঐতিহাসিক নিষেধাজ্ঞা’কে আসল কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।