পাকিস্তানের এ মুহূর্তের মূল চরিত্র ‘একটি রহস্যময় চিঠি’

পাকিস্তানের টালমাটাল রাজনীতিতে এ মুহূর্তের কেন্দ্রীয় চরিত্র পালন করছে রহস্যময় একটি চিঠি। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পক্ষ বলছে, এ চিঠির চাপেই ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে। অন্যদিকে বিরোধীদলগুলো একে নাটক বলে আখ্যা দিচ্ছে।

ইমরান খানের হাতে সেই রহস্যময় চিঠি

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, তার বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা প্রস্তাব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ। গতকাল বুধবার তিনি এ দাবি করেন। এর আগে গত রোববার ইসলামাবাদে তার জনসভায় ‘হুমকির চিঠি’র কথা উল্লেখ করে ইমরান খান বলেছিলেন, ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, অনাস্থা প্রস্তাব ব্যর্থ হলে পাকিস্তান গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হবে। চিঠির ভাষা ছিল অত্যন্ত কঠোর এবং এতে বেশ কয়েকবার অনাস্থা প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার গোপন চিঠির মাধ্যমে তার সরকারকে পতনের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য ইমরান খান ফেডারেল মন্ত্রিসভার একটি জরুরি বৈঠক আহ্বান করেন। এতে মিত্র দলগুলোর প্রধানদেরও উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে এমকিউএম-পি এবং বিএপি নেতৃত্ব ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে বৈঠকে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পৃথক বৈঠকে সাংবাদিকদের সঙ্গে চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন।

ইমরান খান

‘লেটারগেট’ বিতর্ক সম্পর্কে ইমরান খান বলেন, একটি ‘স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি’ অনুসরণ করার পর থেকে তার ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং তার সরকারকে পতনের লক্ষ্যেই এই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী চৌধুরী ফাওয়াদ হুসেন বৈঠকের ব্যাপারে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান ফেডারেল মন্ত্রিসভার কাছে চিঠিটি নিয়ে আলোচনা করেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে, পার্লামেন্টের একটি ইন-ক্যামেরা অধিবেশনে চিঠিটি উপস্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রধান বিচারপতির সাথে চিঠিটি শেয়ার করার কথা রয়েছে। চিঠির মাধ্যমে দেওয়া হুমকির ব্যাপারে সেনাপ্রধান ও আইএসআইয়ের ডিজিকেও জানানো হয়েছে।

ফাওয়াদ বলেন, চিঠির ভাষা ও হুমকি কোনো সার্বভৌম দেশের জন্য অগ্রহণযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী ইমরান দেশের অখন্ডতা সার্বভৌমত্ব এবং জাতির সম্মানের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন। ইমরান বলেছিলেন, বিদেশি শক্তিগুলো এমন নেতৃত্বকে গ্রহণ করতে পারে না, যা পাকিস্তানের জনগণের জন্য কাজ করে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের সমালোচনা করে বলেছিলেন, পাকিস্তান বিদেশি শক্তির জন্য তার স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে। কিন্তু তারা সে ত্যাগের ‘মূল্যায়ন’ করেনি।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের একজন বলেন, চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সরকারের নীতিতে ওই দেশ খুশি নয়। অনাস্থা প্রস্তাব সফল হলে তারা ‘সবকিছু ক্ষমা করবে’। তা না হলে সামনে আরও কঠিন দিন আসবে। বৈঠকের কেউ কেউ এ চিঠি দেখে অশ্রুসজল, হয়ে উঠেন বলেও জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, মানুষ মনে করে নাটক হচ্ছে... এটা নাটক নয়। আমরা শুধু আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে চেয়েছিলাম এবং সেজন্যই আমরা প্রকাশ করতে পারি না, কে আমাদের হুমকি দিয়েছে।

তবেনবিরোধীপক্ষ ইমরান খানের এই চিঠি বিষয়ে তেমন কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না। বরং তারা বলছে, এটা ইমরান খানের একটি নাটক মাত্র।