ইউক্রেন যুদ্ধে ‘কপাল খুলল’ ভারতের: চিনি গেল উজবেকিস্তানে

পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মাধ্যমে প্রথম ভারতীয় ট্রানজিট চালান পেয়েছে উজবেকিস্তান। এর অর্থ হল দক্ষিণমুখী নীতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে দেশটি। কারণ এটি এই অঞ্চলে তার নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরতে এবং কার্যকর বিকল্প বাণিজ্য অংশীদার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ভয়েস অব আমেরিকা সম্প্রতি রিপোর্ট করে, ভারতের একজন ব্যবসায়ী ১৪০ টন ভারতীয় চিনি পাকিস্তান ও আফগানিস্তান হয়ে উজবেকিস্তানে রপ্তানি করেছে। দ্য ডিপলোম্যাট।

ইউক্রেন যুদ্ধ, দক্ষিণের বাণিজ্য রুটে চোখ উজবেকিস্তানের 

মালামালগুলো ভারত থেকে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে প্রথমে আনা হয়। এরপর সমুদ্র ও স্থল পথে তা পরিবহন করা হয়। তারপর কার্গোটি পাকিস্তান হয়ে কাবুল, মাজার-ই-শরিফ এবং পরে উজবেকিস্তানের টারমেজে চলে যায়। খবরে বলা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই কার্গো ট্রানজিটটি স্থলবেষ্টিত মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানের জন্য বাণিজ্য রুটে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত। এটি তাদের বাণিজ্য রুটের জন্য ইরান এবং রাশিয়ার ওপর সমালোচনামূলক নির্ভরতা হ্রাস করে এবং উজবেকিস্তানকে আরও স্বাধীন বাণিজ্য নীতি তৈরি করতে সক্ষম করে।

রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার এবং উজবেক পণ্যের বৈশ্বিক বাজারে পৌঁছানোর প্রাথমিক পথ। দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বর্তমানে ৭.৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। উনিশ শতকে যখন আধুনিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন রাস্তা, রেলপথ এবং পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়। তবে তা শুরুতে উত্তর দিকে রাশিয়ান কেন্দ্রস্থলের দিকে পরিচালিত হয়। বিশেষ করে রাশিয়ান সমুদ্রবন্দরগুলো গ্যাস, পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং শিল্প ধাতুর জন্য একটি প্রধান শিপিং রুট।

২০১৬ সালে উজবেকিস্তানের ক্ষমতায় আসেন শাভকাত মিরজোয়েভ। এর পর থেকে উজবেকিস্তান উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই সমস্যাগুলোর সমাধান এবং তার বাণিজ্য রুটগুলোকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এটি করার সময় তারা দক্ষিণে পাকিস্তানের রুটটিকে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ ও গুরুত্ব দিয়েছে।

উজবেকিস্তানের কৌশলের সূচনা হচ্ছে পাকিস্তানি সমুদ্রবন্দরগুলোতে প্রবেশ করা। পাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের মধ্যে গেল মার্চ মাসে একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার মধ্যে মোট ৩৪টি পণ্য রয়েছে। চুক্তিতে দুটি মূল পরিবর্তন লক্ষণীয়। প্রথমত, পণ্যগুলোর ওপর শুল্ক কমানো, দ্বিতীয়ত পণ্যের মানের পারস্পরিক স্বীকৃতি ও অ-শুল্ক বাধাগুলো হ্রাস করা।

পাকিস্তান-উজবেকিস্তান ট্রানজিট ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এইউপিটিটি) ২০২১ সালের জুলাই মাসে স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির অধীনে উজবেক ট্রাকগুলোকে আফগানিস্তানের মাধ্যমে সরাসরি পাকিস্তানের করাচি, গোয়াদর এবং বিন কাসিমের সমুদ্রবন্দরে পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চুক্তিতে মাইগ্রেশন নিয়ম শিথিলকরণ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের পারস্পরিক স্বীকৃতির কথাও বলা হয়েছে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ বিশেষ করে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মিরজোয়েভের দক্ষিণী নীতিকে অনুঘটক করেছে। রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রায় তার বাণিজ্য বিকল্পগুলোকে পঙ্গু করে দিয়েছে এবং উজবেক অর্থনীতিতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। বৃহত্তম শিপিং চালান সংস্থাগুলো কৃষ্ণ সাগরের মাধ্যমে কমনওয়েলথ অফ ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটসতে (সিআইএস) রপ্তানি স্থগিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে রাশিয়া এবং উজবেকিস্তান।

বলা হচ্ছে, মধ্য এশিয়ার মাঝখানে উজবেকিস্তানের অবস্থান শক্তির উৎস কিন্তু দুর্বলতাও বটে। উজবেকিস্তানের জন্য রাশিয়ান বাণিজ্য রুটের সর্বোত্তম বিকল্প দক্ষিণে। কারণটা ভৌগলিক।

উজবেকিস্তান মধ্য এশিয়ায় একটি কেন্দ্রীয় অবস্থান দখল করে আছে। এটি উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত সমস্ত রুটের সাথে সংযুক্ত হয়েছে, যা ইউরেশিয়ান হার্টল্যান্ডের মূল অংশকে ভারতীয় অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করেছে।