শ্রীলঙ্কায় আরামে ইউক্রেনিয়ানরা, বিপাকে রাশিয়ানরা!

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি চরম বিপাকে পড়েছে। এর মধ্যেও বিপাকে পড়া ইউক্রেনীয়রা সেখানে খানিকটা আরাম বোধ করছেন। বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও সত্য। পিতৃভূমিতে যুদ্ধ চললেও ভারত মহাসগারের এই ছোট্ট ভূমিতে তাদের দিকে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দেশটি। যুদ্ধের আগে দ্বীপরাষ্ট্র দর্শনে আসা ইউক্রেনের নাগরিকরা আটকে পড়েছেন। এএফপি।

ব্ল্যাকগোল্ড ক্যাফের ম্যানেজার অহেশ শানক একজন পর্যটকের সঙ্গে কথা বলছেন, ছবি- ব্যাংকক পোস্ট

আটকে পড়া ইউক্রেনীয় নাগরিকরা থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন সবকিছুতেই ছাড় পাচ্ছেন। তাদের খাবারের দামে ছাড়া কিংবা ফ্রি সেবা দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার বেশ কয়েকটি হোটেল-রিসোর্ট। ইউক্রেনীয় পর্যটকদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে কলম্বো। বাড়িয়েছে রুশ নাগরিকদেরও। তবে শ্রীলঙ্কায় বেশি ছাড় পাচ্ছেন না রুশরা। জানা গেছে, প্রায় ১৫ হাজার রুশ নাগরিক আটকা পড়েছেন এই দ্বীপরাষ্ট্রে।

ঘুরতে এসে আটকে পড়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার ইউক্রেনীয়। টাকা-কড়ি নেই, পকেট গড়ের মাঠ। যুদ্ধ চলছে, দেশে ফেরার পথও বন্ধ। চোখে অন্ধকার দেখছিলেন ইউক্রেনীয় পর্যটকরা। তখনই দেবদূত হয়ে দেখা দিল শ্রীলঙ্কার বেশ কয়েকটি হোটেল ও রিসোর্ট। পাসপোর্ট দেখালেই অর্ধেক দামে খাবার পরিবেশন। সবার আগে এগিয়ে এলো মরিসা শহরের ব্ল্যাকগোল্ড ক্যাফে।

ছোট হলেও পেছনে একটি গল্প আছে। ম্যানেজার অহেশ শানক একদিন এক ইউক্রেনীয় ভদ্র মহিলার কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি ফেরত যাচ্ছেন কি-না। উত্তরে ভদ্র মহিলা বলেছিলেন, ‘আমি ফেরত যেতে পারব না। আমার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। কোথায় যাব আমি। শিউরে ওঠেন শানক। স্মৃতির আয়নায় ভেসে ওঠে নিজ দেশের ২০০৯ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধের ভয়ংকর দিনগুলো।

সেদিনই হোটেলের সামনে বিলবোর্ড লাগিয়ে দেন শানক। যাতে লেখা ছিল- ‘পাসপোর্ট দেখালেই ইউক্রেনীয়দের জন্য অর্ধেক দাম।’ তখন থেকেই ইউক্রেনীয়দের জন্য অর্ধেক দামে খাবার পরিবেশন শুরু করেন। শানক বলেন, ‘আমরা মানুষ, তারাও মানুষ। নিজেদের বিপদের মাঝেও আমরা যে যতটুকু পারছি, সাহায্য করছি।’

ইউক্রেনের নাগরিক ভিক্টোরিয়া মাকারেনকো বলেন, আমি শ্রীলঙ্কা ও এখানকার মানুষদের খুব ভালোবাসি। এখানে সবাই আমাদের সাহায্য করতে চায়। রুশ আগ্রাসনের কয়েক সপ্তাহ আগে মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে লঙ্কা ভ্রমণে এসেই আটকা পড়েন মাকারেনকো। তিনি বলেন, আমাদের হোটেলের মালিক বলেছেন যতদিন লাগে থাকো। আমাদের খাবার-পানি নিয়ে কোনো চিন্তাই করতে হচ্ছে না।

অপরদিকে, রাশিয়ান নাগরিকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। সাংবাদিকদের প্রশ্ন সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাচ্ছেন রুশ নাগরিকরা। আমেরিকার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা জারির কারণে ডলার ফুরিয়ে যাওয়ার পর না পারছেন নতুন করে অর্থ আনতে, না পারছেন লেনদেন করতে। স্থানীয়রাও তাকাচ্ছেন বাঁকা চোখে। তাদের এসব ভোগান্তির কথা তুলে ধরতে সাংবাদিকরাও ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন।