আপনি পড়ছেন

“আর যে ব্যক্তি তার রবের সম্মুক্ষে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা হতে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস।” (সুরা নাযি’আত ৭৯: ৪০-৪১)

ramadan and taqwa imageফাইল ছবি

নবী (স.) বলেছেন “ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি যে রমজান মাস পেলো অথচ তার গোনাহ মাফ করাতে পারলো না।” (সহীহ ইবনু হিব্বান, বায়হাকী, হাদীস সম্ভার)

বছর ঘুরে পবিত্র মাহে রামাদান আমাদের নিকট উপস্থিত। এ মাস রহমতের, এ মাস মাগফিরাতের, এ মাস নাজাতের। প্রতিটি মুমিন সারাটি বছর এ মাসটির প্রতীক্ষায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। প্রত্যেক আল্লাহপরস্ত মানুষ রমজানের বহুপূর্ব হতে এর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। রসূল (স.) বলেন যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন মাত্র সিয়াম রাখবে সে ব্যক্তি থেকে জাহান্নাম ১০০ বছরের পথ পরিমাণ দূরে সরে যাবে। (সহীহ তারগীব, হাদীস সম্ভার)

রমজান মাস যথানিয়মে প্রতিবছর উপস্থিত হয়। আমরা ঘটা করে রোজা রাখি। তারাবী, সেহরী, ইফতারে আগ্রহ-উৎসাহের কমতি থাকে না। তবু আমরা লক্ষ্য করি আমাদের সমাজের মানুষের আমল-আখলাক জান্নাতী লোকদের সাথে মিলবে না। অন্যায়-যুলুম নাফরমানী দিন কে দিন যেন বেড়েই চলেছে। বহু মানুষের কর্মকান্ডে তাদের আর মানুষ বলে মনে হয় না। পশুর সাথে তুলনা করলে পশুদেরও অবমাননা করা হয়। অথচ এরা রোজা রাখছে। রমজান মাসে যাকাত দিচ্ছে, তারাবী আদায় করছে। কিন্তু ঘুষ, দুর্নীতি আজ লাগাম ছাড়া। এখন আর কোটি টাকার কথা হয় না। হাজার কোটি বা লাখ কোটি টাকায় দুর্নীতির হিসাব হচ্ছে।

মানুষের জীবনের মূল্য গিয়ে ঠেকেছে তলানীতে। মানুষ মরছে প্রতিদিন রাজনৈতিক শত্রু তার কারণে, প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে, পরকীয়ার জেরে, জমি-সম্পদের জন্য, রোড এক্সিডেন্টে। কোলের শিশু থেকে বৃদ্ধ, গৃহবাসী থেকে পথচারী পরিবারের আশা যুবক থেকে কুলবধূ কারোরই জীবনের নিরাপত্তা নেই। আর নিরব ঘাতক খাদ্যে বিষাক্ত ক্যামিকেলের ব্যবহার আর ভেজাল ঔষধে বাজার সয়লাব। এ তালিকা আরো দীর্ঘ করা সম্ভব। মোদ্দাকথা সমাজের সর্বস্তরে অন্যায়-জুলুম-অবিচারের সয়লাব বয়ে চলছে। অথচ রমজান এসেছে মানুষকে গুনাহমুক্ত করতে, পবিত্র করতে। খোদ রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠার যোগার। যুদ্ধের নামে, সরবরাহের ঘাটতির নামে তেলের বাজার থেকে এক সপ্তাহে হাতিয়ে নেয়া হল হাজার হাজার কোটি টাকা। 

আজ পহেলা রমজান। তারাবী কেন, ফজরের জামাতেও লোকে লোকারণ্য। সুবহানাল্লাহ! বড়ই প্রীতিকর দৃশ্য। প্রশ্ন হল এত লোক যদি আমরা কষ্ট করে রোজা রাখছি; ২০ রাকাত দীর্ঘ খতম তারাবী করছি, আবার ফজরের নামাযেও আলহামদুলিল্লাহ হাজির হচ্ছি তাহলে এই সব অন্যায়-দুর্নীতি-জুলুম কারা করছে? আরো প্রশ্ন বছরের বাকী সময় এরা কোথায় থাকেন?

এর জবাব বেশ জটিল। তবে সাদামাাটা কথা হল ইসলামকে আমরা আর দশটা ধর্মের মতো ধরে নিয়েছি। তারা যেমন ঘটা করে ধর্মীয় উৎসবগুলি অবলিলায় করে আমরাও আজ তেমনটি করছি। ধর্ম আছে ধর্মের জায়গায়। দুনিয়াদারী যেভাবে ভাল বুঝি সেভাবে করি। দুনিয়াদারীর মধ্যে ধর্মকে টানিয়েন না। দুনিয়াদারী গান্ধা, রাজনীতি নোংরা। ধর্ম পবিত্র জিনিষ। একে এখানে টানিয়েন না। বেশী কিছু বললে এরকম দুচারটা বিজ্ঞজনোচিত মন্তব্য পাওয়া যাবে। সমস্যা হল ইসলাম আর দশটা ধর্মের মতো কেবল একটা ধর্মই নয়, এটি একটি জীবন ব্যবস্থা-পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এখানে দ্বীন ও দুনিয়াদারী পৃথক করার ব্যবস্থা নেই। দ্বীন যদি দুনিয়াদারীকে সংশোধন ও নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে কোনো কায়দা নিয়ে আসবে না। রসূল (স.) বলেন,

“যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা ও মিথ্যার উপর আমল এবং জাহেল কর্মকান্ড ছাড়তে পারলো না তার খানাপিনা পরিত্যাগে আল্লাহ্র কোনো প্রয়োজন নেই।” (বুখারী)

রোজাও রাখবো, অন্যায়-দুর্নীতি-জুলুমও করবো তার সুযোগ নেই। ইসলামের ইবাদতের বিধানের অন্যতম উদ্দেশ্য মানব চরিত্র সংশোধন, সংস্কার ও উন্নত করা। পবিত্র পরহেজগার মুত্তাকী ব্যক্তি মানস ও চরিত্র গঠনের মাধ্যমে সমষ্টি তথা পরিবার ও সমাজ সংস্কার করবে। ঘটা করে অনুষ্ঠান পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগুতে হবে। নিয়মিত আত্মসমালোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে হবে। নিবন্ধের শুরুতে উল্লখিতি আয়াত ও হাদীসে সেই নির্দেশনাই এসেছে। জান্নাত হল পবিত্র চরিত্রের লোকদের জন্য যারা নফসে তাড়না লোভ-লালসা, বিকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে আল্লাহ্র জান্নাত তাদেরই জন্য। নবী (স.) তার উম্মতের প্রতি সতর্কবানী উদ্ধৃত করেছেন- যে বা যারা রমজান পেয়েও নিজেকে সংশোধন করে গুনাহ মাফ করাতে পারলো না, সে দুনিয়া আখিরাতে ধ্বংস হল। মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সকলকে রক্ষা করুন। বুঝগুলি সংশোধন করে দিন। তাঁর জান্নাতের পথে অগ্রসর হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর