আপনি পড়ছেন

পাকিস্তানের জন্ম থেকে শুরু করে ৭৫ বছরের মধ্যে ৩৪ বছরই চলেছে সেনা শাসন। ব্রিটিশ দখলদারদের হাত থেকে ১৯৪৭ সালে মুক্ত হওয়া পাকিস্তান একই সঙ্গে শোষক ও শোষিতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। ১৯৫৮ সাল থেকে শুরু করে দফায় দফায় এই প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল ২০০৮ সাল পর্যন্ত। ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান (১৯৫৮-৬৯), জেনারেল ইয়াহিয়া খান (১৯৬৯-৭১), জেনারেল মুহাম্মদ জিয়াউল হক (১৯৭৭-৮৮) এবং জেনারেল পারভেজ মোশাররফ যেন অনেকটা ‘উত্তরাধিকার সূত্রে’ পাকিস্তানে সেনাশাসন চালিয়েছেন। দ্য ডন, দ্য ন্যাশনাল, এএফপি।

ayub khan yahya khan zia ul haq pervez musharrafধারাবাহিকভাবে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান, জেনারেল ইয়াহিয়া খান, জেনারেল মুহাম্মদ জিয়াউল হক ও জেনারেল পারভেজ মোশাররফ

পাকিস্তানের সেনাশাসনের প্রক্রিয়াটি ‘নিজের পায়ে কুড়াল মারা’র মতো করে ত্বরান্বিত করেন দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা। ১৯৫৮ সালে তিনি সেনাবাহিনীর সমর্থনে সংবিধান বাতিল করেন এবং ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করেন। এর পরেই আইয়ুব নিজেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ইস্কান্দার মির্জাকে নির্বাসিত করেন তিনি। আইয়ুব প্রশাসনকে পুনর্গঠন করেন এবং কৃষি সংস্কার এবং শিল্পের উদ্দীপনার মাধ্যমে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করেন। তার সময়ে বিদেশি বিনিয়োগকেও উৎসাহিত করা হয়েছিল।

পাকিস্তানের শাসনে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরির প্রথম প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খানের ক্ষমতার ইতি ঘটে। এদিন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তারই উত্তরসূরি জেনারেল ইয়াহিয়া খান। দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতায় বসেন।

সেই নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী বাঙালি জাতি-জাতীয়তাবাদী আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে ১৬০টি আসন জিতেছে এবং তারপরে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৮১টি আসন নিয়ে বহু ব্যবধানে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ইয়াহিয়ার অস্বীকৃতি পূর্ব পাকিস্তানে নাগরিক বিদ্রোহের সূত্রপাত করে। তারই ফলে সৃষ্টি হয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের ঘটনায় পিপিপি নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করেন ইয়াহিয়া খান।

১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ভুট্টোর ক্ষমতাসীন পিপিপি ব্যাপক বিজয় দাবি করলেও তখন বিরোধী দলগুলোর ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ দেশটিকে অশান্তিতে ঠেলে দেয়। সেই সুযোগ নিয়ে ৮ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা জেনারেল মুহাম্মদ জিয়াউল হক ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ মারেন- জারি করলেন সামরিক শাসন।

দেশে এলো তৃতীয় সামরিক শাসক। জিয়া নিজেকে সেনাপ্রধানের পদে অধিষ্ঠিত করেন এবং ১৯৭৩ সালের সংবিধানে পরিবর্তন এনে নিজে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৮ সালে নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন। যদিও নিয়তির পরিহাসে ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র তিন মাসের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সামরিক সদস্য নিয়ে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন জিয়া।

পরবর্তী ১১ বছর চারটি স্বল্পকালীন নির্বাচিত সরকার দেশটিকে শাসনের সুযোগ পেয়েছে। বিকল্পভাবে প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো (১৯৮৮-৯০ এবং ১৯৯৩-৯৬) এবং নওয়াজ শরিফের (১৯৯০-৯৩ এবং ১৯৯৭-৯৯) নেতৃত্বে গঠিত দুটি সরকারকেই বরখাস্ত করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট। এক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালে জিয়া শাসনের সংবিধানে ঢোকানো একটি ধারাই অনুসৃত হয়েছে, যা সামরিক শক্তির প্রতিনিধির গোপন কার্যকলাপের ইঙ্গিত দেয়।

বিষয়টি বুঝতে পেরে নওয়াজ শরিফ তার দ্বিতীয় মেয়াদে ওই ধারাটি ত্রয়োদশ সংশোধনী হিসেবে সংবিধান থেকে বাতিল করতে সমর্থ হন। কিন্তু এই পদক্ষেপও বেসামরিক সরকারকে নির্বিচারে বরখাস্ত থেকে সুরক্ষা দিতে পারেনি। যা প্রমাণিত হয় জেনারেল পারভেজ মোশাররফের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। ২০০১ সালের ২০ জুন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট স্বনিযুক্ত হন।

সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বরখাস্ত করা, ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে একটি সেনা অভিযান পরিচালনা করা, সেনাপ্রধানের পদে থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি। ২০০৭ সালে তিনি সামরিক প্রধানের পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন এবং তিনি কার্যকরভাবে ক্ষমতা হারান।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.