রিয়াজের সন্ত্রাসী বাহিনীর আদ্যোপান্ত

নারায়ণগঞ্জের ভয়ংকর সন্ত্রাসী বাহিনীর নাম রিয়াজ বাহিনী। এর মূলহোতা রিয়াজুল ইসলাম ওরফে শুটার রিয়াজ ও তার ৪ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় উদ্ধার করা হয় বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, গুলি, দেশিয় অস্ত্র ও ইয়াবা। হত্যা মামলাসহ ১৫টি মামলার আসামি এই শীর্ষ সন্ত্রাসী রিয়াজ। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয় সে। এরপর নিজেই গড়ে তোলে ‘সশস্ত্র বাহিনী’। পেশাদার খুনি ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী রিয়াজের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও ও তার আশপাশের এলাকায় বহু সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটেছে। 

রিয়াজুল ইসলাম ওরফে শুটার রিয়াজ

র‍্যাব সূত্র জানায়, রিয়াজুল ইসলাম ওরফে শুটার রিয়াজ সোনারগাঁওয়ের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নকালে ২০১৬ সালে এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়। এরপর রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও ভাড়ায় মারামারি করতে গিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে অপরাধ জগতের লোকজনের সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠে।

একপর্যায়ে সেই ব্যক্তির সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় নিজেই একটি ‘সশস্ত্র বাহিনী’ গড়ে তোলে রিয়াজ। তার সহযোগীদেরকে অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ শুরু করে রিয়াজ। তাদের নিয়ে সোনারগাঁও এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিত সে এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে বালু ও মাটি ভর্তি ট্রাক হতে চাঁদা আদায় করতো। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অবৈধভাবে জমি দখলের জন্য সে ভাড়ায় তার দল নিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। তাছাড়া সে উঠতি বয়সের ছেলেদের নিকট অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে তাদেরকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সম্পৃক্ত করতো।

রিয়াজ বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তার

রিয়াজের বড় ভাই মোহাম্মদ আলীও এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত। কিছুদিন পূর্বে রিয়াজ বাহিনীর নেতৃত্বে একটি  হামলার পর হতে সে আত্মগোপনে রয়েছে। গ্রেপ্তার রিয়াজের বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি, বিস্ফোরক  ও অস্ত্র আইনে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা ও বেশ কয়েকটি জিডি রয়েছে। সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণও করেছে।

"যেভাবে রিয়াজের দলে সহযোগীরা "

সংশ্লিষ্টরা জানায়, রিয়াজের অন্যতম প্রধান  সহযোগী মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা ভাগিনা। সে রূপগঞ্জের একটি কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করে। ইতোপূর্বে সে সবজির ব্যবসা করতো। ২০১৯ সালে রিয়াজের সাথে পরিচয় হলে রিয়াজ তাকে তার ‘সশস্ত্র বাহিনী’তে যুক্ত করে। সে রিয়াজের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। রিয়াজ বাহিনীর অবৈধ অস্ত্র সে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট হেফাজতে রাখত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি ও বিস্ফোরক আইনে রূপগঞ্জ থানায় ৬টি মামলা রয়েছে। সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণ করেছে।

মারুফ হোসেন মুন্না রিয়াজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সে সোনারগাঁওয়ের একটি বিদ্যালয় হতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। ওই এলাকায় সে মাটি কাটার ব্যবসা করতো। মাটির ব্যবসা করতে গিয়ে ২০২১ সালে সে রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেয়। মাদক সংগ্রহ, সরবরাহ ও অস্ত্র সরবরাহের কাজে সে রিয়াজকে সহযোগিতা করতো। তার নামে রূপগঞ্জ থানায় ২টি মাদক মামলা রয়েছে। সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণ করে।

এ ছাড়াও মো. মাহবুব মিয়া রূপগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি ৩য় বর্ষ পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে রূপগঞ্জ এলাকায় ইট-বালুর ব্যবসা করে। ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সে রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেয়। সে রিয়াজের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে।

অপরদিকে, র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার মো. সেলিম সোনারগাঁওয়ের একটি বিদ্যালয় হতে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ২০১৬ সালে সে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে গমন করে এবং মসজিদে কার্পেট বিছানোর কাজ করতো। কিছুদিন পূর্বে সে দেশে ফিরে এসে রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত হয়।

রিয়াজ সম্পর্কে র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, রিয়াজ বাহিনী নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও ও তার আশপাশ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিল। তাদের সন্ত্রাসী দলের সংখ্যা ১০-১৫ জন।

রিয়াজের নেতৃত্বে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য তার বাহিনী অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিত। এ ছাড়াও রিয়াজের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে উল্লিখিত এলাকাসমূহে জমি দখল, চাঁদাবাজি, মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করতো বলেও জানান তিনি।