আপনি পড়ছেন

“হাতীওয়ালাদের সাথে তোমার রব কী আচরণ করেছিলেন তা-কি তুমি দেখনি? তিনি কি তাদের কৌশল ব্যর্থ করে দেননি?” (সূরা ফীল ১০৫: ১-২)। সূরা ফীল মুখস্থ পারে না এমন মুসলমানের সংখ্যা কম। তবে এর তাৎপর্য ও শিক্ষার ব্যাপারে একই কথা বলা যাবে না।

ababil birds army of abrahaছবিটি ইরানি চলচ্চিত্রকার মজিদ মাজিদির ‘মুহাম্মদ’ সিনেমার একটি দৃশ্য থেকে নেওয়া

আমাদের দেশে নামাযে পাঠের জন্য কুরআন শিক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই শেষ ১০ সূরার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে অনেক দিন যাবৎ। কে কবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বোধগম্য নয়। রসূল (সা.) হতে এমন কোনো নির্দেশ পাওয়া যায় না। সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর আমলেও নয়। বরং আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন- রসূলুল্লাহ্ (সা.) জীবিত থাকাকালীন সময়ই আমি সবগুলি মুহকাম সূরাগুলি মুখস্থ করে নিয়েছি। বলা হলো- মুহকাম সূরা কোনগুলো? তিনি বললেন, মুফাসসল সূরাগুলো।

মুফাসসল সূরা কোনগুলো তা নিয়ে আলিমদের মধ্যে মতভেদ আছে। কারো মতে, সূরা কাফ থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ ৫০ নং সূরা থেকে ১১৪ নং সূরা। আবার কারো মতে, সূরা হুজুরাত থেকে সূরা বুরূজ পর্যন্ত অর্থাৎ ৪৯ নং সূরা থেকে ৮৫ নং সূরা। আবার কেউ বা বলেন, সূরা হুজুরাত থেকে সূরা নাযিয়াত অবধি অর্থাৎ ৪৯ নং থেকে ৭৯ নং পর্যন্ত। তবে অধিকাংশ মতে, সূরা কাফ থেকে মুফাসসল সূরাগুলি শুরু। এখন দেখুন দেখি কে আমাদের বুঝালো শেষ দশটি সূরা মুখস্থ করলেই হবে। আমপারা বা ৩০তম পারাও নয়। মাত্র শেষ দশটি সূরা এটিই তার কুরআনের দৌড়। তাও শুধুই মুখস্থ। আয়াতগুলোর অর্থ কি, শিক্ষা কি তার কোনো স্থান নেই এ শিক্ষা ব্যবস্থায়। আর বর্তমান অবস্থা আরো খারাপ।

কত যে শিশু ও বয়স্ক মুসলমান পাওয়া যাবে, যারা কুরআন পড়তেই জানে না! সূরা ফাতিহা বা শেষ ১০ সূরাও পারে না। অথচ আমাদের উস্তাদরা কেবল মাদ্রাসা বানাচ্ছেন। অলিতে গলিতে মাদ্রাসা। দিন-রাত ইমাম-মুয়াজ্জিনরা টিউশনি করছেন। শুধু আলিফ-বা-তা পড়াচ্ছেন। তাদের বেতন বেড়েছে। মাদ্রাসাগুলিতেও উচ্চ হারে বেতন নেওয়া হচ্ছে। অথচ জাতির এক বিরাট অংশ কুরআন বিমুখ! যারা নিজেদের ‘ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া’ তথা নবীগণের উত্তরাধিকারী বলে দাবি করেন, তারা বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন।

নবী (সা.) তো ঘরে ঘরে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য গেছেন কোনো বিনিময় ছাড়াই। আর বিনিময় নিয়েও যদি তারা তা না পারেন তবে তাদের দাবির যথার্থতা কি? আর বিনিময়ের মধ্যে কুরআন শিক্ষা আটকে গেলে তা হবে বিরাট দুর্ভাগ্যজনক। খুবই দুঃখজনক। উলামায়ে কেরাম যখন সম্পদের মোহে আটকা পড়ে যান তখন এর চেয়ে বড় বিপর্যয় কোনো জাতির জন্য আর হতে পারে না।

অথচ আরব বিশ্বে- এ চিত্র ভিন্ন সেখানে শুরুতেই বাচ্চাদের কুরআন শিক্ষা করা সামাজিক ও শিক্ষা-সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনেকে গোটা কুরআন হিফজ করার পরে অন্যান্য ডিসিপ্লিনে লেখাপড়া করেন। তাই সেখানে প্রচুর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি কর্মকর্তা পাওয়া যাবে হাফেজে কুরআন। তুরস্কেও বোধকরি এ রকম ব্যবস্থা চালু আছে। মুসলিম বিশ্বের অন্যত্রও এমন প্রোগ্রাম রয়েছে। আমরাই কেবল পিছিয়ে আছি।

আমার এক উস্তাদ তার জীবনের এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন। মিশরের আল-আজহারে পড়ার সময় তার ইচ্ছা হয় মুসা (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত সিনাই-এ যাবেন তিনি। একাকী সেখানে গিয়ে পড়েন মিশর পুলিশের পাল্লায়। সিনাই স্পর্শকাতর স্থান। তদুপরি সে সময় মুসলিম ব্রাদারহুডের উপর ধরপাকড় চলছে। নানারকম জিজ্ঞাসাবাদের পর থানা কর্তৃপক্ষ তার সরলতায় সন্তুষ্ট হয়ে শেষ অবদি সিনাই যাওয়ার অনুমতি দেয়। তাও অল্প সময়ের মধ্যে সাড়তে হবে। এ সময় তার দাবির প্রেক্ষিতে থানার প্রধান কর্মকর্তা তাকে নিজেই তার গাড়ি ড্রাইভ করে হোটেলে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেন।

আমার ওই উস্তাদজি হাফেজে কুরআন জেনে যাত্রাপথে থানা কর্মকর্তা তাকে তার তেলাওয়াত ভুল হলে শুধরে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। গাড়ি চালাতে চালাতে থানেদার কুরআন শরীফের একটা একটা করে সূরা পড়ছেন আর উস্তাদজি বিস্ময়াভিভূত হয়ে বলছেন, আলহামদুলিল্লাহ্! আলহামদুলিল্লাহ্! ক্লাসে এ ঘটনা বলার সময়ও তার চেহারায় সেই বিস্ময়ের রেশ দেখতে পাই আমরা। যা হোক, আজকের বিষয়ে ফিরে আসি।

সূরা ফীলের পটভূমি আমরা অনেকেই জানি। ইয়েমেনের খৃস্টান বাদশাহ আবরাহা রাজধানী সানায়া-তে এক বিরাট গীর্জা নির্মাণ করে ঘোষণা করে হাজ্জ কাবার পরিবর্তে ওই গীর্জায় অনুষ্ঠিত হবে, এবং এর জন্য সে সর্বশক্তি নিয়োজিত করবে। এতে ক্ষুব্ধ এক আরব সে গীর্জায় প্রবেশ করে তাতে মলত্যাগ করে। কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী, কতিপয় আরব যুবক গীর্জার ক্ষতিসাধন করেন। এটা কতদূর সত্য তা যাচাই করার উপায় নেই। কারণ চতুর আবরাহা কাবার উপর হামলা চালানোর উসিলা তৈরি করার জন্য নিজের লোক দিয়েই তা করায়নি তা-ই বা কে বলতে পারে!

যা হোক, এ ঘটনার পর সে কাবা ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নেয়। ঐতিহাসিকরা আবরাহার এ সিদ্ধান্তের পিছনে ধর্মীয় কারণের সাথে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারের উদ্দেশ্যকেও চিহ্নিত করেন। কাবা কেন্দ্রীক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব সম্মানকে ইয়েমেনে স্থানান্তরিত করাও এর উদ্দেশ্য হতে পারে।

৫৭০ অথবা কোনো কোনো বর্ণনা মতে ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে ৬০ হাজার পদাতিক সৈন্য ও ১৩টি (অপর বর্ণনা অনুযায়ী ৯টি) হাতির বিশাল বাহিনী নিয়ে সে কাবার উপর হামলায় অগ্রসর হয়। তার এই হস্তী বাহিনীর প্রধান হাতিটির নাম ছিল ‘মাহমুদ’। কাবার নিকটবর্তী এলাকায় পৌঁছে সে হঠাৎ বসে পড়ে। শত রকম চেষ্টা করেও মাহমুদকে উঠানো যায় না। অন্য কোনো দিকে তাকে চলতে নির্দেশ করলে সে ছুটতে থাকে। কিন্তু কাবামুখী করলেই সে বসে পড়ে। আঘাতে আঘাতে তাকে আহত করে ফেললেও সে কাবার দিকে অগ্রসর হয় না।

পরের দিন আবরাহা যখন তার বাহিনী নিয়ে মক্কায় প্রবেশে উদ্যত হল তখন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি তাদের ঠোঁটে ও পায়ে করে পাথর কণা নিয়ে উড়ে আসে। আর এই বাহিনীর উপর তারা সে পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। যার উপর এ পাথর পড়তো তার দেহে সে স্থানে সাথে সাথে ঘা-এর মতো হয়ে যেত। সাথে সাথে সারা শরীরে চুলকানি শুরু হতো। চুলকাতে চুলকাতে চামড়া ছিড়ে গোস্ত ও রক্ত পানির মতো ঝরতে থাকতো। আবরাহা নিজেও এতে আক্রান্ত হয় এবং পালিয়ে যাওয়ার সময় খাশআম এলাকায় পৌঁছে মৃত্যুবরণ করে। গোটা বাহিনীতে তখন ত্রাস। যে যেভাবে পারে পালাতে চেষ্টা করছে। আর ইয়েমেনের দিকে ফিরতি পথে তাদের লাশগুলো পড়ে থাকে।

মক্কার সন্নিকটে মুযদালিফা ও মিনার মধ্যে মুহাসসির নামক স্থানে ঘটে এ ঘটনা। পরবর্তীতে রসূলুল্লাহ্ (সা.) এ এলাকায় পৌঁছলে তার গতি দ্রুত করে দিতেন। গযবপ্রাপ্ত এলাকা অতিক্রমের জন্য এটাই ছিল তার নীতি। এ ঘটনা সংঘটিত হয় রসূলুল্লাহ্ (সা.) এর জন্মের পঞ্চাশ দিন পূর্বে। এ ঘটনার পর ইয়েমেনের খ্রিস্টানদের প্রভাব-প্রতিপত্তি দ্রুতই শেষ হয়ে যায়। তিন-চার বছরের মধ্যে হাবসী শাসনের পতন ঘটে। এ ঘটনা এত প্রভাবশালী ছিল যে, পরবর্তী ১০ বছর (কোনো কোনো বর্ণনা মতে ৭ বছর) কুরাইশরা এক আল্লাহ্ ছাড়া সব দেব-দেবীর পূজা বর্জন করে। আরববাসীরা এ বছরটিকে নাম দেয় “আমূল ফীল” বা হাতির বছর।

হাতির কথা

হাতি মহান আল্লাহ্ তা’লার অতুলনীয় সৃষ্টিগুলির একটি। স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলির মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ। আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে হাতির বাস। আমাদের দেশেও পার্বত্য চট্টগ্রামে কিছু হাতি আছে। তবে আফ্রিকার হাতি এশিয়ার হাতির তুলনায় বেশ বড়।

হাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর বিশাল শূর। এটি তার নাকের বর্ধিত অংশ। এতে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি মাসল বা পেশী থাকে। এটি তার হাতের মতো কাজ করে। এ দিয়ে সে বিশাল গাছ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ঘাস পর্যন্ত উপড়ে নিতে পারে। এটা পানির উপর জাগিয়ে সে ডুব সাতার কাটে। অন্যান্য সাধারণ কাজ যেমন গোসল, শত্রুর বিরুদ্ধে শক্তিশালী অস্ত্র ইত্যাদির সাথে সাথে এটা এক ধরনের সেনসর (Sensor)-এর মতো কাজ করে। মাটিতে এটি লাগিয়ে অন্যান্য হাতিদের অবস্থান জানতে পারে। নিজের অবস্থানও জানাতে পারে।

হাতি একটা সামাজিক প্রাণী। খুবই সংবেধনশীল এবং প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। এটি মানুষের পোষ মানে, এবং আজো এই যান্ত্রিক যুগে দুর্গম এলাকায় মানুষের নানা প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।

তবে, আজ আমাদের হাতি প্রসংগ তার এই সব গুণ-বৈশিষ্ট্যের কথা নয়। আজ আমাদের প্রসংগ একটা বিশেষ হাতি- মাহমুদ। মাহমুদ তার সৃষ্টির উপযোগিতার জন্য মানুষের সেবা করে যাচ্ছিল। মালিকের হুকুম মেনে কাজ করছিল যেমন করে সৃষ্টিকর্তা তাকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু, যেই মাত্র তার মানুষ মালিক তার সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে নির্দেশ দিলো, তাওহীদের নিশানী কাবা ধ্বংসের নির্দেশ এল, সে তা মানতে অস্বীকার করল।

আবরাহা খ্রিস্টান ছিল। মুশরিক হলেও সে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী বলে দাবিদার ছিল। আল্লাহর নবী ঈসা (আ.) ও আল্লাহর কিতাব ইঞ্জীল তথা বাইবেলে বিশ্বাস করতো। মাহমুদের এহেন কার্যক্রম এক অত্যার্শ্চক ঘটনা। এটা থেকে তার বুঝা উচিত ছিল। শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু স্বৈরাচারী দাম্ভিক মানসিকতার লোকগুলো এমনই হয়ে যায়। সব সুস্থ বিচার বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। পশুর সমান বোধশক্তিও সে হারিয়ে ফেলে।

আল্লাহর ভাষায় “তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না, চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে দেখে না, কান আছে কিন্তু তা দিয়ে সে শোনে না, এরা পশুর মতো, বরং তারা আরো বেশি বিভ্রান্ত। ওরাই গাফিল।” (সূরা আরাফ ৭:১৭৯)

স্বৈরাচারকে বারবার সাবধান করা হয়

কাবার উপর চূড়ান্ত হামলার পূর্বে আবরাহাকে আরেক দফা সতর্ক করা হয়। রসূলুল্লাহ্ (সা.) এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব এ সময় এক অনুপম ভূমিকা পালন করেন। আবরাহার বাহিনী কুরাইশদের গবাদি পশুগুলো আটক করে। আব্দুল মুত্তালিব আবরাহার কাছে সেগুলো ছাড়িয়ে আনতে যান। আবরাহা তার ব্যক্তিত্বে প্রভাবিত হয়। কিন্তু তিনি কেবল তাদের গবাদি পশুর জন্য এসেছেন জেনে সে বিস্মিত হয়। কেন তিনি কাবার নিরাপত্তা নিয়ে কিছু বলছেন না জানতে চাইলে আব্দুল মুত্তালিবের উত্তর ছিল, এই ঘরের একজন মালিক আছেন। তিনিই একে রক্ষা করবেন। আজ অবধি কেউ এর কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। চিন্তার বিষয় আব্দুল মুত্তালিবদের কাছে তখন হেদায়াত নেই। ইব্রাহীম (আ.) এর রেখে যাওয়া আদর্শ নানা বিকৃতির শিকার। তবুও তার এই ঈমানদিপ্ত ঘোষণা চিন্তার খোরাক জোগায়। আমাদে ওয়ারেসাতুল আম্বিয়ারা যদি আজ এতটুকু ঈমানের পরিচয় দিতেন, তাহলে বোধকরি মুসলিম জাতি এ অবস্থায় উপনীত হতে পারতো না।

শিক্ষণীয়

(১) মানুষ সৃষ্টির সেরা। সে আল্লাহর খলিফা। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী তাকে চলতে হবে। সৃষ্টিকে চালাতে হবে। এতে বড় রকম ব্যত্যয় করলে তার উপর আসমানী বিপর্যয় নেমে আসে। আজকের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি— নানা রকম দূরারোগ্য ব্যাধি, মহামারি প্রভৃতি এর নমুনা।

(২) আল্লাহর নিশানাগুলি পবিত্র। যা কিছুর সাথে যথার্থভাবে আল্লাহর পবিত্র নামের সম্পর্ক তাকে সম্মান করতে হবে। কাবার মতোই কুরআন, হাজ্জ, সলাত, সিয়াম, হিজাব ইত্যাদি আল্লাহর হুকুম ও ইবাদাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়। এগুলির সম্মান রক্ষা করা সবার কর্তব্য। মুসলিমরা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে তা-ই ঈমানের দাবি। দুঃখজনকভাবে অমুসলিম দেশগুলির সাথে সাথে মুসলিম দেশগুলিতেও আল্লাহর কালাম, আযান, আল্লাহর বন্দেগীর নিশানী হিজাব প্রভৃতি নিয়ে বিরূপ আচরণ চলছে। কুরআন নিয়ে মুর্খতাসুলভ কথা-বার্তা, প্রচারণা, মনগড়া ব্যাখ্যা করছে কেউ কেউ। হিজাব পড়া নিষিদ্ধ করতে চাইছে কিছু মহল। হিজাব নিষেধাজ্ঞার ফলশ্রুতিতে করোনা ঝড় থেকে বিশ্ব এখনো মুক্তি পায়নি। এর মধ্যেই এ ধরনের ধৃষ্টতা আত্মবিধ্বংসী। আমাদের নিজেদেরই ঈমানী ও অস্তিত্বের স্বার্থে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। নইলে আবরাহার পরিণতি পুনরায় ঘটা অসম্ভব নয়।

(৩) অহংকার ও স্বৈরাচারী মানসিকতা পরিহার করতে হবে সকলকে। এর পরিণাম কখনো ভাল হয় না। শুভ বুদ্ধি ও নেক পরামর্শকে মূল্যায়ন করা সর্বমহলে খুবই জরুরি।

(৪) অহংকার, স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী মনোভাব থেকে মুক্তির জন্য সিয়াম। বছর বছর রোজা রাখছি। কিন্তু আমিত্বের অহমিকা থেকে মুক্ত হতে পারছি না। কি শিক্ষিত কি অশিক্ষিত, কি আলেম কি সাধারণ মানুষ, কি রাজনীতিবিদ কি জনগণ। নফসের গোলামীর জায়গায় এক আল্লাহর গোলামী আর অসংযমী আচরণের স্থলে তাকওয়া সৃষ্টির জন্যই রোজা। এ বছরও ১০ রোজা চলে গেল। কতদূর আগালাম সবাই ভেবে দেখি। রসূলুল্লাহর হুঁশিয়ারী মনে রাখি। তিনি অভিশপ্ত করেছেন তাকে যে, রোজা পেল কিন্তু শুদ্ধ হতে পারলো না, গুনাহ হতে মুক্তি পেল না। আচার, আচরণ, চলা-ফেরা, কথা-বার্তা, জীবনবোধ ও জীবনদর্শন, সিদ্ধান্তের ভিত্তি, নিয়ম-রীতির ভিত্তি, আইন-কানুনের উৎস তথা মুমিন জীবনের সবকিছুই আল্লাহর সাথে ও তাঁর আনুগত্যের সাথে সম্পর্কিত। মাহমুদের মতো ঈমানও যদি আমাদের না থাকে তো আফসোস। আল্লাহ্ তা’লা সবাইকে বুঝ দিন। আমীন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর