আপনি পড়ছেন

পাকিস্তানের সদ্যসাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই দলের এমপিরা পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামতে যাচ্ছেন। বুধবার ইশার নামাজের পর পেশাওয়ারে এক জনসভার মাধ্যমে ইমরান খান তার এক দফা দাবির আন্দোলন শুরু করবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ইমরান কি তার এ দাবি আদায় করতে পারবেন? যদি না পারেন, সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের নতুন সরকার ও পার্লামেন্ট কি বিরোধীদল ছাড়াই কার্যক্রম চালাতে পারবে?

imran khan pti chiefপিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান, ফাইল ছবি

আপাত: দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদগুলো থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে পিটিআই এক ধরনের রাজনৈতিক জুয়া খেলতে চলেছে। পিটিআইকে সরিয়ে ক্ষমতা নেওয়া দলগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাঠ দখলে রাখার পাশাপাশি আগাম নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইমরান খানের এ কৌশল সফল হলে ভালো কথা। কিন্তু এতে তার সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দলটি আরও গুরুতর সংকটে পড়তে পারে।

পাকিস্তানি দৈনিক দ্য নিউজ জানিয়েছে, জাতীয় পরিষদ থেকে পদত্যাগের প্রশ্নকে ঘিরে সোমবার দুপুরে পিটিআই পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠকে মতদ্বৈততা দেখা গেছে। দুই প্রভাবশালী নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী ও শেখ রশিদ আহমাদ পরপর পিটিআই এমপিরা একযোগে পদত্যাগ করবেন বলে জানালেও দলের উদীয়মান নেতা ও বলিষ্ঠ পার্লামেন্টারিয়ান আলী মুহাম্মাদ খান বলেছেন, এমএনএ’দের মধ্যে ৯৫ শতাংশই পার্লামেন্ট ছাড়ার বিপক্ষে। দলীয় ফোরামে মতভিন্নতা যা-ই থাকুক, শেষ পর্যন্ত ইমরান খানের নেতৃত্বে পিটিআই এমপিরা নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নির্বাচনের আগেই পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছেন।

ইমরান খান বলেছেন, দেশের বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া কোনো সরকারের সঙ্গে পার্লামেন্টে বসতে তিনি নৈতিক সম্মতি বোধ করছেন না। এর মাধ্যমে তার ভাষায় ‘আমদানিকৃত সরকার’ বৈধতা পায় বলে তিনি মনে করছেন। অবিলম্বে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেছেন, এটাই একমাত্র পথ যার মাধ্যমে জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে তারা কাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়।

ইমরান খান এরইমধ্যে বুধবার পেশাওয়ার ও শনিবার করাচিতে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর ২৩ এপ্রিল শনিবার তিনি লাহোরে সমাবেশ করবেন। গত দুদিনে পিটিআইয়ের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোতে পোস্টকৃত বেশকিছু ভিডিওচিত্রে সাবেক স্পিকার আসাদ কায়সার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ, অর্থমন্ত্রী আসাদ উমরসহ দলের প্রভাবশালী নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দেখা গেছে। বুঝা যাচ্ছে, নির্বাচনের দাবিতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলাই পিটিআইয়ের লক্ষ্য। এজন্য দলটি পার্লামেন্ট ছেড়ে রাজপথে পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করতে চাইছে।

পিটিআইয়ের একটি অংশ মনে করছে, আন্দোলনের মাধ্যমে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন), পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (জেইউআই) জোট সরকারকে গোড়া থেকে চাপে রাখলে জনসমর্থন বাড়বে। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে আগাম নির্বাচন আয়োজনের জন্য পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদগুলো থেকে দলের সাড়ে তিনশ’র বেশি এমএনএ ও এমএলএ পদত্যাগ করলে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) আগাম নির্বাচন আয়োজনের চাপ বোধ করবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আগাম নির্বাচনের জন্য পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন কতটুকু প্রস্তুত? পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব লেজিসলেটিভ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সির (পিআইএলডিএটি) প্রেসিডেন্ট আহমেদ বিলাল মেহবুব মনে করেন, তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নাও হতে পারে। সীমানা পুনঃনির্ধারণের কাজ শেষ করতে চার মাস লাগবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের আসন সংখ্যা পরিবর্তন হওয়ায় কমিশন চাইলেও পুরানো আদমশুমারি ও নির্বাচনী এলাকার ভিত্তিতে নির্বাচন করতে পারবে না।

পিটিআই এমপিরা পদত্যাগ করায় কার্যত: বিরোধী দলহীন হয়ে পড়েছে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট। এ অবস্থায় শাহবাজ শরিফের ক্ষমতাসীন জোট কিভাবে কার্যক্রম চালাবে, তাও দেখার বিষয়। নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ, জাতীয় জবাবদিহিতা ব্যুরো (ন্যাব) চেয়ারম্যান নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের মতো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত পার্লামেন্ট নেতা ও বিরোধী দলীয় নেতার আলোচনার ভিত্তিতে নিতে হয়। এখন পিটিআইয়ের যে কয়জন বিদ্রোহী এমপি দলের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে, তারা যদি নিজেদের বিরোধী দল ঘোষণা দিয়ে শাহবাজ শরিফের সরকারকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে, তাহলে আইনত: কার্যক্রম চালাতে বাধা নেই।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কারো কারো মতে, পার্লামেন্ট ছেড়ে নির্বাচনের দাবিতে নামার কৌশল পিটিআইয়ের জন্য আত্মঘাতী হয়ে দেখা দিতে পারে। নির্বাচন কমিশন শূন্য আসনগুলোতে উপ-নির্বাচন আয়োজন করলে পিএমএল (এন), পিপিপি, জেইউআই, এমকিউএম জোট এসব আসনে বিনা বাধায় জেতার সুযোগ পাবে। এমন পরিস্থিতিতে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাগিয়ে নিয়ে এ জোট নিজেদের মর্জিমাফিক আইন প্রণয়ন করবে এবং পিটিআইকে নানাভাবে হয়রানি, চাপপ্রয়োগ করবে।

এরইমধ্যে পিটিআইয়ের সাজ্জাদ জহির, ইমরান আহমদ খানসহ বেশ কয়েকজনের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, যদিও ইসলামাবাদ হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়ে পিটিআই নেতারা এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করিয়েছেন। একইভাবে পিটিআইয়ের সোশ্যাল মিডিয়া উইংয়ের বেশ কয়েকজনকে পুলিশি হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এভাবে হয়রানি হলে শেষ পর্যন্ত দলটি কর্মী-সমর্থকদের কতদিন মাঠে রাখতে পারবে, সে প্রশ্ন এসে যায়।

ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের ঘোষণা দেওয়া নুর আলমের মতো পিটিআইয়ের কয়েকজন এমপি এখনও দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদত্যাগ করেনি। অন্যরাও হয়রানি-নিপীড়ন ও প্রলোভনের মুখে পিটিআই ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাকিস্তানের যা রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তাতে ক্ষমতাসীন জোট নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন পাল্টালে অথবা নিজেদের সুবিধামতো নির্বাচনী এলাকাগুলোর সীমানা পুনঃনির্ধারণ করলেও ভোটের রাজনীতিতে পিটিআইকে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।

রাজপথে নামা পিটিআই, আওয়ামী মুসলিম লীগ জোট আর ক্ষমতায় থাকা পিএমএল (এন), পিপিপি, জেইউআই, এমকিউএম জোটের দ্বৈরথে শেষ পর্যন্ত কী হতে যাচ্ছে, তার আভাস পেতে হয়তো চলতি মাসের শেষ অথবা ঈদের পর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.