আপনি পড়ছেন

মহান আল্লাহ্ তা’লা বলেন, “তোমরা ধাবমান হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের ন্যায়, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য।

the holy quranআল কুরআন, ফাইল ছবি

যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণদেরকে ভালবাসেন;

আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজের প্রতি যুলুম করলে আল্লাহ্কে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ্ ছাড়া কে পাপ ক্ষমা করবে? এবং তারা যা করে ফেলে, জেনে শুনে তারই পুনরাবৃত্তি করে না।

এরাই তারা, যাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের ক্ষমা এবং জান্নাত যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কত উত্তম।” (সূরা আলে-ইমরান ১৩৩-১৩৬)

রসূলুল্লাহ্ (সা.) তার সাহাবীদের নিয়ে মক্কা ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। হিযরত করে গেলেন মদীনাতে। কিন্তু ইসলাম বিরোধী শক্তি তাদের ছাড়লো না। বারবার হামলা চালালো মদীনার উপর। একে একে সংঘটিত হল বদর, উহুদ, খন্দক প্রভৃতি যুদ্ধ। এটিই বোধকরি ইসলাম বিরোধী শক্তির চিরন্তন ধর্মীয় স্বাধীনতার নীতি- ‘তোমরা ধর্মীয়ভাবে “স্বাধীন” আমাদের ধর্ম, মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের ব্যাপারে। অন্য কোনো চিন্তাধারা অনুসরণ চরম অধার্মিকতা। তারা Heathen, ধর্মহীন, বর্বর অসভ্য মানুষ।’ এজন্যই ইউরোপীয়রা আমেরিকাভূমি দখলের পর তা শুদ্ধ-পবিত্র করার জন্য রেডইন্ডিয়ানদের মেরে কেটে নির্বংশ করে দিল। যে ক’জন বেঁচে থাকলো তাদের জোরপূর্বক খ্রিস্টান নাম দিয়ে খ্রিস্ট ধর্মে দিক্ষিত করলো। Edward Said- এর ভাষায়—

“Thay weren’t like us and for that reason deserved to be ruled.” (Culture and Imperialism)

‘তুমি আমার মতো নও, তাই আমার গোলামীই তোমার ভাগ্যের লিখন’-সাদা চামড়ার মুনিবেরা এই অধিকারে কয়েকশত বছর কোটি কোটি বনী আদমকে দাসত্বের নিগড়ে আটকে রেখেছে। যে দাসত্ব কাটেনি আজো। যার দুর্গন্ধ বের হয় আজো কানাডার মিশনারী স্কুলে রেড ইন্ডিয়ান শিশুদের গণকবর হতে। তার থেকেও বড় গোলামী চলে আসছে ধর্মের নামে ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতে। বর্ণবাদী আর্যরা ধর্মের নামে হাজার হাজার বছর ধরে আজো কোটি কোটি মানুষকে অচ্ছুৎ-দলিত বানিয়ে রেখেছে। আজো তারা ভিন্ন রং, ভিন্ন চিন্তা ও ভিন্ন ধর্মের লোকদের মানুষ ভাবতে রাজী নয়। তবুও বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ!

White man’s burden

সাদা আদমীদের বোঝা-বাকী বিশ্বকে সুসভ্য করার স্বর্গীয় দায়িত্ব:

“a duty formerly asserted by white people to manage the affairs of nonwhite people whom they believed to be less developed.’ (Merriam-Webster)

Wikipedia-র ভাষায়

“The imperialist interpretation of The White Man’s Burden” (1899) proposes that the white race is morally obliged to civilise the non-white people of the planet Earth, and to encourage their progress (economic, social, and cultural) through colonialism.”

অর্থাৎ কিনা সাদা চামড়ার মানুষদের উপর পৃথিবী নামক এই গ্রহটির অ-সাদা মানুষদের সভ্য করার মহান দায়িত্ব অর্পিত। এটি তাদের উপর নৈতিক বাধ্যবাধকতা। বাকী সব মানুষদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে উন্নত করতে হবে যে। আর তা করতে হবে তাদের দেশগুলি দখলের মাধ্যমে ঔপনৈবেশিক শাসনের মাধ্যমে মানুষগুলোকে দাস বানিয়ে। সভ্যতার দায় বলে কথা!

কতবার যে স্বাধীন হলাম। দাসত্বের অনুভূতিই কাটলো না। তাই বুঝি আমাদের মা-বোনেরা ফেস-ক্রিম মেখে প্রভুদের রং ধারণ করার মহৎ প্রচেষ্টায় ব্যস্ত। বিউটি পার্লারের ব্যবসা এই মানসিক গোলামীর জন্যই এত রমরমা।

(White Man’s Burden’ Rudyard Kipling-এর একটি কবিতার শিরোনাম। যাতে সাম্রাজ্যবাদী এই কবি ফিলিস্তিন দীপপুঞ্জের মানুষদের সুসভ্য করার মহান দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আমেরিকানদের উদ্বুদ্ধ করেন।)

মানুষের উপর মানুষের এই দাসত্বের কাহিনী আজ নতুন নয়। যুগে যুগে চলে এসেছে। নানা দেশে নানা জাতিতে, নানা সুরতে, মানবের দাসত্ব থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্যই মহাপ্রভু আল্লাহ্ তা’লা “ইসলাম” নামের নেয়ামত দান করেছেন। কিন্তু দাস মালিকেরা, সমাজ প্রভুরা তা মানতে রাজী নয়। তখনো, এখনো।

অত্যাচারে জর্জরিত নবী (সা.) তার সাথীদের নিয়ে মক্কা ছেড়ে চলে এলেও ‘মালিকপক্ষ’ তাদের ছাড়লো না। মুক্তির স্বাদ একবার পেলে গোলামীর অর্থনীতি আর রাজনীতি টেকানো যাবে না, এ ভয়াবহ বিপদ থেকে মানবতাকে উদ্ধারের মহান দায়িত্বের তাগিদে তারা বারবার মদীনার উপর ঝাপিয়ে পড়লো- বদর, উহুদ, খন্দকে।

আজকের নিবন্ধের শুরুতে উদ্ধৃত আয়াতগুলি উহুদ যুদ্ধের পর নাযিল হয়। সূরা আলে-ইমরানের ১৩ রুকু থেকে ২০ রুকু পর্যন্ত দীর্ঘ হেদায়াত দেওয়া হয় মুমিনদের।

উহুদ যুদ্ধ

হিযরতের তৃতীয় বছর শাওয়াল মাস। নবী (সা.) আগেই খবর পেয়েছিলেন মক্কা হতে তিন হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী মদীনা হামলার জন্য অগ্রসর হচ্ছে। পরামর্শ সভায় করণীয় বিষয়ে মতামত আহবান করলেন তিনি। অধিকাংশের আগ্রহের দিকে লক্ষ্য রেখে নিজ মতের বিপক্ষে মদীনার বাইরে গিয়ে তাদের মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। এক হাজার লোকের এক বাহিনী প্রস্তুত হল। পথিমধ্যে কোচের সাপ মুনাফিকরা তিনশ লোক নিয়ে ফিরে গেলো। অবশিষ্ট সাতশত সাহাবী নিয়ে রসূল (সা.) তিনগুণেরও বেশি এই বাহিনী মোকাবেলায় অগ্রসর হলেন।

যুদ্ধের প্রথমভাগে মুসলমানরা আল্লাহর রহমতে বিজয়ী হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু গণিমত তথা পলায়নপর শত্রু-সৈন্যদের ফেলে যাওয়া সামগ্রী লাভের আশায় একদল তাদের কৌশলগত (Strategic) অবস্থান থেকে সরে এলো।

মক্কার ঘোড়সওয়ার বাহিনী যাদের আটকানোর জন্য রসূল এই লোকদের সেখানে পাহাড়ায় রেখেছিলেন, তারা সুযোগ পেয়ে গেল। মুসলমানরা পিছন দিক থেকে হামলার শিকার হয়ে পড়লো। ওদিকে সুযোগ বুঝে হানাদার বাহিনীর পলায়নপর অংশও ঘুরে দাঁড়ালো। ফলে মুসলমানরা পড়ে গেল দু’বাহিনীর মাঝে। নিমিষে বিজয় পরিণত হলো বিপর্যয়ে। মুসলিম বাহিনী ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়লো। হামযা (রা)-সহ শহীদ হলেন ৭০ জন। রটিয়ে দেওয়া হল রসূলুল্লাহ্ও শহীদ হয়েছেন। ভগ্ন হৃদয় মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়লো।

এক পর্যায়ে তারা বুঝলো রসূল (সা.) জীবিত আছেন। ক্ষুদ্র একটা দল রসূলকে কেন্দ্র করে প্রতিরোধ গড়ে তুললো। হানাদারেরা ভাবলো যথেষ্ট হয়েছে। তারা আরো ক্ষয়-ক্ষতির ভয়ে ফিরে গেল। অরক্ষিত মদীনা হামলার কথা রব্বুল আ’লামীনের কৃপায় তারা ভুলেই গেল। তাদের মনে যেন এ চিন্তা না আসে যুদ্ধের পরদিন রসূল (সা.) তার আহত সাথীদের নিয়ে মাক্কী হানাদারদের পশ্চাদধাবন করলেন। প্রমাদ গুণে তারাও আর এগুলো না। যুদ্ধের পর আল্লাহ্ তা’লা এই বিপর্যয়ের মূল কারণ ব্যাখ্যা করে হেদায়াত দান করেন সূরা আলে-ইমরানের শেষ আটটি রুকুতে।

অপর মানুষের গোলামী থেকে মুক্ত হতে হলে নিজের গোলামী থেকে মুক্ত হতে হবে আগে:

মুসলমানদের এক বিরাট অংশ তখনো নবীন মুসলিম। অন্যদেরও আত্মিক ও নৈতিক পরিশুদ্ধি তখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। সবে মাত্র দু’বছর তারা রমজানের রোজা রেখেছে। ঈমানী মনোবলে মজবুত হলেও নৈতিক প্রশিক্ষণ অনেক বাকী প্রথম এই ইসলামী সমাজের সদস্যদের। ‘দুনিয়ার লোভ ও মৃত্যুভয়’-ঈমানের পথে এ দুই অন্তরায়। এর থেকে মুক্ত হতে হবে। রসূল (স.) এর এক হাদীসে অনাগত মুসলিমদেরও সাবধান করেছেন এ বিষয়ে। তিনি বলেন-

“শীঘ্রই মানুষ তোমাদেরকে আক্রমণ করার জন্য (অন্যদের) আহবান করতে থাকবে। যেভাবে মানুষ তাদের সাথে খাবার খাওয়ার জন্য একে-অন্যকে আহবান করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হব?’ তিনি (সা.) বললেন, ‘না, বরং তোমরা সংখ্যায় হবে অগণিত। কিন্তু তোমরা হবে সমুদ্রের ফেনার মতো, যাকে সহজেই সামুদ্রিক স্রোত বয়ে নিয়ে যায় এবং আল্লাহ্ তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন এবং তোমাদের অন্তরে ‘আল-ওয়াহ্হান’ ঢুকিয়ে দিবেন।’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল, আল-ওয়াহ্হান’ কি?’ তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার মহব্বত ও মৃত্যুর ভয়।’ (মুসনাদে আহমদ)

আজকের আলোচ্য আয়াতগুলিতে এ বিষয়েই কিছু হেদায়াত আমরা পাই।

(১) দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী খর্বাকৃতি ভোগ নয় জান্নাতই কাম্য: একটা ঘোড়া, একটা বর্ম বা মনিমুক্তা খচিত একটা তরবারী এই তো ছিল সেই গণীমতের মালের মধ্যে! আল্লাহর আহবান এই সামান্য জিনিসের লোভে দীগন্ত বিস্তৃত জান্নাত হারাবে কেন তোমরা? যাতে এবটা লাঠি বা চাবুক রাখার জায়গা আসমান ও দুনিয়ায় যা আছে তার থেকে মূল্যবান। আজকের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করুন। ঢাকা শহরে ছোট একটা জমি বা ফ্ল্যাটের জন্য মানুষ জীবন শেষ করে দিচ্ছে। একটু আরামের আশায় নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে দুর্নীতি করছে। দুর্নীতি করে যা পাচ্ছে তা কি ভোগ করতে পারছে। জরা-বার্ধক্য, রোগ বালাই-অসুস্থতা, মানুষের শত্রুতা সব সুখ কেড়ে নেয়। এটাই দুনিয়া। তাই আল্লাহ্পাক ছুটতে বললেন ওই অক্ষয়-অব্যয়-অসীম জান্নাতের দিকে। যেখানে নেয়ামত শেষ হবে না। যৌবন শেষ হবে না। সুখ শেষ হবে না। থাকবে না কোনো সমস্যা-ঝামেলা রোগ-বালাই, বাজে কথা।

(২) মাল-সম্পদের গোলামী ছাড়তে হবে: সম্পদের পিছনে ছুটে কত মানুষ নিজের জীবন পানি করছে। হয়তো বা সম্পদ এলো। হয়তো বা না। তৃপ্তি এলো না। বরং বাড়তি সম্পদ নিয়ে এলো বাড়তি সমস্যা, স্ত্রী-সন্তানের অবাধ্যতা, বিপথগামীতা, হিংসুকের হিংসামী। সর্বোপরি ভুলিয়ে দিল আখিরাতের কথা, জান্নাতের কথা, জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য চেষ্টার কথা। নিজের প্রকৃত বাড়ির কথা ভুলে যে ক্ষণস্থায়ী পরীক্ষার স্থানকে বাড়ি মনে করে বসে আছে তার মতো নির্বোধ আর কে? তাই দান করার নির্দেশ এল। যে অবস্থাতেই থাক, খরচ করো। আটকে রেখো না তাহলে তোমারটাও আটকে রাখা হবে। (বুখারী) সচ্ছল হও বা অসচ্ছল। সাধ্যমতো খরচ করো, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আত্মীয়-পরিজন-প্রতিবেশীর জন্য, আল্লাহর দ্বীনের পথে। কোনো খাত যেন বাদ না যায়।

(৩) নাফসানিয়াত তথা অহমবোধের লাগাম টেনে ধর: রাগ সংবরণ করতে হবে। মানুষের উপর আমার অধিকারের চেয়ে আমার উপর আল্লাহর অধিকার বহুগুণ বেশি। আমি কি তাঁর সব হক অধিকার আদায় করতে পারছি? পারছি না। তিনি তো আমায় মাফ করছেন। আমি কেন মাফ করতে পারবো না। বস্তুত: অধিকাংশ রাগের উৎস অহমিকা। তাই ক্রোধ বর্জন ও মানুষদের ক্ষমার নির্দেশ এসেছে।

(৪) অশ্লীলতাকে বর্জন করতে হবে: যিনার কাছেও যেও না’ (সূরা বনী ইসরাঈল) রসূল (সা.) ব্যাখ্যা করে বলেছেন, প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যিনা আছে- চোখ-কান-অন্তরের বাসনা। অতঃপর যৌনাঙ্গ তাকে পূর্ণতা দেয়। যা কিছু অন্তরে অশ্লীলতার উদ্রেক ঘটায় তা বর্জন করি। পকেটে পকেটে পার্সে-পার্সে যেনার বাহন স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, অশ্লীল মুভি, পর্নোগ্রাফি, নাটক, পোস্ট, চ্যাটিং। আছে টিভি প্রোগ্রাম দেশী-বিদেশী-ভারতীয়-তুর্কি সিরিয়াল। বর্জন করি। অশ্লীলতা ইবাদাতের মাধুর্য কেড়ে নেয়। পর্নোগ্রাফী অন্যের ফ্যান্টাসী আপনার মনে গেঁথে পরিবারের সুখ কেড়ে নেয়। জান্নাত কেড়ে নেয়।

(৫) সব পাপই নিজের প্রতি যুলুম: পাপের পরিণামেই আসে দুনিয়ার অশান্তি আর আখিরাতের শাস্তি। তাই আল্লাহ্ পাপ কাজকে বান্দার নিজের প্রতি যুলুম আখ্যা দিয়েছেন। সব ধরনের পাপ কাজ বর্জন করি। মিথ্যাচার, গিবত, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, অন্যের হক মেরে দেওয়া, অত্যাচার-জুলুম এ সব আমাদের নিজেদের জীবনগুলিই ধ্বংস করে দিচ্ছে।

(৬) তাওবা ইস্তেগফার: আল্লাহ্ রহমানুর রহীম। তিনি জানেন, বান্দা পাপে নিমজ্জিত হবে। শয়তান তার পদস্খলন ঘটাবে। বান্দা আন্তরিক তাওবা করলে তিনি তা মাফ করে দিবেন। তিনি বলেন- “হে আমার বান্দারা যারা (পাপের মাধ্যমে) নিজেদের প্রতি যুলুম করেছ, তারা আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের সব পাপ ক্ষমা করে দিবেন।” (সূরা যুমার ৩৯: ৫৩)

(৭) পাপের পুনরাবৃত্তি থেকে বাঁচতে হবে: অনেকে আছে পাপ করে পরে তাওবা করে নিবে এই চিন্তায়। অনেকে তাওবা করে কিন্তু পাপ ছাড়ে না। আমরা দুর্বল মানুষ। তাওবার পরও দুর্বল মুহূর্তে পাপের পুনরাবৃত্তি ঘটে যেতে পারে। তাহলে পুনরায় তাওবা করি। তাওবায় আন্তরিক হই পাপের উৎসগুলি, পরিবেশ ও সংস্রব-সম্পর্কগুলি সম্বন্ধে সাবধান হই। যেসব কাজ পাপ কাজের ট্রিগার হিসেবে কাজ করে সেগুলি থেকে দূরে থাকি। মনে রাখি, প্রকৃত তাওবার ৬টি শর্ত:

(১) যা কিছু ঘটেছে তার জন্য লজ্জিত হওয়া;
(২) নিজের যে কর্তব্য ও করণীয় বিষয়ে গাফলতি হয়েছ তা সম্পাদন কর;
(৩) যার হক নষ্ট হয়েছে তাকে তা ফিরিয়ে দেওয়া;
(৪) যাকে কষ্ট দিয়েছ তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেওয়া;
(৫) ভবিষ্যতে আর এ গোনাহ করবে না তার প্রতিজ্ঞা করা; এবং
(৬) নফসকে এতদিন পর্যন্ত যেভাবে গোনাহর কাজে অভ্যস্ত করেছ, ঠিক তেমনিভাবে তাকে আল্লাহর আনুগত্যে নিয়োজিত কর। এতদিন নফসকে যেভাবে আল্লাহর অবাধ্যতার মজায় নিয়োজিত রেখেছিলে এখন তাকে তেমনি আল্লাহর আনুগত্যের তিক্ত স্বাদ আস্বাদন করাও। (কাশশাফ) (জনৈক ব্যক্তিকে প্রকৃত তওবা সম্পর্কে নসীহত করতে গিয়ে হযরত আলী কথাগুলি বলেন।)

রমজান এক মহাসুযোগ

আজকের আয়াত কটির উপর আমলের মহাসুযোগ এনে দিয়েছে রমজান। এ সব কাজই রমজানের আমলের অন্তর্ভুক্ত:

(১) বেশি বেশি দান-সাদাকা
(২) রাগ-ক্রোধ সংবরণ করা,
(৩) মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল হওয়া,
(৪) অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজগুলি বর্জন ও আত্মসংযম,
(৫) বেশি বেশি তাওবা-ইস্তেগফার।

আসুন, শুধু না খেয়ে থাকা নয়। রমজানকে আত্মজাগরণে ব্যবহার করি। আত্মিক উন্নতির কাজে লাগাই। বদ খাসলতগুলি ঝেড়ে ফেলি। গুনাহগুলি বর্জন করি। নামকাওয়াস্তে নয় প্রকৃত মুমিন হই। আদর্শ মুসলিম হই। আল্লাহর রহমতের পথে হাঁটি। দিগন্ত বিস্তৃত জান্নাতের পথে দ্রুত অগ্রসর হই। মহান আল্লাহ্ আমাকে আপনাকে সেই তাওফীক দান করুন। আমীন।।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর