দেউলিয়া হওয়ার পথেই এগোচ্ছে পাকিস্তান!

ঠিক যেন শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হওয়ার পথেই এগোচ্ছে পাকস্তিান। রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যেই দেশটিতে বিষফোঁড়ার মতো জেঁকে বসেছে আর্থিক টানাপড়েন । কোষাগারের পরিস্থিতি এমন যে বিদেশ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস বা কয়লা আমদানি করতে পারছে না ইসলামাবাদ। যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় গৃহস্থালি এবং শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে বাধ্য হচ্ছে পাকিস্তান সরকার। এএফপি, দ্য ডন।

পাকিস্তানের অর্থনীতি, ছবি- আরব নিউজ

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি-গ্যাস এবং কয়লার দাম গত মাসে রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি বাজার থেকে গ্যাস-জ্বালানি কিনতে পারছে না। শক্তি উৎপাদনের পেছনে পাকিস্তানের গত এক বছরে ১৫০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। চরম এই টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই কিছুদিন আগে সরকার পরিবর্তন হয়েছে।

সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের কাছে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দেশের আর্থিক সংকট মোকাবেলা। বিদ্যুৎ সংকট তার মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তানের নিজস্ব জ্বালানির উৎস নেই। তাই বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীল পাকিস্তান। আমদানিতেই কোষাগারের অনেকটা খরচ হয়। তার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের জেরে জ্বালানির দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে। গত কয়েক মাসে পাকিস্তানকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারীরা বহু রপ্তানি বাতিল করেছে।

পাকিস্তানে জ্বালানি সংকট: অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল এক টুইটে জানিয়েছেন, জ্বালানির অভাবে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঘাটতিতেই চলেছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে প্রায় একই পরিমাণের বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত হয়েছে। করাচির আরিফ হাবিব লিমিটেডের গবেষণা প্রধান তাহির আব্বাসের মতে, বিদ্যুতের বর্তমান উৎপাদন প্রায় ৭ হাজার মেগাওয়াটে নেমেছে- যা মোট উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ।

বিদ্যুৎখাত বড় চ্যালেঞ্জ: পাকিস্তান জ্বালানি আমদানির ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শরিফের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী এখনো জ্বালানিমন্ত্রী নিয়োগ করেননি। পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি সরবরাহকারীরা গত কয়েক মাস ধরে সরবরাহের জন্য নির্ধারিত বেশ কয়েকটি চালান বাতিল করেছে- যে কারণে সরবরাহ আরও সঙ্কুচিত হয়েছে। দেশটি স্পট বাজার থেকে ছয়টি এলএনজি কার্গো সংগ্রহের জন্য রোববার একটি টেন্ডার প্রকাশ করেছে।

টেন্ডারটি পাশ হলে সরকারকে কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হতে পারে। পাকিস্তান কুয়েত ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির গবেষণা প্রধান সামিউল্লাহ তারিক বলেছেন, ‘যেহেতু বৈশ্বিকভাবেই জ্বালানি খাতে গতিশীলতা আসেনি, সে কারণে পাকিস্তানের জ্বালানি পরিস্থিতি শিগগিরই পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

সংবাদ সংস্থা এএনআই ও এআরওয়াই নিউজ জানিয়েছে, করাচির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- কোরাঙ্গি, ল্যান্ডি, রেলওয়ে কলোনি, নুসরাত ভুট্টো কলোনি, খাজা আজমাইর নাগরী, পাপোশ নগর, লিয়াকত মার্কেট, মালির, গুলিস্তান-ই-জওহর ব্লক-২, কোরাঙ্গি সেক্টর ৩০, ৩১ প্রভৃতি এলাকা। ব্যাপক লোডশেডিংয়ের শিকার করাচির লোকজন ঘুটঘুটে অন্ধকারে নামাজ পড়তে বাধ্য হচ্ছেন।