হাথুরুসিংহের মন জয় এবং রুবেলের রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তন

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০০৮ সালে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজে ওয়ানডে দলে ডাক পান বাঁহাতি অলরাউন্ডার মোশাররফ হোসেন রুবেল। চট্টগ্রাম ও মিরপুর মিলে তিন ওয়ানডেতে ১ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। তারপরই দল থেকে বাদ পড়েন রুবেল।

রুবেলের রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তন

তারপর ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করলেও জাতীয় দলের দরজা আর খুলছিল না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার স্বপ্ন তখন কার্যত তিমিরে হারিয়েছে। কিন্তু হুট করেই সাড়ে ৮ বছর পর রোমাঞ্চকর এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখেন রুবেল। প্রায় ফুরিয়ে যাওয়া ক্যারিয়ারে লাগে নতুন আলোর ঝলকানি। আবারও ওয়ানডে দলে ডাক পান রুবেল। ২০১৬ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজের দলে সুযোগ পান।

ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তান সিরিজের কন্ডিশনিং ক্যাম্পের জন্য ৩০ সদস্যের দল ঘোষণা করে বিসিবি। শুরুতে সেই দলে ছিলেন না রুবেল। অনুশীলন করছিলেন এইচপি ক্যাম্পের স্পিন ইউনিটে। যেখানে ভারতের ভেঙ্কটেশ রাজু স্পিন পরামর্শক হয়ে এসেছিলেন। নেটে রুবেলের বোলিং দেখে ভারতীয় এই কোচই জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্টকে রুবেলের বিষয়ে সুপারিশ করে যান।

তখন জাতীয় দলে সাকিবের পাশাপাশি দ্বিতীয় বাঁহাতি স্পিনার ছিলেন আরাফাত সানি। বোলিং অ্যাকশনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সানিও দলে ছিলেন না। তখনকার হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় বাঁহাতি স্পিনারের সন্ধানে ছিলেন। নির্বাচকরা সোহরাওয়ার্দী শুভকে তুলে আনলেও হাথুরুসিংহে তার বোলিংয়ে খুশি হতে পারেননি। নির্বাচকদের কাছে বিকল্প চেয়েছিলেন। তখন নির্বাচকরা রুবেলের নাম বলেন লঙ্কান এই কোচকে। পরেই ক্যাম্পে ডাক পড়ে এই বাঁহাতি স্পিনারের।

কিন্তু নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন যখন কল করেছিলেন, তখন রুবেল কলকাতায়। পরদিনই রিপোর্ট করতে বলা হয়েছিল তাকে। ফ্লাইট না পেয়ে ট্যাক্সি যোগে কলকাতা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল স্থলসীমান্ত দিয়ে ঢাকায় আসেন রুবেল। অনুশীলনে মন জয় করেন হেড কোচের। দীর্ঘ বিরতির পর ফেরেন ওয়ানডে দলে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে একাদশে সুযোগ পাননি রুবেল। তৃতীয় ওয়ানডেতে প্রত্যাবর্তনের মধুর গল্প লেখেন তিনি। যেন দ্বিতীয় অভিষেকের রোমাঞ্চে ভাসেন। ৮ ওভারে ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন রুবেল। পরের সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক ওয়ানডে খেলেছেন, আশানুরূপ বোলিং করতে না পারায় বাদ পড়েন তিনি।

তারপরও শতভাগ নিবেদন দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে টানা খেলে গেছেন রুবেল। ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার পরই তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যবনিকা পাত হয়। গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে পৃথিবী থেকে তো চিরবিদায়ই নিলেন রুবেল।