যে কারণে কদর রজনীর এত মর্যাদা
- Details
- by মেরাজুল ইসলাম
মানবজাতির তাকদির এবং হেদায়াতের বিধান আল্লাহ তায়ালা জগত সৃষ্টির অনেক আগেই লাওহে মাহফুজে লিখে রেখেছেন। সেই হেদায়াত তথা কোরআন যে রাতে দুনিয়ার আসমানে নাজিল হয়েছে সে রাতটি অবশ্যই সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ।
বুঝার বিষয় হলো কোরআন নাজিলের কারণে একটি সাধারণ রাত কীভাবে অসাধারণ মর্যদার অধিকারী হয়ে যায়! কোরআনের বরকতে এ রাতটি দুনিয়ার মানুষের হিসেবে আল্লাহতায়ালা এক হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ ঘোষণা দিয়েছেন।
কোরআন উল্লেখ করা হয়েছে, ‘দুনিয়ার মানুষ শোন! আমি এই কোরআনকে মর্যাদাপূর্ণ রাতে নাজিল করেছি। রাতটি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’ সূরা কদর।
মুফাসসিরগণ একটি সূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা বলেন, কোরআন নাজিলের আগেও লাইলাতুল কদর মর্যাদামণ্ডিত ছিল। এক মর্যাদাময় রাতে মর্যাদাপূর্ণ একটি গ্রন্থ নাজিল করেছেন আল্লাহ তায়ালা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কদরের রাতটি কোরআন নাজিলেরও আগে থেকেই মর্যাপূর্ণ হলো কীভাবে? এ প্রশ্নের কয়েকটি জবাব আছে।
১. হজরত ওবাদা ইবনে সামেত (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেন। তারপর কলমকে আদেশ করলেন লিখ। কলম বলল কী লিখব? তখন আদেশ করা হলো খোদায়ি তাকদির লেখ। কলম আদেশানুযায়ী কেয়ামত পর্যন্ত সমগ্র সৃষ্টিজগত ও সৃষ্টির তাকদির লিখে ফেলে।
তাকদির সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা সমগ্র সৃষ্টির তাকদির আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই লিখে রেখেছেন। ওই সময় কলম এটাও লিখেছে, সৃষ্টিজগতে সব রাত ও দিনের মধ্যে লাইলাতুল কদর হবে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। ফলে লাওহে মাহফুজেই নির্ধারিত হয়ে যায়, এ রাতটি কোনো সাধারণ রাত নয়, আশ্চর্য মর্যাদাপূর্ণ রাত।
২. হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি এক গুপ্তভাণ্ডার ছিলাম। আমি প্রকাশ হওয়ার ইচ্ছে করলাম, তাই প্রথমে এমন এক মানব সৃষ্টি করলাম; যার নাম মুহাম্মাদ রাখলাম। যেদিন আল্লাহপাক গুপ্ত থেকে প্রকাশ হয়েছেন সে সময়টা লাইলাতুল কদর ছিল। দুনিয়ার বুকে প্রভুর বাণীও সে রাতেই নাজিল হয়েছে যে রাতে আল্লাহ নিজেকে প্রকাশ করেছেন।
৩. কেউ কেউ বলেন, আল্লাহ যখন নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি করেছেন, সেটি ছিল লাইলাতুল কদর। ফলে কোরান নাজিল ছাড়াও লাইলাতুল কদর এক বিশেষ মর্যাদাময় রাত হয়ে যায়।
কেনো লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ? এ প্রশ্নের উত্তরে মুহাদ্দিসগণ বলেন, এ রাতে কোনো গুনাহগার বান্দা যদি তাওবা ইস্তিগফার করে আল্লাহর দরবারে ইবাদতের মাধ্যমে কান্নাকাটি করে তখন সেও কদরওয়ালা ইনসান তথা মর্যাদাপূর্ণ মানুষ হয়ে যায়। অর্থাৎ এক রাতের ইবাদতে সে হাজার মাস ইবাদতের মর্যাদা পেয়ে যায়।
এ রাতে আগামী এক বছরের সৃষ্টিকুলের তাকদির বণ্টন করা হয়। কেউ হয়ত প্রশ্ন তুলতে পারে, আল্লাহ কীভাবে আগে থেকেই তাকদির লিখে রাখলেন। আল্লাহ যেহেতু মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞ এবং অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন তাই তিনি আগে থেকেই লওহে মাহফুজে মানুষের কর্ম অনুযায়ী ফলাফল নির্ধারণ বা লিখে রেখেছেন।
কোরআনে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপদ আসে তা জগত সৃষ্টির আগেই কিতাবে অর্থাৎ লওহে মাহফুজে লেখা আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। (সূরা হাদীদ: ২২)।
বুঝার বিষয় হলো, আয়াতের শেষে বলছে এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ অর্থাৎ আগে থেকেই লওহে মাহফুজে লিখে রাখাটা মহাশক্তিধর আল্লাহর কাছে কোনো বিষয়ই নয়। যদিও চিন্তা করতে গেলে এ বিষয়ে মানব বুদ্ধি খেই হারিয়ে ফেলে।
লেখক: প্রাবন্ধিক
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর