শরবত বিক্রেতা থেকে যেভাবে আজকের বিশ্বনেতা
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী একসময় চা বিক্রেতা ছিলেন। এ খবরটি অনেকেরই জানা। কিন্তু আজকের বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ও প্রভাবশালী একজন নেতা আছেন, যিনি একসময় শরবত বিক্রেতা ছিলেন, বিষয়টি কজনই বা জানেন? আজকের বিশ্বের প্রভাবশালী নেতা পুতিন আর অদম্য জেলেনস্কি যার কথা অমান্য করতে পারেন না। বাইডেন যার কথা শুনতে উদগ্রীব হয়ে থাকেন। ইসরায়েলও যাকে নিয়ে ঘাঁটাতে চায় না। এককালের মাঠ কাঁপানো ফুটবলার, পুরো মুসলিম বিশ্ব আজ যাকে নিয়ে গর্ব করে। যার কারণে তুরস্ককে আবারো ইসলামের নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি আর কেউ নন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। শরবতওয়ালা হাফেজ সাহেব ফুটবলার এরদোয়ান।
এরদোয়ান
জীবনের পরতে পরতে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন এরদোয়ান। ঋদ্ধ হয়েছেন নানা ঘাত-প্রতিঘাতে। পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ সালে। পিতার স্বল্প আয়ের কারণে ছোটবেলা থেকেই জীবনযুদ্ধে নামতে হয়েছিল। একসময় ইস্তাম্বুলের মেয়র হয়েছিলেন তিনি। সেখানকার রাজপথেই রুটি ও শরবত বিক্রি করে নিজের ও ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতেন কিশোর এরদোয়ান।
পড়ালেখায় খারাপ ছিলেন না। ভালো ফুটবল খেলতেন। আবৃতিতেও পুরস্কার পেয়েছেন এরদোয়ান। একসময় ছুটে গেছেন হাফেজ হওয়ার জন্য। জীবনের সেই লক্ষ্যও পূরণ করেছেন। দেশ-বিদেশে প্রযোজনে অবলীলায় ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন।
কুরআন তেলাওয়াত করছেন হাফেজ এরদোয়ান
ছোটবেলায় মাদরাসায় পড়তেন। সেটা দেখে অনেকে নাক সিটকাতেন। সেই ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে মাদরাসার পড়া শেষ করে কলেজে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থশাস্ত্র ও প্রশাসনিক বিজ্ঞানে ডিগ্রি নেন। অ্যাকাডেমিক পাঠ শেষ করেন ১৯৮১ সালে।
টানাটানির সংসারে বাবা চাইতেন একজন ভালো চাকরিজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুক এরদোয়ান। কিন্তু যিনি জাতি কিংবা বিশ্বের চেঞ্জ মেকার হবেন, তিনি কিভাবে বসে থাকবেন চাকরির ছোট গণ্ডিতে। ১৯৮৪ সাল থেকে সক্রিয় হন রাজনীতিতে।
এ সময় তিনি রাজনৈতিক দল নেকমেতিন এরবাকানস ওয়েলফেয়ার পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৪-১৯৯৮ মেয়াদে ছিলেন ইস্তাম্বুলের মেয়র। দায়িত্ব পালনকালে তিনি ঘনবসতিপূর্ণ শহর ইস্তাম্বুলের ট্রাফিক জ্যাম ও বায়ু দূষণ রোধে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। অল্পসময়ের মধ্যে ইস্তাম্বুলকে আধুনিক শহরে রূপান্তরিত করেন।
একপর্যায়ে সেনাবাহিনী দেশের ক্ষমতা দখল করে এবং ওয়েলফেয়ার পার্টিকে নিষিদ্ধ করে। ১৯৯৯ মাসে চার মাসের কারাদণ্ড ভোগ করেন। ২০০১ সালে আবদুল্লাহ গুলের সাথে মিলে ইসলামপন্থী একে পার্টি গঠন করেন। পরের নির্বাচনেই একে পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং এরদোয়ান প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। সে সময় থেকে দীর্ঘ ১৩ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এরদোয়ান। সেক্যুলার সেনাবাহিনী এ সময় বারবার তাকে উৎখাতের চেষ্টা করে। কিন্তু শক্ত হাতে কৌশলে তা প্রতিহত করে ক্ষমতায় টিকে থাকেন এরদোয়ান।
২০১৪ সালের তিনি তুরস্কের ১২তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এখন পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করছেন। অবশ্য ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এরদোয়ান তুরস্কের সামাজিক, অর্থনীতিসহ সার্বিক খাতে নজর দেন। বহির্বিশ্বের সাথেও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখেন। ধীরে ধীরে তুরস্ককে সারাবিশ্বের রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করান। একেসমযের অস্থিতিশীল তুরস্ক তার নেতৃত্বে মাথা উঁচু করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আজ শুধু দেশ নয়, বিশ্বে শীর্ষ নেতাদের অন্যতম তিনি। বিশ্বের যেখানেই সমস্যা সেখানেই তার সরব উপস্থিতি দেখা যায়। সফল কূটনীতিক হিসেবে এরই মধ্যে যথেষ্ট সফলতা দেখিয়েছেন। বিগত দিনে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বিশ্বজুড়ে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন।
২০১৬ সালে নিজ দেশে যেভাবে অভ্যুত্থান সামলেছেন, তাতে পুরো বিশ্ব তাকে আলাদা নজরে দেখতে বাধ্য হয়েছে। মিত্ররা হয়েছে মুগ্ধ, শত্রুরা বাধ্য হয়েছে সতর্ক হতে। সবমিলিয়ে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন এরদোয়ান।
জীবনের শুরু থেকে সংগ্রাম করা এরদোয়ান সাধাসিধে জীবনে অভ্যস্ত। ২৩ বছর বয়সে বিয়ে করেন আমিনা গুলবারান নামের এক নারীকে। ফার্স্ট লেডি আমিনাও নানা কাজের মধ্যে দেশে-বিদেশে দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। এ দম্পতির চার সন্তান। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে।
ইস্তাম্বুলের রুটি আর শরবত বিক্রেতা সেই দুরন্ত কিশোর আজ বিশ্ব নেতাদের আইডল। মজলুমদের আশ্রয়স্থল হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সবমিলিয়ে এরদোয়ান শুধু একটি নাম নয়, জীবন্ত কিংবদন্তি। নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান, নিজেই একটি ইতিহাস।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.