দেশে দেশে ঈদ: তুরস্কে সেকার বাইরাম, ইন্দোনেশিয়ায় লেবারান

প্রায় একইভাবে সারাবিশ্বে ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। ভাষার পার্থক্যে রীতি-রেওয়াজ-নামে কিছুটা ভিন্নতা এলেও আনন্দ প্রায় একই রকম। তবে ভাষা-ভূখণ্ড-সংস্কৃতির ভিত্তিতে এ আনন্দ বৈচিত্রময়।

তুরস্কে সেকার বাইরাম, ইন্দোনেশিয়ায় লেবারান

সৌদি আরব: দেশটির জাতীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। দিনগুলোতে সরকারি ছুটি থাকে। তাদের একটি প্রচলিত রীতি হলো পুরুষরা তাদের ছেলেমেয়ে, স্ত্রী নিয়ে বাবার বাসায় ঈদ পালন করবে। ঈদ উপলক্ষ্যে খাবার ও উপহার দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। অমুসলিমদেরও দেওয়া হয়। গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। ঘরে ঘরে মিষ্টিজাতীয় খাবার তৈরি করা হয়।

মালয়েশিয়া: মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে ঈদুল ফিতর বড় আকারে উদযাপিত হয়ে থাকে। দিনটি উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকে। সবাই নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করে। ঈদের আগের দিন থেকেই উৎসব পালন করতে দেখা যায়। ঈদের আগের রাতকে বলা হয় তাকবিরান। মসজিদ ও রাস্তায় তাকবির ধ্বনি উচ্চারিত হয়। রাস্তাঘাটে মশাল, আতশবাজি করা হয়। ঐতিহ্যবাহী খাবার রেন্দাং, কেতুপাট, লেমাং রান্না হয়। ঘরে ঘরে প্রচুর পরিমাণে খাবার রান্না করে প্রতিবেশী, এমনকি অমুসলিমদেরও দাওয়াত দেওয়া হয়।

তুরস্ক: ইউরোপের মুসলিম অধ্যুষিত দেশ তুরস্কে ঈদুল ফিতরকে বলা হয় ‘সেকার বাইরাম’- যার অর্থ চিনি উৎসব। এই দিনটিকে সামনে রেখে তুর্কি নারীরা মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন ক্যান্ডি, পুডিং, কেক ও বাকালাভা নামের পেস্ট্রি তৈরি করে থাকেন। ঐতিহ্যগতভাবে এ দিনটিতে ইস্তাম্বুল শহরের ‘বুমস্ক’সহ অন্যান্য মসজিদে বিশেষ আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। ঈদের দিন বিশেষ কায়দায় বয়স্কদের শ্রদ্ধা জানানো তুরস্কের বহু পুরোনো একটি প্রথা। এদিনে তুর্কিরা প্রবীণ ব্যক্তির ডান হাতে চুমু খায় এবং সেই হাতটি তার কপালে ছুঁইয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানায়।

মিশর: ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে তিন দিনের সরকারি ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে পার্ক, সিনেমা, থিয়েটার কিংবা সমুদ্রতটে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন অধিকাংশ মিশরীয়। দিনটিতে মিশরের বিখ্যাত অবকাশযাপন কেন্দ্র ‘শারম আল শেখ’-এ উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ খাবারের মেন্যুতে চিনি ও বাদামের ব্যবহার বেশি থাকে। ঈদের বিশেষ খাবার হিসেবে ‘কাহক’ নামের এক ধরনের বিশেষ কুকি বা পিঠা দেশটিতে বেশ জনপ্রিয়।

ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়ায় ঈদুল ফিতরকে বলা হয় ‘লেবারান’। রমজানের শেষদিনে সন্ধ্যা হতে না হতেই ঢোল বাজানো, নাচ, গান, নামাজ আর বয়ানের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ায় ঈদ উৎসব শুরু হয়। এদিনে নারিকেল পাতার ভেতর ভাপে দেওয়া চালের গুঁড়ার পিঠা ‘কেতুপাত’ বানানো হয়- যা দেশজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়। ঈদের দিনে বিগত বছরের কৃতকর্মের জন্য নিকটজন কিংবা বন্ধুর কাছে ক্ষমা চাওয়াটা ইন্দোনেশিয়ার ঈদ উদ্যাপনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। অনেক সময় ঘরে-ঘরে ঘুরে বেড়ানোর পালা (ক্ষমা চাইতে) শেষ হতে কয়েক দিন সময় লেগে যায়।

দক্ষিণ আফ্রিকা: প্রতি বছর শত শত মুসলমান রমজানের শেষ দিন সন্ধ্যায় কেপটাউনের গ্রিন পয়েন্টে চাঁদ দেখার জন্য জড়ো হন। সবাই সমবেত হয়ে একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানেই মাগরিব আদায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে চাঁদ দেখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এখান থেকেই শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ঈদুল ফিতরের আমেজ। সকালে ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়। এখানকার শিশুরা বড়দের কাছ থেকে হরেক রকমের উপহার পেয়ে থাকে।

অস্ট্রেলিয়া: এখানে ঈদুল ফিতরকে ছুটির দিন হিসেবে দেখা হয়। যেসব এলাকায় মসজিদ আছে সেখানে পুলিশ ঈদ উদযাপন করার সময় নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। ঈদের নামাজ খেলার মাঠ কিংবা স্টেডিয়ামেও অনুষ্ঠিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ১৯৮৭ সালে প্রথম ঈদ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে লক্ষাধিক মানুষ সমবেত হয়। তারপর থেকে এটি প্রতি বছরই হচ্ছে, ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য শহরেও।

যুক্তরাষ্ট্র: দেশটিতে ঈদ উৎসব বড় করেই পালন করা হয়। মুসলিমরা ইসলামিক সেন্টার, খোলা মাঠ, কনভেনশন হলে একত্রিত হয়। যেসব এলাকায় মুসলিম কম, তারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় চলে আসেন।

সিঙ্গাপুর: আঞ্চলিক ভাষায় সিঙ্গাপুরে ঈদের দিনটিকে বলা হয় ‘হরি রয়া পসা’। রমজান মাস আসার পর থেকেই মূলত সিঙ্গাপুরের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ঈদের আমেজ বইতে শুরু করে। বাড়িঘর, দোকানপাট, রাস্তাঘাটে আগে থেকেই আলোকসজ্জা করা হয়।