হঠাৎ শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা

প্রবল সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবি রাজাপাকসা শুক্রবার দিনগত মধ্যরাত থেকে সারাদেশে জরুরি অবস্থা জারির নির্দেশ দিয়েছেন।

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার মানুষ অচলাবস্থা নিরসনের দাবিতে পথে নেমেছে

এ নিয়ে চলতি বছর দ্বিতীয়বারের মতো শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হলো। এর আগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে গত ১ এপ্রিল সেদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয। এরপর ৫ এপ্রিল তা প্রত্যাহার করা হয়।

শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক নেতারা জরুরি অবস্থা জারির খবরে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সরকারবিরোধী জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) পার্টির নেতা অনুরা কুমারা বলেছেন, প্রেসিডেন্টের এটা বুঝা উচিত যে নিপীড়নমুলক আইন দিয়ে জনগণের আন্দোলন থামানো যায় না।

জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণার পর বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারগ্যাস ছুঁড়ে ও লাঠিচার্জ করে। কলম্বোর বাত্তারামুল্লা এলাকাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

ভারতের ওয়ায়ন বার্তা সংস্থার শ্রীলঙ্কা প্রতিনিধি দাসুনি আতাহুদা জানান, জরুরি অবস্থা কার্যকরের সময়ে বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। যেসব এলাকায় বিক্ষোভকারীদের অবস্থান লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ছোঁড়া হচ্ছে, সেখানে স্থানীয় অধিবাসীরা ঘুমাতে পারছে না।

এর আগে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য, পরিবহন, বিদ্যুৎ, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এক হাজারের বেশি শ্রমিক ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট গোতাবি রাজাপাকসাসহ সরকারের পদত্যাগ দাবিতে শুক্রবার দিনভর হরতাল পালন করে।

এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট গোতাবি রাজাপাকসা মন্ত্রীসভার কয়েকজন সদস্যের সমর্থন নিয়ে নিজের বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসাকে পদত্যাগের অনুরোধ করেছেন মর্মে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরে আবার মহিন্দা রাজাপাকসার সহকারীর বরাতে সাংবাদিকরা জানান, প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের কোনো অনুরোধ করা হয়নি বলে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন।

নানারকম গুজবের মধ্যেই কলম্বো স্থানীয় সময় রাত ১০টার পর প্রেসিডেন্টের মিডিয়া অফিস থেকে জানানো হয়, রাত ১২টা থেকে সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত একাধিক পশ্চিমা রাষ্ট্রদূত জরুরি অবস্থা ঘোষণার খবরে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।

কানাডার হাইকমিশনার ডেভিড ম্যাককিনন বলেছেন, বিগত সপ্তাহগুলোতে শ্রীলঙ্কাজুড়ে বিক্ষোভে সাধারণ নাগরিকরা যেভাবে স্বতস্ফুর্তভাবে শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশের অধিকার ভোগ করেছেন তা শ্রীলঙ্কার গণতন্ত্রের কৃতিত্ব। এ অবস্থায় জরুরি অবস্থা ঘোষণার কি দরকার ছিল বুঝা দুষ্কর।