ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ প্রশংসনীয়, অথচ ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সন্ত্রাস!

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ৭৫ দিন ধরে চলছে এই যুদ্ধ। এতে সেনাদের পাশাপাশি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ। রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ বিশ্বের মানুষের কাছে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাতে প্রশ্ন উঠছে, দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ কেন নিন্দার চোখে দেখা হয়? মিডলইস্টআই।

শত্রুর প্রতি মোলোটভ ককটেল ছুড়ছে এক ইউক্রেনীয়

আড়াই মাসের এ যুদ্ধে ইউক্রেন বিশ্বের ধনী ও উন্নত দেশগুলোর অকুণ্ঠ সমর্থন পাচ্ছে। ফলে তাদের অস্ত্রভাণ্ডারের বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের গন্তব্যও এখন ইউক্রেন। রুশ বাহিনীকে ঠেকাতে তাই এ পর্যন্ত অস্ত্রের ঘাটতির কথা শোনা যায়নি কিয়েভের পক্ষ থেকে। বরঞ্চ অবস্থাটা এমন যে, ইউক্রেন চাওয়ার আগেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য বিশ্ব নিজেরাই কিয়েভে অস্ত্র পাঠানোর সমস্ত দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে।

যুদ্ধে ইউক্রেনের সেনাদের পাশাপাশি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে সাধারণ ইউক্রেনীয়। নিজেদের বানানো মোলোটভ ককটেল দিয়ে রুশ বাহিনীর ওপর হামলা করতে দেখা যাচ্ছে তাদেরকে। কোথাও কোথাও নারীরা হাতে তুলে নিয়েছেন নানা ধরনের হালকা অথচ বিপজ্জনক অস্ত্র। তাদের সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার কথা শত মুখে তুলে ধরা হচ্ছে বিশ্ব মিডিয়াতে। একই সাথে তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে হামলাকারী রাষ্ট্র রাশিয়ার।

সামান্য গুলতি দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে এক ফিলিস্তিনি

কিন্তু একই চিত্র যখন দেখা যাচ্ছে ফিলিস্তিন ভূমিতে, তখনই পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে। গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম- দখলদার ইসরায়েলের বিপক্ষে বলতে রাজি নয় কেউই। উল্টো পঙ্গু যুবক, হিজাবি নারী বা শিশু- যারা ভিটেমাটি রক্ষার্থে সামান্য পাথর নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, তারা হয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসী!

ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের মোলোটভ ককটেল তৈরি যেভাবে প্রশংসিত হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের একই কার্যক্রম নানা ধরনের বিধি নিষেধের শিকার হয়ে সবার অগোচরেই হারিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কেউ ফিলিস্তিনিদের প্রশংসা করলে অনলাইন-অফলাইনে কটাক্ষের শিকার হতে হচ্ছে। রাশিয়াকে ঠেকাতে নানা দেশ থেকে ইউক্রেনে আসছে ভাড়াটে যোদ্ধা। কিন্তু ফিলিস্তিনের পক্ষে কেউ দাঁড়ালেই সেটা হয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাস!

প্রতিদিন রাশিয়ার হামলার নিন্দা করছেন রাজনীতিবিদ, সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে লাখো মানুষ। ইউক্রেনের জন্য সংহতি, তহবিল সংগ্রহ ও সমর্থন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক দেশ এখন ভীষণ সক্রিয়। কিন্তু দীর্ঘ সাত দশকের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের ওপর নিপীড়নের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা আশ্চর্যজনকভাবে উল্টো।

আগে বিভিন্ন সংঘাতের ক্ষেত্রে যারা বিবৃতি দিয়েছেন, নিরপেক্ষতার ভান করে তারা বলেছেন, উভয়পক্ষকে শান্তির আহ্বান জানাচ্ছি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান সংঘাতে একতরফাভাবে কেবল রাশিয়াকেই সবকিছুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে।

ইউক্রেনীয়রা যখন তাদের মাতৃভূমি রক্ষার্থে অস্ত্র ধরছে, তখন যেভাবে তাদের কাভারেজ দেয়া হচ্ছে, ফিলিস্তিনি, সোমালি, ইয়েমেনি বা আফগানরা যখন একই কাজের জন্য অস্ত্র তুলে নিয়েছিল, তখন তাদের কাভারেজ দেওয়া হয় সম্পূর্ণ ভিন্নরূপে। কোথাও তাদের দুর্দশা উপেক্ষা করা হয়েছে, এমনকি তাদেরকে অপমানও করা হয়েছে।

এ ধরনের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বিচারিতা আগেও ছিল, বলা চলে যুগ যুগ ধরে চলে আসছিল। কিন্তু ইউক্রেনের যুদ্ধে বিষয়টি যতটা নির্লজ্জভাবে সামনে এসেছে, আগে কখনোই তা এভাবে সামনে আসেনি। তাই বলা হচ্ছে, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য ও ইসলামোফোবিয়ার কবল থেকে বিশ্ব এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি।