শ্রীলঙ্কা সংকট ও তিনটি প্রশ্নের উত্তর

শ্রীলঙ্কার অবস্থা বেতাল। দেশের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। দেশ ছেড়েই পালিয়েছে রাজাপাকসে পরিবার। বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত দেশটি। এখন পর্যন্ত মোট ঋণ ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে লঙ্কানরা কেনো রাজপথে, কেনো এই বিক্ষোভ এবং কেনো অর্থনৈতিক সংকট। এই তিন প্রশ্নের জবাব খুঁজেছে বিবিসি।

শ্রীলঙ্কা সংকট ও তিনটি প্রশ্ন

লঙ্কানরা কেনো রাজপথে: সরকারি নাম গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র শ্রীলঙ্কা। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এই প্রথম দ্বীপদেশটি সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। খাদ্য ঘাটতি, জ্বালানি সংকট আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল দেশের সাধারণ মানুষ। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভে উত্তাল দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্র।

সমস্যা সমাধানে ক্ষমতাসীন রাজাপাকসে সরকার জরুরি আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও লঙ্কানরা রাজপথে নেমে এসেছে। জনগণের খাদ্যের দাবি শেষপর্যন্ত পরিণত হয়েছে রাজাপাকসে পরিবার হটাও আন্দোলনে।

কেন এই বিক্ষোভ: রাজধানী কলম্বোতে এপ্রিলের শুরুতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে, তাই মানুষ আজ এত ক্ষুব্ধ। খাবার জোগাড়ে গত এক বছরের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ।

এ কারণে অনেকেই থাকছেন অনাহারে, অর্ধাহারে। ওষুধের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে স্বাস্থ্যব্যবস্থা। জনতার বিক্ষোভে গুলি চালিয়ে একজনকে হত্যাও করেছে প্রশাসন। গণদাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। প্রেসিডেন্টের প্রায় সব মন্ত্রীই পদত্যাগ করেছেন, সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন সরকারদলীয় কয়েকজন এমপিও। তবে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তার পদত্যাগের কোনো ইচ্ছা নেই।

কেনো অর্থনৈতিক সংকট: কার্যত শুকিয়ে ‘শূন্য’ হয়েছে শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। দেশটি আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, কিন্তু প্রধান খাদ্য এবং জ্বালানির জন্য আর কোনো অর্থ তাদের হাতে নেই। কোভিড মহামারি এড়াতে দেশটির অন্যতম বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের মাধ্যম পর্যটন বাণিজ্য বন্ধ থাকায় তাদের এই দূরাবস্থা।

সরকারের দাবি অনুযায়ী, তিন বছর আগে গির্জাগুলোতে সিরিজ বোমা হামলার দরুনও পর্যটকের সংখ্যা কমতে শুরু করেছিল।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এ সংকটের জন্য দায়ী অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা। রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

সমালোচকরা বলছেন, অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়নে চীনের কাছ থেকে বিশাল অংকের ঋণ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের বড় আকারের কর কমানোর প্রস্তাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে।

প্রেসিডেন্ট এবং তার অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি এখন স্বীকার করছেন কর কমানো মারাত্মক ভুল ছিল। ২০২১ সালের প্রথম থেকে ভোগানো মুদ্রা-ঘাটতিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সে সময় সরকার রাসায়নিক সারের আমদানি নিষিদ্ধ করে কৃষকদের জৈব সার ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়। এর ফলে মুখ থুবড়ে পড়ে দেশটির কৃষি ব্যবস্থা। ব্যাপকভাবে দেখা দেয় খাদ্যসংকট।