রাশিয়ার গ্যাস সঞ্চালন বন্ধ করে দিলো ইউক্রেন, ইউরোপে মূল্যবৃদ্ধি

ইউক্রেন সরকার তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সমিশন পয়েন্ট থেকে রাশিয়ার গ্যাস সঞ্চালন বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে জার্মানিসহ কয়েকটি দেশে আজ নিয়মিত পরিমাণের চেয়ে এক-চতুর্থাংশ কম গ্যাস পৌঁছেছে। সরবরাহ কমতে থাকায় দিনের শুরুতেই ইউরোপের বাজারে গ্যাসের দাম প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে।

ইউক্রেন সরকার রাশিয়ার গ্যাস সঞ্চালন বন্ধ করায় ইউরোপের কয়েকটি দেশে সরবরাহ কমেছে

পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্কের সোখ্রানিভকা গ্যাস মিটারিং স্টেশন (জিএমএস) থেকে রাশিয়ার গ্যাস সঞ্চালন বন্ধ করেছে ইউক্রেন। একইসঙ্গে নিকটবর্তী নভোপসকভ কম্প্রেসার স্টেশনের (সিএস) মাধ্যমে রাশিয়ার গ্যাস পরিবহন ব্লক করেছে ইউক্রেন। ইউরোপ অভিমুখে রাশিয়ার সরবরাহকৃত গ্যাসের ৩০ শতাংশ (দৈনিক ৩ কোটি ২৬ লাখ ঘনমিটার) যায় এই কম্প্রেসার স্টেশনের মাধ্যমে।

ইউক্রেন বলেছে, লুহানস্ক নিয়ন্ত্রণে না থাকায় অনিবার্যবশতঃ সেখান থেকে সঞ্চালন কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সোখ্রানিভকা জিএমএস ও নভোপসকভ সিএস দুটোই অবস্থিত লুহানস্কে, যে জায়গাটি বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। গ্যাস ট্রানজিট ব্যাহত হবার জন্য ‘দখলদার বাহিনীর কর্মকাণ্ড’ দায়ী বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইউক্রেনের রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা গ্যাস ট্রান্সমিশন সিস্টেম অব ইউক্রেন (জিটিএসওইউ)।

জিটিএসওইউ বলেছে, ‘ইউক্রেনের উপর রুশ ফেডারেশনের আগ্রাসনের পরিণামে কয়েকটি জিটিএস স্থাপনা রুশ সেনাবাহিনী ও দখলদার প্রশাসনের সাময়িক নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় পড়েছে। বর্তমানে জিটিএসওইউ ওই এলাকায় অবস্থিত নভোপসকভ সিএস ও অন্যান্য গ্যাস সঞ্চালন স্থাপনায় কারিগরি ও পরিচালনগত নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কারিগরি বিষয়াদিতে দখলদার বাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং ট্রানজিট প্রবাহ থেকে অননুমোদিত গ্যাস উত্তোলনসহ নানা কারণে ইউক্রেনের পুরো গ্যাস পরিবহন ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে। এ অবস্থায় অনিবার্য কারণবশতঃ সোখ্রানিভকা জিএমএস ও নভোপসকভ সিএস দিয়ে গ্যাস সঞ্চালন বন্ধ করতে হচ্ছে।

জিটিএসওইউ তাদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে রুশ গ্যাস রপ্তানিকারক গ্যাজপ্রমকে অবহিত করে বলেছে, নভোপসকভ সিএসের পরিবর্তে ইউক্রেন-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অবস্থিত সুদঝা ইন্টারকানেকশন পয়েন্টে গ্যাস রি-রুট করলে তারা ট্রানজিট-সংক্রান্ত চুক্তির শর্ত পূরণ করতে পারবে।

এ বিষয়ে গ্যাজপ্রমের মুখপাত্র সের্গেই কুপ্রিয়ানভ বলেছেন, এতদিন যেভাবে চলেছে সেভাবে গ্যাস সঞ্চালনে কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছে না। ট্রানজিট সার্ভিসের জন্য ইউক্রেনকে প্রদেয় ফি আগেই পরিশোধ করা হয়েছে। গ্যাজপ্রম ইউরোপীয় ভোক্তাদের প্রতি প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে এবং চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করছে।

সুদঝা ইন্টারকানেকশন পয়েন্টে গ্যাস রি-রুটের যে প্রস্তাব ইউক্রেন দিয়েছে সেটা বিদ্যমান গ্যাস প্রবাহে ‘কারিগরিভাবে অসম্ভব’ বলে গ্যাজপ্রম জানিয়েছে।

এদিকে জার্মান ফেডারেল নেটওয়ার্ক এজেন্সি জানিয়েছে, জিটিএসওইউ বুধবার সকালে একটি পয়েন্টে সঞ্চালন বন্ধ করায় রাশিয়া থেকে ইউক্রেন হয়ে জার্মানির পাইপলাইনে প্রবেশ হওয়া গ্যাসের পরিমাণ মঙ্গলবারের তুলনায় একদিনে ২৫ শতাংশ কমে গেছে। গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

সিএনবিসি জানিয়েছে, ইউক্রেনের রাষ্ট্রায়ত্ব গ্রিড অপারেটর একটি গুরুত্বপূর্ণ এন্ট্রি পয়েন্টে রাশিয়ার গ্যাস প্রবাহ বন্ধ করার পর ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দামে ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়েছে। রিফাইনিটিভের তথ্যে দেখা যায়, লন্ডন স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় টিটিএফ ইউরোপিয়ান প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য আগের দিনের তুলনায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে গেছে।