পোল্যান্ডের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পোল্যান্ডের জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশে পোল্যান্ডের নাগরিকদের প্রবেশ এবং সামরিক-বেসামরিক পদে চাকরির বিশেষ সুবিধা দিয়ে আইন প্রণয়নের ঘোষণা দেওয়ার পর এ আশঙ্কা জোরালো হয়েছে।

ইউক্রেনের পার্লামেন্টে বক্তৃতার আগে ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আলিঙ্গন করেন আন্দ্রেজ দুদা

ইউক্রেনের পার্লামেন্ট সদস্য ওলগা সভগিরিয়া বলেছেন, পোল্যান্ডের নাগরিকদের ইউক্রেনে বিশেষ আইনি মর্যাদা দিতে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভারকোভনা রাদায় (পার্লামেন্টে) একটি বিল উপস্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার রাতে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদার উপস্থিতিতে পার্লামেন্টে বক্তৃতাকালে তিনি এ ঘোষণা দেন।

ওলগা সভগিরিয়া ইউক্রেনের সাংবিধানিক আদালতে ভারকোভনা রাদার প্রতিনিধিত্ব করছেন। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি পোল্যান্ডের নাগরিকদের জন্য বিশেষ আইন প্রণয়নের কথা জানিয়েছেন।

পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা রোববার রাতে ইউক্রেনের পার্লামেন্টে বেশ আবেগঘন ভাষণ দেন। পোলিশ ও ইউক্রেনীয় দুই ভাষায় দেওয়া ভাষণে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। পোলিশ প্রেসিডেন্টের আগমন উপলক্ষে ইউক্রেনের পার্লামেন্ট পোল্যান্ডের পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। সফররত অতিথির বক্তৃতার আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বক্তব্য রাখেন।

জানা গেছে, রোববার রাতে ইউক্রেনের পার্লামেন্টে আন্দ্রেজ দুদা ও ভলোদিমির জেলেনস্কি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। জেলেনস্কি ইউক্রেনের ভূখণ্ডে পোল্যান্ডের নাগরিকদের বিশেষ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে ইউক্রেনের সামরিক-বেসামরিক কর্মক্ষেত্রে পোল্যান্ডের নাগরিকদের চাকরির বিধানও থাকছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

জেলেনস্কি তার বক্তৃতায় ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের মধ্যে সীমান্ত পারাপার সহজীকরণের প্রয়োজনের কথা বলেছেন। জবাবে আন্দ্রেজ দুদা তার বক্তৃতায় বলেছেন, পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের মধ্যে সীমান্ত পারাপার বাধাহীন হলে যে কোনো হুমকি মোকাবেলা করা সহজ হবে। পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের মধ্যে কোনো সীমান্ত থাকবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পোলিশ প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি যে আমাদের একটি নতুন প্রতিবেশী চুক্তি করার সময় এসেছে। যে চুক্তিতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমাদের সম্পর্কের প্রতিফলন থাকবে। দেখা যাচ্ছে পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের মধ্যে সড়ক, রেল ও অন্যান্য যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ঠিকভাবে কাজ করছে না। পরস্পরকে বিচ্ছিন্ন করতে নয়, পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তকে কাজ করতে হবে পরস্পরকে ঐক্যবদ্ধ করতে।

ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট দুদা। ইউক্রেনের এমপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ইউক্রেন ইইউর পুর্ণাঙ্গ সদস্য না হওয়া পর্যন্ত আমি হাল ছাড়ব না। কারণ ইউক্রেন হচ্ছে ইউরোপের মুখচ্ছবি, বৃহৎ ইউরোপীয় পরিবারের রক্ষক।

তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের জনগণ আপনাদের পরিবারের যেসব সদস্য পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে, তারা সেখানে শরণার্থী নন, আমাদের অতিথি হিসেবে থাকছেন।

পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট দুদা শনিবার ইউক্রেন পৌঁছেন। পার্লামেন্টে বক্তৃতার আগে তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই প্রেসিডেন্ট একসঙ্গে কিয়েভের রাস্তায় কিছুক্ষণ হাঁটেন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর কিয়েভের অন্যতম জোরালো সমর্থক হিসেবে ভূমিকা রাখছে পোল্যান্ড। বিশেষত রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছে পোল্যান্ড।