রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যস্থতায় সব ধরনের অবদান রাখতে প্রস্তুত কাতার

ইউক্রেনের সংঘাত অবিলম্বে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য প্রতিটি আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে প্রস্তুত রয়েছে কাতার। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে ভাষণ দিতে গিয়ে কাতারের আমির গতকাল সোমবার এ কথা বলেন। এ সময় তিনি ফিলিস্তিনের ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখী আচরণেরও নিন্দা করেন। খবর আরব নিউজ।

দাভোস সম্মেলনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি

ইউক্রেনের সঙ্কটে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছেন দাবি করে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি আরো বলেন, আমাদের কখনোই দলগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বিশ্বাস করব, আমাদের প্রচেষ্টা একটি জীবন বাঁচাতে পারে, আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।

তিনি জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে সংঘাতের কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া লাখ লাখ মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আমরা প্রতিটি ইউরোপীয় জীবনের মূল্যকে আমাদের অঞ্চলের কারো জীবনের মতোই মূল্যবান বলে মনে করি।

ইউক্রেন-কাতার দ্বন্দ্ব অবসানে অবদান রাখতে চান কাতার আমির

কাতারের আমির বলেন, আমরা এই ইউরোপীয় যুদ্ধের শিকার লক্ষ লক্ষ নিরীহ উদ্বাস্তুদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি, এবং এই মুহূর্তে সংঘটিত অন্য সব যুদ্ধের শিকার- প্রতিটি জাতি, জাতীয়তা এবং ধর্মের শিকার সবার প্রতি আমরা একাত্মতা পোষণ করি। আমরা তাদের সবাইকে সাহায্য করতে চাই।

এ সময় শেখ তামিম ফিলিস্তিনি জনগণের দুঃখ-কষ্টের কথা তুলে ধরে বলেন, তারা কয়েক দশক ধরে অন্যের দখলদারিত্বের শিকার হয়ে আছে। যেহেতু আমরা ইউক্রেনীয় সংকটের একটি কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার জন্য চেষ্টা করছি, আশা করি আমরা সেই সমস্ত ভুলে যাওয়া বা উপেক্ষা করা বিষয়গুলো সমাধানের জন্যও সমানভাবে মনোযোগ দিতে পারব। এর সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ হল ফিলিস্তিন, যা জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি খোলা ক্ষতস্থানের মতো হয়ে আছে। সেখানে ক্রমশই বেআইনি বসতি স্থাপনের আগ্রাসন বেড়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ক্রমাগত আক্রমণের ক্ষেত্রেও ইউক্রেনের মতো একই কথা প্রযোজ্য।

এ সময় তিনি গত ১১ মে পশ্চিম তীরে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় নিহত ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, শিরিন কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনি জনগণের দুঃখ-কষ্টের কথা প্রচার করে আসছিলেন। তার মৃত্যুতে আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। এই বছরের মার্চ থেকে ইউক্রেনে নিহত সাত সাংবাদিক, ২০০০ সাল থেকে ফিলিস্তিনে অন্যান্য ১৮ জন সাংবাদিক এবং ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে দায়িত্ব পালনের সময় আরো অনেক সাংবাদিক নিহত হওয়ার মতোই তার মৃত্যু ছিল ভয়ংকর।

দাভোসে রাখা বক্তব্যে কাতার আমির ধর্ম, অঞ্চল বা বর্ণের ভিত্তিতে মানুষের ভিন্ন রকম মূল্যায়নে পশ্চিমা সরকারগুলোর সমালোচনা করে বলেন, আমাদের এমন একটি বিশ্বকে মেনে নেওয়া উচিত নয় যেখানে ধর্ম, অঞ্চল বা বর্ণের ভিত্তিতে মানুষের ভিন্ন রকম মূল্যায়ন করা হয়।

প্রথম আরব দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজক হতে যওয়া কাতারের উপর নজিরবিহীন হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো এমন কিছু মানুষ আছে যারা এটি মেনে নিতে পারে না যে, একটি আরব-মুসলিম দেশ বিশ্বকাপের মতো একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে। প্রভাবশালী এসব ব্যক্তি এমন গতিতে আক্রমণ শুরু করেছে, যা আগে কখনোই দেখা যায়নি।