ঘটনার শুরু ২০১০ সালের ৩১ আগষ্ট। সময় সকাল ৮টা। মিরপুর পল্লবী এলাকার বাসিন্দা মো. মোজাফফরের ১৭ বছর বয়সী ছেলে সুমন বাসা থেকে তার কর্মস্থল ডায়মন্ড প্যাকেজিং গার্মেন্টসের উদ্দেশ্যে বের হয়। এরপর আর বাসায় ফিরে আসেনি। সেই সুমনকে দীর্ঘ ১২ বছর পর খুঁজে বের করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, পিবিআই।

the story of sumons disappearance for 12 yearsসুমনের ১২ বছর নিখোঁজ থাকার গল্প

সুমন নিখোঁজের পর যা যা ঘটেছে: পিবিআই তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, ঘটনার দিন মোজাফফর সাহেবের বড় ছেলে সুজনের মোবাইল থেকে সুমনের নম্বরে কল দিলে অপরিচিত একজন লোক কল রিসিভ করে। এ ঘটনার প্রায় দুইমাস পর ছেলের নিখোঁজ রয়েছে এই মর্মে পল্লবী থানায় একটি জিডি করেন সুমনের বাবা। জিডি নম্বর ৩৬২।

পরবর্তীতে সুমনের বাবা ৫ জনকে আসামি করে (সন্দেহবশত) একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। তারা হলেন মো. সুলায়মান হোসেন (২৮), মো. শাওন পারভেজ (১৮), মো. রুবেল (২০),  সোহাগ (২০) ও  মানিক (২৫)।

পল্লবী থানার এস.আই মো. হাবিবুর রহমান তদন্তভার গ্রহণ করেন এবং সুমনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। পরবর্তীতে মহানগর ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। তদন্তকালে সুমনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে ডিবি। আসামি সুলাইমান, পারভেজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে  আদালতে সোপর্দ করে। কিন্তু সুমনকে তখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের আদেশে মামলাটির তদন্তভার সিআইডিকে অর্পণ করা হয়। সিআইডি ২০১২ সালের ২৫ এপ্রিল তদন্তভার গ্রহণ করে সুমনকে উদ্ধারের চেষ্টা করে এবং এজহারনামীয় আসামিদের বিরুদ্ধে অপহণের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পল্লবী থানার চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। সিআইডি চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করলে বাদীর নারাজির আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত পুনরায় মামলাটির তদন্তভার ডিবির ওপর ন্যাস্ত করেন।

সুমনকে উদ্ধারে ডিবি আবারও চেষ্টা চালায়। ডিবি তদন্তকালে জানতে পারে, সুমনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি আসামি মো. সুলায়মান এডিসি ক্যাম্পের কাঁচা বাজারের জুয়ার বোর্ড থেকে ক্রয় করেছেন। তদন্ত শেষে সুমনকে উদ্ধারসহ জড়িত আসামি শনাক্ত না হওয়ায় পল্লবী থানায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়।

এবারও বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পিবিআইয়ের ওপর ন্যস্ত হয়। পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম গত ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর  মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন এবং সুমনকে উদ্ধারে তৎপরতা অব্যাহত রাখেন।

যেভাবে উদ্ধার হয় সুমন

পিবিআই তদন্তের একপর্যায়ে জানতে পারে, নিখোঁজের ১১ দিন পর একটি মোবাইল নম্বর থেকে সুমনের বাবার নম্বরে সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টা ৩০ মিনিটে সুমন ফোন করেছিল। তখন তার অবস্থান সর্ম্পকে জানতে চাইলে কোনো উত্তর না দিয়েই ফোনটি রেখে দেয় সুমন। এরপর থেকে সেই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ ছিল।

পিবিআইও প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণের অভাবে সুমনকে উদ্ধার করতে পারেনি। তবে ভবিষ্যতে কোন তথ্য পাওয়া গেলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হবে উল্লেখ করে পল্লবী থানায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে।

হঠাৎ করে কিছু তথ্য পাওয়ায় গত ২৩ মে সুমনকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম আদালতে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করেন।

আদালতের নির্দেশে পুনরায় মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্তকারী অফিসারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সুমনকে শনাক্ত করে ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকার কদমতলী থানার মদিনাবাগ এলাকায় অভিযান চালায় এবং সুমনকে উদ্ধার করে।

যে কারণে ১২ বছর পরিবারে ফেরেনি সুমন

উদ্ধারের পর সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পিবিআই জানায়, সুমন শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। এরপর ডায়মন্ড প্যাকেজিংয়ে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে। ঘটনার দিন মিরপুর ১১ নম্বর বাজার এলাকার চার রাস্তার মোড়ে ৩ তাসের জুয়া খেলায় ১০০ টাকা ধরে হেরে যায়। তার কাছে টাকা না থাকায় তার নিকট থেকে জোরপূর্বক তার মোবাইল ফোন জুয়ারিরা রেখে দেয়।

মোবাইলের বিষয়ে বাবাকে কি সদুত্তর দেবে এই ভয়ে সুমন মিরপুর থেকে গুলিস্থানে চলে যায়। সারাদিন গুলিস্থানে ঘোরাফেরা করে। রাতেও বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করে। পরদিন সকালে বায়তুল মোকাররম মসজিদে শুয়ে থাকে। সেখান থেকে একলোক তাকে শাহবাগ ফুল মার্কেটে নিয়ে নাস্তা খাওয়ায়।

পরবর্তীতে টিপু নামে একলোক তাকে শাহবাগ এলাকার একটি হোটেলে শুধু থাকা ও খাওয়ার শর্তে কাজ দেয়। ঐ হোটেলের বাবুর্চি হারুনের সাথে তার বন্ধুত্ব হয় এবং তার সাথে সুমন ভোলার লালমোহন থানাধীন মঙ্গল শিকদার এলাকায় একাধিকবার যায়। এরপর শাহবাগ এলাকায় বিভিন্ন চটপটির দোকানে কাজ, পপকর্ণ বিক্রি, বাসের হেলপার, রুমা এ্যকুরিয়াম সেন্টার, পপুলার এ্যকুরিয়াম সেন্টারসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে। এরইমধ্যে নান্নু ওস্তাদ নামে এক ড্রাইভারের সাথে তার পরিচয় হয়। তার সাথে সে হেলপারি করে। ইউসুফ টেকনিক্যাল স্কুল ও বারডেম হাসপাতালের যাত্রী আনা নেওয়া করত। 

ইউসুফ স্কুলের জোনাকি নামের একটি মেয়ের সাথে তার ভাল সম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে তাদের বাসায় যেত। একপর্যায়ে জোনাকির মা জোসনার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। জোসনার স্বামী বকুল মোল্লা তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিলে ভিকটিম সুমন প্রায় ৩ বছর পূর্বে লালবাগ কাজী অফিসে জোসনাকে বিয়ে করে। তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তানও আছে, নাম হাবিবুল্লাহ, বয়স তিনমাস। 

পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সুমন তার স্ত্রী জোসনার সাথে রায়েরবাগ এলাকার বিভিন্ন স্থানে বসবাস করে আসছিল। সেখানে থেকেই তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.