১৭ দিনে ১৬ দেশে মাঙ্কিপক্স

মাঙ্কিপক্স দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। সর্বশেষ ডেনমার্কে রোগটি শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে ১৭ দিনে পৃথিবীর ১৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মাঙ্কিপক্স। শনাক্ত হয়েছে অন্তত ১৬১ জন রোগী। সংক্রামক রোগের তথ্য সংগ্রহকারী গোষ্ঠী গ্লোবাল ডট হেলথের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে এনবিসি নিউজ। নাম শুনে বানরের কথা মনে হলেও আসছে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটির সঙ্গে সম্পর্ক মূলত ইঁদুরের।

মাঙ্কিপক্স

ভাইরাসটির প্রাকৃতিক আবাসভূমি পশ্চিম আফ্রিকা এবং রেইনফরেস্টে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দুর্গম অঞ্চলে হাজারো মানুষকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। ৭ মে আফ্রিকার বাইরে প্রথম মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় যুক্তরাজ্যে।

দেশটিতে এ পর্যন্ত ৫৬ জনের এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তালিকায় আছে যুক্তরাজ্য (৫৬), স্পেন (৪১), পর্তুগাল (৩৭), কানাডা (৫), ইতালি (৪), বেলজিয়াম (৩), জার্মানি (৩), অস্ট্রেলিয়া (২), নেদারল্যান্ডস (২), যুক্তরাষ্ট্র (২), অস্ট্রিয়া (১), ফ্রান্স (১), ইসরায়েল (১), সুইডেন (১), সুইজারল্যান্ড (১), ডেনমাক (১)।

মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের ধরন বদলের কোনো প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সোমবার জাতিসংঘে সংস্থাটির একজন সিনিয়র নির্বাহী এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকায় ভাইরাসটির ধরন পরিবর্তনের কোনো প্রবণতা দেখা যায়নি।

ডব্লিউএইচও-এর জরুরি কর্মসূচির আওতাভুক্ত গুটিবসন্তবিষয়ক দপ্তরের প্রধান রোসামুন্ড লুইস এক ব্রিফিংয়ে বলেন, এই ভাইরাসের মিউটেশন সাধারণত কম হয়। তবে কেসের জিনোম সিকোয়েন্সিং বর্তমান প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করবে।

যা জানা যাচ্ছে

গুটিবসন্ত নির্মূল কর্মসূচির সময় ব্যবহৃত ভ্যাকসিনগুলো মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে। নতুন টিকা তৈরি করা হয়েছে যার মধ্যে একটি মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধের জন্য অনুমোদিত হয়েছে। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। মূলত পক্সভিরিডে পরিবারের অর্থোপক্সভাইরাসের সদস্য।

মাঙ্কিপক্স সাধারণত আত্মনিয়ন্ত্রিত রোগ, যার লক্ষণ ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে রোগীর মৃত্যুর অনুপাত প্রায় ৩-৬ শতাংশ।

সংক্রামিত ব্যক্তি বা প্রাণীর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত হয়। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস ক্ষত, শরীরের তরল, কফ এবং সঙ্গমের মাধ্যমে একজন থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে থাকে। এটি একটি ভাইরাল জুনোটিক রোগ, যা প্রাথমিকভাবে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট এলাকায় দেখা যায়।

গুটিবসন্তের চিকিৎসার জন্য উদ্ভাবিত একটি অ্যান্টিভাইরাল এজেন্টকেও মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসার জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।

মাঙ্কিপক্সের ক্লিনিকাল উপস্থাপনা গুটিবসন্তের মতো। ১৯৮০ সালে বিশ্বব্যাপী গুটি বসন্তকে নির্মূল ঘোষণা করা হয়েছিল। মাঙ্কিপক্স গুটিবসন্তের তুলনায় কম সংক্রামক এবং কম গুরুতর।