পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবারও ইসরায়েল বিতর্ক

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগের সঙ্গে পাকিস্তানি একটি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতকে কেন্দ্র করে দেশটির রাজনীতিতে আবারও বিতর্ক শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ও পিটিআই নেত্রী শিরিন মাজারি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে আমদানিকৃত সরকার তাদের অভিভাবকের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে লজ্জাজনক আনুগত্য প্রদর্শন করছে।

চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পাকিস্তানি একটি প্রতিনিধি দল

সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ তার সঙ্গে সম্প্রতি পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাত ও বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত ১১ মে পাকিস্তানি দলটি ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।

হারজগ বলেছেন, কয়েক সপ্তাহ আগে পাকিস্তানিদের একটি প্রতিনিধি দলকে আমি স্বাগত জানিয়েছি। আমাকে অবশ্যই বলতে হবে যে এটা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। কারণ আমরা আগে কখনো পাকিস্তানি নেতাদের এত বড় দলকে ইসরায়েলে পাইনি।

জানা গেছে, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইসরায়েল সফরে যায় পাকিস্তানের ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি-আমেরিকান ও ব্রিটিশ-আমেরিকান নাগরিক ছাড়াও ছিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিভিশন পিটিভির প্রভাবশালী উপস্থাপক আহমেদ কোরেশী। তারা ইসরায়েলি রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন ইহুদী ধর্মীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম অ্যাকর্ডের ধারায় এ সফর বলে জানিয়েছেন সফরকারী দলের সদস্যরা। আব্রাহাম অ্যাকর্ডের ভিত্তিতে গঠিত শারাকা নামের একটি এনজিও এবং আমেরিকান মুসলিম অ্যান্ড মাল্টিফেইথ উইমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট কাউন্সিল (এএমএমডব্লিউইসি) নামের সংগঠন এ সফরে সম্পৃক্ত ছিল বলে জানা গেছে।

পাকিস্তানি দলটির সফরের কথা জানায় প্রথম জানায় এএমএমডব্লিউইসি। টুইটারে এক পোস্টে এএমএমডব্লিউইসি পাকিস্তানি দলটির ছবি পোস্ট করে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইজরায়েলপন্থী বেশ কয়েকটি সংগঠনকে ওই পোস্টে ট্যাগ করা হয়। এএমএমডব্লিউইসি ও শারাকার পোস্টে ইসরায়েল সফরের কথা প্রকাশের পরপর পাকিস্তানের সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মী, বিশেষত পিটিআই নেতারা বিষয়টির কঠোর সমালোচনা করেন।

পিটিভি উপস্থাপকের ওই সফরের যাওয়ার সমালোচনা করে পিটিআই নেত্রী শিরিন মাজারি বলেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সবুজ সংকেত না থাকলে এটা সম্ভব হতো না। পাকিস্তানে সম্প্রতি বিদেশি শক্তিগুলোর বসিয়ে দেওয়া সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

আহমেদ কোরেশীসহ সফর সংশ্লিষ্টরা শিরিন মাজারির পাল্টা সমালোচনা করে বলেন, পিটিআই নেত্রী অহেতুক কয়েকজন মানুষের ব্যক্তিগত সফরকে বিতর্কিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন। সফরকালে ইসরায়েলের কোনো সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি বলেও তারা দাবি করেন।

পাকিস্তানি দলটির সফর ও সাক্ষাতের কথা নিশ্চিত করে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগের দাভোসে দেওয়া বক্তব্যের পর পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবারও ইসরায়েল নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর আগে পাকিস্তানিদের ইসরায়েল সফরের কথা উঠলেও সে দেশের সরকার পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে কেউ ইসরায়েলে যায়নি বলে দাবি করেছে। ইসরায়েলি দৈনিক হারিৎযের এক প্রতিবেদন ভিন্ন কথা বলছে।

হারিৎয জানিয়েছে, পাকিস্তানের পাসপোর্টে স্পষ্টভাবে ‘ইসরায়েল ছাড়া সব দেশে ভ্রমণের জন্য প্রযোজ্য’ কথাটি লেখা থাকলেও পিটিভির সাংবাদিক আহমেদ কোরেশি ও ইহুদী ধর্মাবলম্বী পাকিস্তানি নাগরিক ফিসকেল বেনখালদ পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছেন। সফর শেষে তারা নির্বিঘ্নে ওই পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে ফিরেছেন। এতে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে ইসরায়েল সম্পর্কে পাকিস্তান রাষ্ট্রের মনোভাব পাল্টাচ্ছে।

এর আগে গতবছর পাকিস্তানের কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইমরান খান সরকারের আমলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মঈদ ইউসুফ ও ইমরান খানের সহকারী জুলফি বুখারির বিরুদ্ধে ইসরায়েলে সফরের অভিযোগ করেন। দুজনই এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।